শনি-রোববার বিএনপির ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক

প্রকাশ | ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি ভোট ঘিরে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে। দলটির নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামীকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে ৮ জানুয়ারি সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করবে তারা। এর মধ্যে রোববার জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। এ ছাড়া হরতালের আগে আজ শুক্রবার মিছিল ও গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা পালন করেব। বৃহস্পতিবার দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে 'একতরফা' নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এই হরতাল কর্মসূচি পালন করবে। অসহযোগের ডাক দিয়ে ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জনের আহ্বানে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে তিন দফায় টানা ৮ দিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির পর বিএনপির ৪৮ ঘণ্টা হরতালের এই কর্মসূচি এলো। গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পন্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে চার দফায় ৫ দিন হরতাল করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এছাড়া ১২ দফায় ২৩ দিন সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে তারা। এরপর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ৮ দিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে আন্দোলনরত বিএনপি, যা বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। সারাদেশে লিফলেট বিতরণ, হামলা, আহত ৭ \হভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে টানা ১০ দিন ধরে গণসংযোগ-লিফলেট বিতরণ করেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। একই দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। চতুর্থ দফায় গণসংযোগের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার সারাদেশে ভোট বর্জনে জনমত গঠনে লিফলেট বিতরণ করেন দলগুলোর নেতাকর্মীরা। এদিন সকালে সেগুনবাগিচা এলাকায় বিপস্নবী ওয়াকার্স পার্টির নেতাদের ওপর আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কয়েকজন আহতের খবর পাওয়া গেছে। গণসংযোগকালে বিএনপি নেতারা বলেন, সরকার যত কলাকৌশল করুক না কেন ৭ জানুয়ারি ভোট কেন্দ্রে সাধারণ ভোটার আসবে না। নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও অনেকে থাকবে না। দলটির নেতারা আরও বলেন, ডামি প্রার্থী দেখিয়ে সরকার মনে করেছিল- গণতান্ত্রিক বিশ্বকে দেখাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশে কোনো ভোট হচ্ছে না, পাতানো নির্বাচন হচ্ছে। জোর করে জবরদস্তি করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে ডামি নির্বাচন করে সরকার পার পাবে না, দেশকে বিপদের দিকে ঠেলে দিলে এর পরিণতি হবে ভালো হবে না। দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় লিফলেট বিতরণকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আবদুল মঈন খান বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। দেশের জনগণ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে কোনো আস্থা পায় না। গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই নির্বাচনকে সমর্থন করছে না। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে কিছুদিন হয়তো ক্ষমতায় থাকা যাবে। তবে আজ হোক কাল হোক আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। 'প্রহসনের নির্বাচন বর্জন ও সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ' কর্মসূচির আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিএসপিপির সদস্য-সচিব কাদের গণি চৌধুরী, বরেণ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, জিয়া পরিষদের ডা. আবদুল কুদ্দুস প্রমুখ। সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে লিফলেট বিতরণকালে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, জনগণ সরকারকে বয়কট করেছে। ৭ জানুয়ারির ভোটও বর্জন করবে। গণতন্ত্রকামী মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হুমায়ুন আহমেদ তালুকদার, সোহেল রানা, শাহজাহান মিয়া সম্রাট, কাজী মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ। সকালে উত্তরায় লিফলেট বিতরণকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম- মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে দেশের তরুণ প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। তাদের ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। এভাবে ভোটাধিকার হরণ করে দেশের জনগণকে রিফিউজিতে পরিণত করেছে। সবাই ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিন, মোতালেব হোসেন রতন, আকরাম হোসেন, সাইফুল ইসলাম সুরুজ, ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ। সকালে ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়েতে লিফলেট বিতরণ করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, আরিফ হাওলাদার, রফিকুল ইসলাম, রাসেল মাহমুদ, এমজি মাসুম রাসেল, যুগ্ম-সম্পাদক কাজী মোখতার হোসেন প্রমুখ। মিরপুরে কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল। মৌচাকে লিফলেট বিতরণ করেছেন যুবদল নেতা বিলস্নাল হোসেন তারেক, শাহ্‌? নাসিরউদ্দিন রুমন, রোকনুজ্জামান রোকন প্রমুখ। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমমনা জোট ও দল : দুপুরে বিজয়নগরে গণসংযোগ করেছে ১২ দলীয় জোট। এ সময় জনগণের উদ্দেশে জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, 'এই নির্বাচনে জনগণ ও দেশের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবে। ডামি নির্বাচনে ভোট বর্জন করি। শেখ হাসিনাকে না বলুন।' প্রেস ক্লাব এলাকায় কর্মসূচি পালন করেছে নূরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির সভাপতি নূরুল হক নূর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, কেন্দ্রীয় নেতা হাসান মামুন, নাজিম উদ্দিন, শাকিল উজ্জামান প্রমুখ। এছাড়া লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, গণফোরাম (মন্টু)সহ অন্যান্য দলগুলো ভোট বর্জনের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করে। জামায়াতের লিফলেট বিতরণ : নির্বাচন বর্জন, ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত, বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন প্রত্যাখান এবং দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।