ভোটের দিন প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও গণপরিবহণ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে না বলে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, 'এবার আমরা যে সার্কুলার (বিজ্ঞপ্তি) দিয়েছি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মতামত নিয়ে, সেখানে যানবাহনের ওপর আগে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেটা এবার শিথিল করা হয়েছে।'
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মঙ্গলবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা জানান। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান প্রমুখ।
যানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিলের কারণ প্রসঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন মানুষের ভোটকেন্দ্রে যেতে তার একটা যানবাহন লাগে। যেসব যানবাহন মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে অ্যালাউ (চলাচলের অনুমতি) করা হয়েছে। এটা সার্কুলার হয়তো পেয়ে যাবেন এবং প্রাইভেট কার অ্যালাউড, সিএনজিচালিত অটোরিকশা অ্যালাউড। মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাস এবং আরও কিছু যানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে।'
রেগুলার রুটের বাস ও পাবলিক সার্ভিস বাসও (গণপরিবহণ) এবার চলাচল করবে উলেস্নখ করে সচিব বলেন, 'ভোটারদের যাতায়াতে বাধা থাকলে তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। ঢাকায় প্রাইভেট কার বন্ধ রাখা হলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাবেন না।'
'গুজব আসবে, তথ্য আছে'
নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ভোটের দিন
নানা ধরনের গুজবের বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্বাহী হাকিমদের নির্দেশ দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ''ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া- এ দুই মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনকারী কর্মকর্তাদের কাছে গুজব আসতে পারে বলে 'তথ্য মিলেছে'।''
এমন প্রেক্ষাপটে সময় নষ্ট না করে যে কোনো ধরনের গুজবের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয় সেলকে অবহিত করতে নির্বাহী হাকিমদের নির্দেশনা দিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, 'কিছু গুজব আসবে। আমাদের কাছে সেরকম তথ্য আছে। এই গুজবগুলো দুই ধরনের। একটা হচ্ছে ইন্সট্যান্ট ফোন আসবে আপনার কাছে। 'ওই এলাকায় মার্ডার হয়েছে, পাঁচজন আটকে রাখছে- এদিকে মুভ করেন'। আরেকটা গুজব হচ্ছে- 'সাইবারভিত্তিক গুজব। এসব গুজব এলে জেলা প্রশাসক জানেন- কোথায় জানাতে হবে, সোশাল মিডিয়ায় আসা লিংকটা কার কাছে পাঠাতে হবে। এটা তাদেরকে ওয়েল সার্কুলেট করেছি, আবারও করব। কন্ট্রোল রুম বা আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেলে জানাবেন। জেলা প্রশাসন সেল বা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিলে সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারব।'
গুজব রোধে নেওয়া পরিকল্পনা প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, 'জেলা প্রশাসনকে বার্তা দেওয়া হবে যেন সিঙ্গেল চ্যানেলে নির্বাহী হাকিমদের সঙ্গে যোগ দেন। বাইরের গুজবের খবর এলে আপনি (নির্বাহী হাকিম) ক্রস চেক না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। প্রতিটি জেলায়, উপজেলায় কোর কমিটি রয়েছে। বাহিনী প্রধানদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে সমন্বয় সেল থাকবে। যাই ঘটুক তাদের কাছে তথ্য থাকবে। ক্রস চেক করে অ্যাকশনে যাবেন।'
নির্বাহী হাকিমদের উদ্দেশে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'পিআইডি, এনটিএমসির সেল রয়েছে, তারা এখন থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সার্বক্ষণিক কাজ করবে।'
ভোটের সময়ে সোশাল মিডিয়ার গুজব অনেক সময় 'ভয়ংকর আকার ধারণ করে' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'কিছু অপরিচিত ফোন এসে আপনাদের বিভ্রান্ত করবে, কোনো ইনটেনশন নিয়ে কথা বলবে। আপনাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ফোনগুলো আসতে পারে। মিস লিড কেরতে পারে। এটা যাচাই করতে হবে। এছাড়া রিটার্নিং অফিসারের সিগন্যাল ছাড়া অনত্র যাবেন না।'
'গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে রাষ্ট্র ব্যর্থ হবে'
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ হয়ে যাবে মন্তব্য করে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, 'এবার নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য একটাই, তা হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। তারা যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না করতে পারেন, কোনো কারণে যদি তারা ব্যর্থ হন, তাহলে রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাবে। তারা সেটা চাইবেন না। কারণ, এতে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব।'
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে আনিছুর রহমান বলেন, 'কোনোভাবেই আগামী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেওয়া যাবে না। যখন যেখানে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, সময়ক্ষেপণ না করে তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের একটাই নির্দেশনা- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর বাইরে আর কোথাও থেকে নির্দেশনা আসবে না।'
আনিছুর রহমান আরও বলেন, 'অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এই নির্বাচন শুধু ১৮ কোটি মানুষ দেখছে, তা নয়; দেখছে সমগ্র বিশ্ব।'