শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
ঢাকা-১৪ আসন

কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে নিখিল

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাইনুল হোসেন খান নিখিল -ফাইল ছবি

ভোটের মাঠে বিএনপি না থাকলেও কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে ঢাকা-১৪ আসনের নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থী মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে। প্রচার-প্রচারণায় মাঠ অনেকটা তার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বসে নেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও। বিশেষ করে জাপা ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে নিখিল শিবিরে।

এবার নির্বাচনে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১২ প্রার্থী। যার মধ্যে বিভিন্ন দলের সাতজন ছাড়াও রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা আক্তার তুহিন। তিনি দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। সাবিনা আক্তার তুহিনের দাবি, নৌকা প্রতীক না পেলেও তার নির্বাচনী প্রচারে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সবার সমর্থনই পাচ্ছেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমি রাজপথের লোক, এখানে দীর্ঘদিন আছি। এটি আমার নিজস্ব এলাকা। তাই সাধারণ মানুষ আমার জন্য নেমে পড়েছে'। গত ১২ বছর সরকারের কার্যক্রম বিবেচনায় নিয়ে ভোটাররা তাকে নির্বাচিত করবেন এমনটা জানিয়ে তুহিন বলেন, 'আমি কাজ করছি। আমার বিশ্বাস, জনগণ আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবে। যদি কেউ কোনো রকম ডিস্টার্ব না করে, ভোটাররা যদি নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যেতে পারে- তাহলে আমি ভোট পাব'। এখনো যে পরিস্থিতি রয়েছে তাতে নির্বিঘ্নে ভোট হওয়ার আশা করছেন বলেও জানান এই স্বতন্ত্র প্রার্থী।

এর বাইরেও আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাকা-১৪ আসনের প্রায় সব প্রার্থী। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে তারা পাড়া-মহলস্নার অলিগলিতে চালাচ্ছেন জনসংযোগ কার্যক্রম। হেভিওয়েট প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন ছোট দলের প্রার্থীরাও। যদিও ভোটারা বলছেন, নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতেই এত তোড়জোড় চালানো হচ্ছে।

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাসেল শিবিরের নেতাকর্মীরা জানান, তারা সবগুলো ওয়ার্ডের ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। তাদের কথা শুনছেন এবং যোগ্যপ্রার্থী হিসেবে ঈগল মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। অন্যদিকে কেটলি মার্কায় ভোট দিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন লুৎফর রহমান। তার নেতাকর্মীরা জানান, ভোট অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগের এই নেতা নির্বাচনে নৌকা না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। প্রায় একই কারণে নির্বাচন করছেন বাকি স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা।

তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী

আলমাস উদ্দিনের সমর্থকরা দাবি করেন, রেকর্ড সংখ্যক পাঁচজন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় নির্বাচনে এগিয়ে থাকবে লাঙ্গল। এই প্রতীকের নেতারা জানান তারা জনগণের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন, তাদের সমস্যার কথা শুনছেন এবং নির্বাচিত হলে তাদের সব দাবি পূরণের আশ্বাস দিচ্ছেন।

তবে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ঢাকা-১৪ আসনে বড় একটি অংশ পাইকপাড়া, আনসার ক্যাম্প, ৬০ ফিট, টোলারবাগ ও মিরপুর-১। এসব এলাকার ভোটাররা জানান, তাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা মশা ও জলাবদ্ধতা। কিন্তু বিগত ১০ বছরে তা নিরসনে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।

পাইকপাড়া হাবুলের পুকুর এলাকার প্রবীণ ভোটার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, 'আমি এই এলাকায় ৫০ বছর ধরে আছি। প্রতি নির্বাচনেই প্রার্থীরা বিভিন্ন প্রতিশ্রম্নতি দেয় কিন্তু তা পূরণ করেন না। এবারও তারা আসছেন কিন্তু কতখানি তা সমাধান হবে তা জানি না। 'অন্যদিকে ১২ ওয়ার্ড টোলারবাগ এলাকার ভোটার ও ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বলেন, 'সত্যি কথা বলতে এবার ভোটে আমার তেমন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু যেভাবে প্রার্থীরা আসছেন এবং ভোট চাইছেন তাতে কিছুটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কিন্তু কাকে ভোট দেব সবাই তো একই দলের প্রার্থী। উলেস্নখ্য, ২০১৮ সালে তার কাছে কেউ ভোট চাইতেই আসেনি সে হিসেবে এবার প্রার্থীরা ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।'

যদিও প্রচার প্রচারণার মাঠ শতভাগই নৌকার দখলে। প্রধান সড়ক ও ওভারব্রিজগুলোতে চার থেকে পাঁচজন প্রার্থীর পোস্টার দেখা গেলেও পাড়া-মহলস্নাজুড়ে কেবল নৌকার পোস্টার ও অফিস দেখা গেছে। যেমন আনসার ক্যাম্প রোডে প্রায় ১০০ গজ পর পরই রয়েছে নৌকা প্রার্থীর অফিস। অন্যদিকে অন্য প্রার্থীদের অফিস হাতেগোনা কয়েকটি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ৭ থেকে ১২ পর্যন্ত এবং সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৪ সংসদীয় আসন। মোট ১২ প্রার্থী এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নৌকা প্রতীকে মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বতন্ত্র প্রার্থী কেটলি প্রতীকে লুৎফর রহমান, রকেট প্রতীকে মোহাম্মাদ ইমরুল কায়েস খান, ঈগল প্রতীকে রাসেল, ট্রাক প্রতীকে সাবিনা আক্তার তুহিন, দালান প্রতীকে মোহাম্মাদ মহিবুলস্নাহ, মশাল প্রতীকে জাসদের আবু হানিফ, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মাহবুব মোড়ল, ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের কামরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির আলমাস উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী নাজমুল ইসলাম ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আসিফ হোসেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে