গত এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম নগরীর লাভ লেইন, জামালখান, খুলশী, নাসিরাবাদসহ কয়েকটি আবাসিক এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। এলএনজি টার্মিনালের সংস্কার কাজে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
নগরীর বহদ্দারহাট, হেম সেন লেইন, কাজীর দেউরী, চকবাজার, অক্সিজেন, আসকার দীঘিরপাড়, দক্ষিণ খুলশী এলাকাতেও রান্নাঘরে ঠিকঠাক জ্বলছে না গ্যাসের চুলা।
স্থানীয়রা বলেছেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাস পাচ্ছেন না তারা। সারাদিন এবং সন্ধ্যা পেরিয়ে কোনো কোনো এলাকায় গ্যাস আসে রাত ১১টা নাগাদ; আবার কোনো কোনো এলাকায় রাত ১২টাতেও লাইনে গ্যাসের চাপ থাকে না। আগাম বার্তা ছাড়াই বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় রান্নাবান্নাসহ ঘর গেরস্তালির কাজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে ওইসব এলাকার মানুষ।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি
\হলিমিটেডের (কেজিডিসিএল) জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) আমিনুর রহমান বলেন, 'দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে আমাদের গ্যাস নিতে হয়। একটি এলএনজি টার্মিনালে সংস্কারকাজ চলমান থাকায় চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম পাচ্ছি।'
কেজিডিসিএলের হিসেবে সার কারখানা, বিদু্যৎকেন্দ্র ও বাসাবাড়ি মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হয়। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো।
দুই-তিনদিনের মধ্য গ্যাস সরবরাহ অনেকটা স্বাভাবিক হবে এবং সংকট কেটে যাবে বলে আশা দিয়েছেন কেজিডিসিএল'র এই কর্মকর্তা।
লাভ লেইন এলাকার বাসিন্দা আমেনা বেগম জানান, গত অক্টোবর মাসে কিছুদিন এ ধরনের সমস্যা হয়েছিল। পরে ঠিক হলেও সেই সংকট ফিরে এসেছে। এই এলাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাস থাকে না।
চেরাগী পাহাড়ের বাসিন্দা সাবিনা রহমান জানান, গ্যাস না পাওয়ায় কয়েকদিন ধরে হোটেল থেকে খাবার কিনে চালাতে হচ্ছে তাকে।
নাসিরাবাদের বাসিন্দা রুহুল ইসলাম বলেন, 'কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই সকাল থেকেই গ্যাস থাকে না। এটাকেই নিয়তি ধরে নিয়েছি।'
এদিকে সরবরাহ কম থাকায় শুধু বাসাবাড়ি নয়, সিএনজি পাম্প, ফিলিং স্টেশন ও শিল্পকারখানায়ও গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন হচ্ছে। এতে ফিলিং স্টেশনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
বুধবার দুপুরের দিকে নগরের, টাইগারপাস ফিলিং স্টেশন, কদমতলী, গনি বেকারির কিউসি ফিলিং স্টেশনের সামনে দেখা যায়, ছোট বড় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। গ্যাস নেওয়ার জন্য এত চাপ, ফিলিং স্টেশনের চত্বর মাড়িয়ে প্রধান সড়কেও অনেক যানবাহন ছিল। যার কারণে নগরের বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় যানজটের।
নগরের কদমতলী ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে আসেন সিএনজি অটোরিকশা চালক সাগর মিয়া। স্টেশনের দীর্ঘ লাইন সিআরবির সামনে পর্যন্ত চলে আসে। তিনি বলেন, ৩ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই মনে হচ্ছে।
সিএনজি চালক মাহতাব বলেন, এক সপ্তাহ ধরে গ্যাসের জন্য আসছি। দিনের বেলা হচ্ছে ব্যবসার আসল সময়, বুধবার গ্যাস না নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। কেন গ্যাস নেই কেউ নির্দিষ্ট করে তা বলতে পারছে না।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। কলকারখানার পাশাপাশি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন এবং আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যমান সংকট চরম আকার ধারণ করবে। এর থেকে কমানো হলে গ্যাস সরবরাহ নেটওয়ার্কের স্বাভাবিক প্রবাহ টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।