রাজধানীর ধানমন্ডিতে তিনটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক ট্রাফিক সার্জেন্টসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ধানমন্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পারভেজ ইসলাম জানান, ধানমন্ডির প্রধান সড়কে নিয়ম অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতে বাধা দেওয়ায় গতকাল দুপুরে চালকরা সাত মসজিদ রোডে পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। তারা জিগাতলা, ধানমন্ডির ৭/এ এবং আবাহনী মাঠ এলাকায় তিনটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেন।
তবে ধানমন্ডি থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক মো. আব্দুল মান্নাত কিছুটা ভিন্ন কথা বলেন। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কাগজপত্র পরীক্ষা করছিল। উপযুক্ত কাগজপত্র না থাকায় একটি গাড়ি আটক করলে এ নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে গাড়িচালকের বাকবিতন্ডা হয়। এ সময় আরও দুই অটোরিকশাচালক এতে যোগ দেন। তারা ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজন অটোচালককে আটক করে। পরে দুপুর ২টার দিকে
তাদের ধানমন্ডি থানায় নিয়ে আসা হয়। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে অটোরিকশা চালকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তিনটি পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
এদিকে শুধুমাত্র ক্ষুব্ধ অটোরিকশা চালকরাই এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে, নাকি এর নেপথ্যে কারও ইন্ধন রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ তুলে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ তিন রাস্তা এলাকায় মোহাম্মদপুরের ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনা ঘটে। ওইদিন দুপুর ১২টার দিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা ১৫০-২০০ জনের একটি মিছিল নিয়ে এসে এই হামলা চালায়। এ ছাড়া গত বছর ১৪ অক্টোবর ঢাকার মিরপুর ও পলস্নবী থানা এলাকার পাঁচটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশার চালকরা হামলা চালিয়েছিল। এতে এক কনস্টেবল আহত হন। পুলিশ তখন বলেছিল, অভিযানে দুটি ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করার পর এই হামলা হয়।
অটোরিকশা চালকদের অভিযোগ, ঢাকাসহ সারা দেশেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে ট্রাফিক পুলিশ তাদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। নগরীর অলি-গলি এমনকি প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা অবাধে চলাচল করার জন্য ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ টোকেন দেওয়া হয়। এই টোকেন নিয়ে গাড়ি চালালে কোনো অসুবিধা হয় না। কোনো কারণে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোনো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক নতুন টোকেন নিতে বিলম্ব করলে ট্রাফিক পুলিশের হয়রানির খড়গ নেমে আসে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে নিয়মিত চাঁদা নিচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশা যাতে নির্বিঘ্নে রাস্তায় চলাচল করতে পারে, এ জন্য নেতারা সবসময় তৎপর থাকেন। কোনো কারণে ট্রাফিক পুলিশ এ ব্যাপারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা এর প্রতিবাদ করার জন্য গাড়িচালকদের উদ্বুব্ধ করেন। তাদের প্রশ্রয় পেয়েই ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা চালানোর সাহস পান বলে মনে করেন তিনি।