মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ফরিদপুরের জনসভায় শেখ হাসিনা

নৌকায় ভোট দিয়ে দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দিন

'টাকা দিয়ে ফরিদপুরের মানুষকে কেনা যায় না' হ 'বিজয়ী হলে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব'
সাইদা আক্তার ইমা, ফরিদপুর
  ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ফরিদপুর শহরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় পৌঁছে জাতীয় পতাকা নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান -ফোকাস বাংলা

দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে দেশের উন্নয়নের জন্য নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়, অস্ত্র দিয়ে উন্নয়ন হয় না। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য কাজ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।'

মঙ্গলবার ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ এই সভার আয়োজন করে।

এর আগে শ্রমিকরা দুই দিন ধরে অনবরত কাজ করে নৌকার আদলে তৈরি করেন সভামঞ্চ। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে ও তার কথা শুনতে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ জনসভা মাঠে আসতে শুরু করেন। আর খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে ফরিদপুরের রাজপথ ধরে জনসভাস্থলে জড়ো হন দলের নেতাকর্মীও। বিকাল ৩টার পর অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের কেউ কেউ টাকা ছড়াচ্ছে বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। অনেককে একেবারে সেই বলতে গেলে নর্দমা থেকে টেনে তোলা হয়েছে। তাদের পয়সা বানানোর, ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ দিয়েছি; মিডিয়া চালানোর সুযোগ দিয়েছি। এখন তারা টাকা ছড়ায়; তারা মনে করে, টাকা দিয়েই সব কেনা যাবে।'

তিনি বলেন, 'আমি এই টাকাওয়ালাদের টাকা ছড়ানো...খুব ভালো কথা, টাকা তারা ছড়াক। কারণ যত টাকা বানিয়েছে তত যাবে জনগণের হাতে। তবে একটা কথা স্মরণ করাতে চাই, ওই টাকা দিয়ে মানুষ কেনা যায় না, টাকা দিয়ে ফরিদপুরের জনগণকে কিনতে কেউ পারে নাই, পারবে না।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন,

'এ (ফরিদপুরের) মাটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মাটি, এই মাটি খাঁটি মাটি। কাজেই একমাত্র নৌকা; এই নৌকা মার্কা- সেই দেবে আপনাদের সমাধান। কাজেই সেই কথাটাই সবাইকে মনে রাখতে হবে।'

বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে আবারও নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, 'নুহু নবীর নৌকা মহাপস্নাবন থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে এই নৌকা মার্কা। এই নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষের উন্নতি হয়।'

আগে দক্ষিণের মানুষকে যে রাজধানীতে যাতায়াত করতে নদীপথের ঝক্কি পোহাতে হতো, সেখানে পদ্মা সেতু চালু করার পর যে সুফল মিলছে তা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, 'আজকে প্রায় সাড়ে ১১টার পর রওনা হয়ে ফরিদপুর চলে এসেছি। মাত্র দুই ঘণ্টা, সোয়া দুই ঘণ্টার মধ্যে ফরিদপুর আর ঢাকা। আমাদের শুধু ফরিদপুর না, গোটা দক্ষিণ অঞ্চল- প্রত্যেক জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ ব্যাপকভাবে করে দিয়েছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে যাচ্ছি, আরও কাজ বাকি। আমাদের এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে আমাদের আমদানিকৃত সব পণ্যের অধিক মূল্য দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে। যে কারণে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে অনেক।'

বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'অতিমারির সময় খেটেখাওয়া মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা টিসিবির মাধ্যমে ৫ কোটি মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য দেওয়া শুরু করেছি, যা এখনো চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আমরা বিধবা, বয়স্ক, মাতৃত্বকালীন, প্রতিবন্ধীদের কথা চিন্তা করে সরকারিভাবে ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের নিজের থাকার ব্যবস্থা করেছি, যা পৃথিবীতে মডেল। বর্তমানে দেশের ৩৩টি জেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত, পর্যায়ক্রমে সব জেলাও এর আওতায় আসবে।'

বিএনপির-জামায়াত সরকারের শাসনামলের কথা সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, 'সেই সরকার দেশকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছিল, দেশের গ্যাস সম্পদ বিক্রি করেই তারা ক্ষমতায় এসেছিল। ২০১৪তে বিএনপির নির্বাচনে আসেনি, ২০১৮তে মনোনয়ন বাণিজ্য করে নিজ দলের ভরাডুবি হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর আস্তে আস্তে দেশের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়েছি। আমার দলের নিবেদিত কর্মীরাই সবসময় দলের পাশে থেকেছে বলে আজ আমরা ক্ষমতায়। আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি দেশকে এগিয়ে নিতে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আমরা হাইটেক পার্কের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে হাত দিয়েছি, আজ তার বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন মানুষে হাতে হাতে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট। আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার জন্য প্রত্যেক স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করে দিয়েছি। এখন ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অনেকে দেশে বসে থেকে বিদেশ থেকে আয় করছে। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।'

'ইলেকশনে ছক্কা মেরে দিও'

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মাগুরার নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। এক পর্যায়ে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে দেখিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের একটা রত্ন আছে, এই রত্নটা ক্রিকেটরত্ন। মাগুরা-১ আসনে এবার আমরা নমিনেশন দিয়েছি- সাকিব আল হাসানকে। সে বলছে, বক্তৃতা দিতে পারে না। আমি বলেছি, বক্তৃতা দেওয়ার দরকার নেই। তুমি খালি বলবা যে, তুমি ছক্কা মারতে পার, আরও বল করে উইকেট ফেলে দিতে পার; তাহলেই হবে। এইবারে ইলেকশনে ছক্কা মেরে দিও।'

এর আগে সাকিব আল হাসান জনসভায় পৌঁছালে তাকে ঘিরে ধরেন ভক্তরা। এ সময় অনেককে মোবাইলে সেলফি তুলতে দেখা যায়। পরে তিনি মঞ্চে নির্দিষ্ট আসন অলংকৃত করেন।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের সভাপতিত্বে ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার দিলীপ বড়ুয়া, সংসদ সদস্য নাদিম রাজ্জাক, সাইফুজ্জামান শেখর, শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী, নৌকার প্রার্থী জিলস্নুল হাকিম, বীরেণ সিকদার, ফদিরপুরের মেয়র অমিতাভ বোস প্রমুখ।

আজ ৫ জেলার জনসভায় অংশ নেবেন শেখ হাসিনা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আজ বুধবার ৫টি জেলা ও একটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন বিকাল ৩টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন থেকে এসব জনসভায় যুক্ত হবেন তিনি।

মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপস্নব বড়ুয়ার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলা, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলা ও মহানগর, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, কুমিলস্না উত্তর-দক্ষিণ জেলা ও মহানগর এবং চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায় নির্বাচনী জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা, সংশ্লিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগ, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা এবং সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর নির্বাচনী এলাকার নৌকা মার্কার প্রার্থীরা থাকবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়াল জনসভা সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে ২০ ডিসেম্বর সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওইদিন হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরানের (রহ.) মাজার জিয়ারতের পর দলের নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।

এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনী জনসভা করছে আওয়ামী লীগ। এতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন থেকে জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে