আজ জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

ভোটে কোনো সংঘাত চাই না :শেখ হাসিনা

প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বুধবার এডিটরস গিল্ডের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -ফোকাস বাংলা
ভোটাররা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই পরিবেশ তৈরি করতে প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে। তাদের ইচ্ছামতো ভোট দেবে। এখানে কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। কোনো প্রকার সংঘাত আমি চাই না।' বুধবার গাইবান্ধা, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিলস্না, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে নির্বাচনী জনসভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি কোনো প্রকার গন্ডগোল চাই না। সহনশীলতা আপনাদের দেখাতে হবে। নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোটদানের পরিবেশটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটা দেশের জন্য একান্তভাবে জরুরি, কারণ এই বাংলাদেশ নিয়ে অনেক রকম খেলা অনেকে খেলতে চায়।' শেখ হাসিনা বলেন, 'যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না, জয়বাংলার সেস্নাগান যারা নিষিদ্ধ করে, ৭ মার্চের ভাষণ যারা নিষিদ্ধ করে দেয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা ধ্বংস করে, তারা দেশটাকে ধ্বংস করবে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যাতে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমি চাই, সত্যিকারভাবে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে জনগণ তার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।' তিনি বলেন, '২০০১ সালে বিএনপি গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি, লুটপাট, জঙ্গিবাদ, বোমা, গ্রেনেড হামলা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করে। দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, সরকার তখন একটা না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশাপাশি আবার খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতির আখড়া গড়ে তোলে। এতে দেশে চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয়। যখন দেখেছে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে, তখন এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার লিস্ট তৈরি করে। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন গঠন করে। এভাবে নির্বাচন করতে গিয়ে তারা ব্যর্থ হয়। '৯৬ সালেও খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রম্নয়ারি জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু জনগণ মেনে নেয়নি।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমাদের লক্ষ্য ছিল, আমরা বাংলাদেশকে উন্নত করব। বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেব। আমরা সেই বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছি।' যোগাযোগ, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের নেওয়া উন্নয়ন কার্যক্রম এবং মানুষের কল্যাণে নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'বিএনপি-জামায়াতের চরিত্র হলো দুর্নীতি করা আর মানুষ খুন করা। ২০১৩-১৪ সালের মতো এবারও তারা ভয়াল রূপ নিয়ে মানুষের সামনে হাজির। মায়ের কোলে শিশুকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা পুরো বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। সাংবাদিকদের পিটিয়েছে, পুলিশকে কীভাবে পুড়িয়ে মেরেছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। বাংলাদেশের মানুষকে এই দুর্বৃত্তপরায়ণতার বিরুদ্ধে জবাব দিতে হবে। আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে এর জবাব দেবেন এবং উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখবেন।' এদিকে, আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল জানান, জনসভায় টাঙ্গাইল অংশ থেকে যুক্ত হন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এমপি। সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক। এছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের প্রার্থী তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে নৌকার প্রার্থী ডা. কামরুল হাসান খান, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের প্রার্থী মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মামুন অর রশিদ, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের প্রার্থী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী খান আহমেদ শুভ এমপি এবং টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী অনুপম শাজাহান জয় ও বিভিন্ন এলাকার দলীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এর আগে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় প্রতিটি আসনের প্রার্থীদের পক্ষে মিছিল-ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে নেতাকর্মী-সমর্থকরা এসে সমবেত হন। কুমিলস্না বিভাগ দাবি তরুণ প্রজন্মের এদিকে, স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না জানান, জনসভায় কুমিলস্না প্রান্তের নেতাদের মধ্যে একমাত্র বক্তব্য দেন কুমিলস্না-৬ (সদর) আসনের এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুমিলস্নার বিভিন্ন আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের দাবি 'কুমিলস্না বিভাগ' বলে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ভার্চুয়ালি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার এমপি বলেন, 'আমাকে চারবার মনোনয়ন দিয়েছেন, আপা। এই কুমিলস্নায় আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় পাস করেছি। এবার চতুর্থবার মনোনয়ন দেওয়ার কারণে কুমিলস্না এখন শেখ হাসিনার কুমিলস্নায় রূপান্তরিত হয়েছে। আজকের কুমিলস্না জাতির জনকের কুমিলস্নায় রূপান্তর করেছি আমরা। আপনি অনেক দিয়েছেন কুমিলস্নায়। আমাদের দোয়া করবেন, যেন এই কুমিলস্না যুগে যুগে কালে কালে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বার বার নির্বাচিত হয়। আপনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কুমিলস্নাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেবেন।' এরপর তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের পক্ষে কথা বলেছেন দিলরুবা রহমান রিমু নামের এক শিক্ষার্থী। সে তার জীবনের প্রথম ভোট মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মার্কা নৌকায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে বলেছেন, আপনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নারীদের মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। গরিবদের পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছেন। আপনি, কুমিলস্না বিভাগ করে দেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের জবাবে বলেন, 'অনেক ভালো লাগল, খুশি হলাম'। আজ নারায়ণগঞ্জে আসছেন শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৫ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ শহরে আসছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন দুপুর আড়াইটায় নারায়ণগঞ্জের এ কে এম শামসুজ্জোহা স্টেডিয়ামে নির্বাচনী সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখবেন। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী ও সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে দলের নেতাকর্মীরা দুপুর ২টার মধ্যে শামসুজ্জোহা স্টেডিয়ামে উপস্থিত হবেন। আমরা বিশ্বাস করি, সেদিন স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ হবে। এই স্টেডিয়ামে ঈদের জামাতে এক লাখ ২৫ হাজার লোক নামাজ পড়তে পারেন। সে হিসাবে আড়াই লাখ লোকের জায়গা হবে। পাশাপাশি রাস্তাও আছে। এখানে দলের সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা থাকবেন। এছাড়া জেলা ও মহানগরের সভাপতি, মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ আমরা একসঙ্গে সমাবেশ মঞ্চে থাকার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মায়ের মতো। তার কাছে আমাদের সকল আবদার পূরণ হয়। এবারও তার কাছে জেলাবাসী হিসেবে আমাদের চাওয়া থাকবে।' নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তার স্বার্থে সকল ধরনের নিরবচ্ছিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।' আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী এদিকে, বুধবার আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার আমাদের শেষ জনসভা। কাল (আজ) জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন।