লক্ষ্ণীপুর-১ আসন

ডিসি-এসপিকে বদলির হুমকি দেওয়া পবনের প্রার্থিতা বাতিল

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বদলির হুমকি দেওয়ায় লক্ষ্ণীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ভবনে পবনের উপস্থিতিতে অভিযোগের শুনানির পরদিন মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্ত জানাল ভোট আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবিধানিক সংস্থাটি। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে পবন বলেছেন, বুধবারের (আজ) মধ্যেই তিনি প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিলই নির্বাচনী আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি। এই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে 'নির্বাচনী অপরাধের' দায়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা হিসেবে প্রার্থিতা বাতিল করা হলো। অবশ্য স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিলের নজির রয়েছে। কাজী হাবিবুল আউওয়াল কমিশন এর আগে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন অনিয়মের কারণে বাতিল করে নজির সৃষ্টি করেছিল। পবনকে ইসির সিদ্ধান্ত জানিয়ে কমিশনের আইন শাখার উপসচিব আব্দুছ সালাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, লক্ষ্ণীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবন গত ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক ও লক্ষ্ণীপুরের রিটার্নিং অফিসার সুরাইয়া জাহানকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে 'অকথ্য, আপত্তিকর ও অশোভন' কথা বলেন। সেই ঘটনায় লক্ষ্ণীপুরের রিটার্নিং অফিসার সুরাইয়া জাহান ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে বলা হয়, রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারকে 'তিন দিনের মধ্যে বদলি করার হুমকি' দেওয়ার পাশাপাশি 'ভয়-ভীতি' দেখিয়েছেন যুবলীগ নেতা পবন। অভিযোগ পাওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী পবনকে তলব করে নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় তাকে। সে অনুযায়ী সোমবার নির্বাচন ভবনে উপস্থিত হয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে নিজের ব্যাখ্যা দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান পবন। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন ওই অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করে ওই ঘটনার 'সত্যতা রয়েছে' বলে প্রতিবেদন দেন। এছাড়া ওই আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিও পবনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন দেয়। এই স্বতন্ত্র প্রার্থী 'নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন ও নির্বাচনী অপরাধে জড়িত থেকে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম সংঘটন করেছেন' জানিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। মঙ্গলবার উপসচিব আব্দুছ সালাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, 'শুনানিকালে প্রার্থীপক্ষের বক্তব্য, জেলা নির্বাচন অফিসার, লক্ষ্ণীপুর কর্তৃক প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদন, নির্বাচনী অনুসন্ধান প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি পর্যালোচনায় প্রার্থী কর্তৃক নির্বাচনী অপরাধসহ 'নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম' সংঘটনের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ১৯ ই ধারার বিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্ণীপুর-১ নির্বাচনী আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবন এর প্রার্থিতা বাতিলের সদয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।' যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান পবন প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। নিজের ফেসবুক পেইজে তিনি লিখেছেন, 'আমি নিরপরাধী হওয়া সত্ত্বেও ন্যায়বিচার পাইনি! আমার উপরে জুলুম করা হচ্ছে..! তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম, আছি এবং থাকব। ইনশাআলস্নাহ আমি শতভাগ আশাবাদী, আগামী কালকের মধ্যেই উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আমি আমার প্রার্থিতা ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আমি রামগঞ্জের মানুষের দোয়ায় শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব ইনশাআলস্নাহ।' নেতাকর্মীদের প্রতি পবনের অনুরোধ, 'আপনারা কেউ কারো সঙ্গে দয়া করে তর্কে জড়াবেন না। সব ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলুন। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার বন্ধ রাখুন। সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অসংখ্য ধন্যবাদ।'