ঢাকা-৫ আসন
ট্রাক-ঈগলে কোণঠাসা নৌকা!
প্রকাশ | ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনের ভোটার ও বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকদের মতে, এবার ভোটে নৌকাকে কঠিন চ্যালেঞ্জ জানাবে আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। মূলত বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী না থাকায় নৌকার লড়াই হবে ক্ষমতাসীন দলের শক্তিশালী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে।
এই আসনটি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও মাতুয়াইল নিয়ে গঠিত। এবার নির্বাচনে ১০টি রাজনৈতিক দলের ১০ জন প্রার্থী ও ক্ষমতাসীন দলের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি দলের বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু। তার বদলে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ (মুন্না)।
তবে তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান মোলস্না। তার বাবা হাবিবুর রহমান মোলস্না এই আসনের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান রিপন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, এবার এই আসনে ভোট হবে প্রার্থী দেখে, প্রতীক দেখে নয়। তাই কে জিতবে তা বলা কঠিন।
যাত্রাবাড়ী খালেকুজ্জামান রোডের ভোটার মোহাম্মাদ অলি বলেন, এবার নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে তিনজন প্রার্থীর। একজন নৌকা ও বাকি দুজন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। যেহেতু স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী স্থানীয়ভাবে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন তাই তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তাদের প্রভাব বেশি।
যাত্রাবাড়ী ধলপুর এলাকার বাসিন্দা ইয়ামিন মজুমদার বলেন, যাত্রাবড়ীতে নৌকা প্রতীকের প্রাধান্য থাকলেও ডেমরা এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমানের আধিপত্য। এর বাইরে আরেক
\হস্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান রিপন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। ফলে নৌকার ভোটারদের বড় একটি অংশ রয়েছে তার পক্ষে। তাই এই নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা বলা কঠিন।
এদিকে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, তাদের এলাকায় অনেক সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে গ্যাস ও পানিসহ যানজটের সমস্যা প্রকট। তাই যে তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেবেন তাকেই জনগণ বেছে নেবে। ফলে এই আসনে জনসংযোগসহ ভোটারদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন সব প্রার্থীরা।
নৌকার প্রার্থী হারুনর রশিদ (মুন্না) বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছেন। তাই আমার বিশ্বাস এই এলাকার ভোটাররা উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন এবং আমাকে তাদের সেবা করা সুযোগ দেবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নৌকার প্রার্থী তাই তাদের নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই, অভিযোগ নেই। তারা তাদের মত করে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন করবে। এছাড়াও আমি আমার নেতা কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে যেন তারা কোনোভাবেই নির্বাচনী বিধিমালা ভঙ্গ না করে।'
\হনৌকার এই প্রার্থী ভোটারদের উদ্দেশ্য বলেন, 'আমি নির্বাচিত হলে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার কেন্দ্রিক যানজট নিরসনে উদ্যোগ নেব। এছাড়া এই এলাকার গ্যাস ও পানির যে সংকট রয়েছে তা সমাধান করব।'
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে এই তিন প্রার্থী একে অন্যর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগ করছেন। বিশেষ করে ফুটপাত দখল করে নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরির অভিযোগ রয়েছে এই তিনজনের বিরুদ্ধে। সরেজমিন দেখা গেছে, ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার ও গোলাপবাগ মাঠের পাশের ফুটপাতে ও রাস্তায় ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী মশিউর রহমানের পক্ষে ২টি ক্যাম্প রয়েছে। ঠিক এর ২০০ মিটার দূরে ট্রাকের পক্ষে আরেকটি ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। যদিও ৩০০ মিটারের মধ্যেই তার নির্বাচনী ক্যাম্প রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, এই এলাকায় ক্যাম্প থাকার কথা একটি।
একইভাবে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসানের পক্ষে পূর্ব গোলাপবাগে সড়কের ওপর একটি নির্বাচনী ক্যাম্প এবং গোলাপবাগ খেলার মাঠে মানুষের হাঁটাচলার জায়গায় আরেকটি ক্যাম্প করা হয়েছে। ক্যাম্প রয়েছে মাদ্রাসা গলিতেও। অর্থাৎ একটি সড়কেই তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্প। অন্যদিকে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ৬টি নির্বাচনী ক্যাম্প করেছেন নৌকার প্রার্থী হারুনর রশীদের সমর্থকরা যা নির্বাচন আচারণবিধি বিরোধী।
এদিকে এই নির্বাচনী আসনে এই তিন প্রার্থীর বাইরে অন্যান্য প্রার্থীদের তেমন প্রচারণা দেখা যায়নি। এই আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন- ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আবু জাফর মো. হাবিব উলস্নাহ (চেয়ার), বিএনএফের এস এম লিটন (টেলিভিশন), তৃণমূল বিএনপির আবু হানিফ (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের আব্দুল কাইয়ূম (মিনার), এনপিপির আরিফুর রহমান (আম), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের নূরুল আমিন (ছড়ি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মোশারফ হোসেন মিয়া (একতারা), বাংলাদেশ কংগ্রেসের সাইফুল আলম (ডাব), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সারোয়ার খান (কাঁঠাল)।