শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাজার রায়ের কারণে কেন সরকারের সমালোচনা করা হচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'ব্যক্তিত্বের উচ্চতা কি আইনের ঊর্ধ্বে? ড. ইউনূস সাহেব কি আইন-আদালতের ঊর্ধ্বে?'
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনূসের রায়ের প্রসঙ্গে এমন প্রতিক্রিয়া দেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গ্রামীণ টেলিকমের ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করা, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়ার অভিযোগে ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে এ মামলা
করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর।
সেই মামলার রায়ে চারজনকেই দোষী সাব্যস্ত করে ছয় মাসের কারাদন্ড এবং জরিমানা করে ঢাকার একটি শ্রম আদালত।
ইউনূস সমর্থকদের অভিযোগ, 'প্রতিহিংসা' থেকে একজন নোবেল বিজয়ীকে 'হেনস্তা' করার উদ্দেশ্যে এই মামলা এবং রায়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের এ বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে ওই রায় নিয়ে প্রশ্ন করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'শাস্তি কি তাকে আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে? যে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন, তাদেরই মামলা, সেই মামলায় আদালত তাকে শাস্তি দিয়েছে। এখানে সরকারের কি করণীয় আছে?'
তার প্রশ্ন, 'সরকার কেন এখানে সমালোচনার মুখে পড়বে? এটাতো যথাযথ নয়।'
দেড় মাস ধরে দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ করে আসা বিএনপি গত কয়েকদিন ধরে কেন কেবল লিফলেট বিলির মতো 'নিরীহ' কর্মসূচিতে থাকছে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার ভাষায়, বিএনপির এ কর্মসূচি 'রহস্যময়।' আমরা অবাক হচ্ছি যে তারা (বিএনপি) লিফলেট বিতরণ করতে যাচ্ছে ৪ তারিখ পর্যন্ত। পাশাপাশি কিছু কিছু খারাপ তথ্যও পাচ্ছি, হঠাৎ করে তারা গুপ্তহত্যা, চোরগোপ্তা হামলা, ভয়ংকরভাবে এসবের প্রতি ঝুঁকে পড়তে পারে এবং সেই জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন লিফলেট বিতরণের নামে নীরবতা বাইরে দেখানো হলেও তারা হঠাৎ করে সরব হয়ে উঠবে সশস্ত্র তৎপরতার মাধ্যমে যা নির্বাচনবিরোধী। এরকম খবর আমরা পাচ্ছি।'
এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, 'এখনো তো নীরবতার মধ্যে রয়েছে বিএনপি। তাদের লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতো নিরীহ। এটাকে আন্দোলন বলবেন? তাদের আন্দোলনও হবে না। কোনো লক্ষণও নেই। আমরা ওই অবস্থায় দেশ চালাব না। আগামীবার আমরা আরও শক্তভাবে, সুশৃঙ্খলভাবে দেশ পরিচালনা করব।'
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ভোট বর্জনের আন্দোলনে থাকলেও ৭ জানুয়ারি 'স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ' নির্বাচনের আশা প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, 'যদিও অশান্তির উপাদান এখানে আছে। অগ্নিসন্ত্রাস আছে, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আছে। বাসে-ট্রেনে আগুন দেওয়া আছে। নির্বাচনে জনগণ যাতে আতঙ্কগ্রস্ত হয় এবং ভোট দিতে না যায় সে কারণে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বিএনপি ও তার দোসররা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, 'নির্বাচন থেকে পিছিয়ে পড়ার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী যে তারিখ নির্ধারিত হয়েছে তা থেকে পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। যত বাধাই আসুক, যত সন্ত্রাস হোক, যা কিছু তারা করুক এবং লিফলেট বিতরণ করে জনগণকে নির্বাচন থেকে বিরত করার চেষ্টা করুক, এর কোনোটাই এ নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না।'
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ 'ঐক্যবদ্ধ' জানিয়ে কাদের বলেন, 'এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমরা অবিচল, অটল। এ নির্বাচন অনুষ্ঠান ইতিহাস অর্পিত দায়িত্ব, গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সংরক্ষণের দায়িত্ব। যে কোনো মূল্যে নির্বাচন, নির্বাচনী কর্মকান্ড সমাপ্ত করতে নির্বাচন কমিশনকে তাদের ভূমিকা পালনে যে কোনো সহযোগিতা করতে আওয়ামী লীগ বদ্ধপরিকর।'
বিএনপির নির্বাচন বর্জনের কর্মকান্ড ঠেকাতে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি এবার 'আগের চেয়েও বেশি' মন্তব্য করে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'সবকিছু আমরা সময়মতো সম্পন্ন করতে চাই। আমরা অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং জনগণের অংশগ্রহণের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আমাদের প্রস্তুতি সন্তোষজনক।'
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সোমবার বলেছিলেন, তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কিনা, সেটা 'সময়ই বলে দেবে'। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
জবাবে কাদের বলেন, 'আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো টানাপোড়েন নেই। আমাদের সঙ্গে তাদের খুব ভালোভাবে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা পরস্পরের সহযোগী হব, একটা ভালো নির্বাচনে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। আমার মনে হয় না তারা দলগতভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে।'
তিনি বলেন, 'সরকার গঠনের মতো আসনের ধারে কাছে নেই জাতীয় পার্টি। সরকার গঠনের অনেক উপরে তারা প্রার্থী দিয়েছে। কোন কোন প্রার্থী কোন অসুবিধার জন্য করতে পারছে না, সেটা তাদের ব্যাপার। নির্বাচনে কোনো সমস্যা নেই। যাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে তারা কেউতো নির্বাচন থেকে সরে যায়নি।'
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।