নতুন বছরে বাংলাদেশের সামনে সাত চ্যালেঞ্জ
প্রকাশ | ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বিবিসি বাংলা
বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে বাজারে জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো বিষয়গুলো। নতুন বছর বাংলাদেশের জন্য সাতটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। নতুন বছর নির্বাচন ও সরকারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা, জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো ইসু্য বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
নির্বাচন ও সরকারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি যে পুরোপুরি ইতিবাচক নয়, তা তাদের বেশ কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে।
নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছুদিন ধরেই চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধা দিতে চাওয়া ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় আনার ঘোষণাও দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
শেখ হাসিনা নিজেও বেশ কয়েকবার বলেছেন যে 'যুক্তরাষ্ট্র হয়ত আমাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।'
যুক্তরাষ্ট্রের পর নির্বাচন প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিতে দেখা গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় ইউরোপিয়ান
কমিশনের দুই সংসদ সদস্য কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়ে আহ্বান জানান, যেন বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ইউরোপও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়।
আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর এমন কঠোর অবস্থানের মধ্যেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পুরো দমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিজেদের প্রার্থী বাছাই ছাড়াও কিছু জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু এসব প্রয়াস সত্ত্বেও নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞই। যেমন নির্বাচন-বিষয়ক বিশ্লেষক ও বেসরকারি সংস্থা সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মতে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, 'এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে আওয়ামী লীগ আগের দুই নির্বাচন থেকে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানের হতে হলে সব বড় রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ, ক্ষমতা বদলের সম্ভাবনা, নির্বাচনে জয় পাওয়া নিয়ে প্রার্থীর অনিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলো উপস্থিত থাকতে হয়। এগুলোর উপস্থিতি যেহেতু নেই, তাই নির্বাচনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিতভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।'
নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ চতুর্থ দফায় সরকার গঠন করলে চীন ও ভারতের মতো মিত্রদের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা বাড়তে পারে, যা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্যও দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এ ছাড়া ২০১৪ ও ২০১৮'র পর এবারের নির্বাচনেও সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারলে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হওয়া থেকে সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক পরিস্থিতিরও উদ্ভব হতে পারে বলে মনে করেন সুজন সম্পাদক।
জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ
গেল বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার প্রায় সারা বছরই ছিল উর্ধ্বমুখী। বাজারে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
পরিসংখ্যান বু্যরোর হিসাব অনুযায়ী আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, তা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশে। জুলাই-আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ শতাংশের ওপর।
এরকম পরিস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে 'সমস্যার গভীরতার স্বীকৃতি' দেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তার মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ২০২৩ সালে কর্তৃপক্ষের নেওয়া কৌশল যে কাজ করছে না, এ বিষয়টি নজরে আনা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, 'সমস্যা সমাধানে আমরা যে পথে এগিয়েছি, সে পথেই যদি থাকি তাহলে সমস্যার স্বীকৃতি হলেও সমাধানের কৌশলের অকার্যকারিতার স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। পথ পরিবর্তন না করলে সমস্যা থেকেই যাবে।' তার হিসেবে, খাদ্যপণ্যের দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ার পেছনে কারণ বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'পেঁয়াজ, ডিম, তেলের মতো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে আমরা দেখেছি খুচরা পর্যায়ে সেই পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নিতে। সমস্যা সমাধানে করণীয় কী, তা অজানা নয়। যে কোনো কারণেই হোক, সেগুলো প্রয়োগ করা যাচ্ছে না।'
অর্থবছর ২০২৩-র প্রথমার্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে বাজেট ঘাটতি অর্থায়ন আর মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও সুদহার নির্দিষ্ট করে রাখার মতো সিদ্ধান্তগুলো মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
ডলারের দাম
বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেড়ে যাওয়া গত বছর ব্যাপক প্রভাবিত করেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের পহেলা জুন থেকে এখনো পর্যন্ত, অর্থাৎ গত দেড় বছরে টাকার তুলনায় ডলারের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশেরও বেশি।
ডলারের এই বাড়তি দামের কারণে আমদানি এবং এর ধারাবাহিকতায় দেশের ভেতর উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। বেশি দামে পণ্য আমদানি করায় তা কেনার জন্য সাধারণ মানুষকেও গুণতে হয়েছে বেশি পরিমাণ টাকা।
ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন গত কয়েক বছর ধরে টাকার বিনিময় ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করে আসছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা সবসময়ই এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এসেছেন।
টাকার বিনিময় ডলারের মূল্য যেন হঠাৎ করে বেড়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে বিনিময় মূল্য 'ধীরে ধীরে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া' প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, 'টাকার যেন অবমূল্যায়ন না হয়, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো বাজারে ডলার ছাড়ছে। কিন্তু দাম নির্ধারণ না করে এই দাম নির্ধারণের বিষয়টি যদি ধীরে ধীরে, ছোট ছোট ধাপে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে এক সময় টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল হবে।'
তবে এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনভাবে কাজ করার সংস্কৃতি গড়ে তোলার পেছনে জোর দেন তিনি।
রিজার্ভ সংকট
গত বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত জানুয়ারিতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২.২২ বিলিয়ন ডলার, যা ডিসেম্বরে ২১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর কথা।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফের নির্ধারিত হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, জুন মাসে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২৪.৭৫ বিলিয়ন ডলার যা নভেম্বরে ১৯.৫২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত অর্থ, আইএমএফ'এর এসডিআর খাতে থাকা অর্থ, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা অর্থ এবং আকুর বিল পরিশোধ বাবদ অর্থ হিসেবে নিলে রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমবে বলে বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদদের অনেকের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখা ও দেশের ভেতর অর্থের আনাগোনা নজরদারির জন্য অর্থনীতিতে যেসব অনুষঙ্গ প্রয়োজন হয়, এর সবগুলো বাংলাদেশে কার্যকরভাবে উপস্থিত নেই।
অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডক্টর জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'ব্যবস্থাপনাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের রপ্তানির যে আয়, তা পুরোটা বাংলাদেশে ফিরে আসে না। এ ছাড়া আমদানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং করা হয় (কোনো পণ্যের আসল দামের চেয়ে বেশি দাম দেখানো)। এভাবে অনেক টাকাই দেশ থেকে বের হয়ে যায়।'
এরকম ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ নজরদারির দায়িত্বে থাকা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্বায়ত্তশাসন, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার, ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আর অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে রেমিট্যান্স পাঠানোরও ভূমিকা আছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ ও জ্বালানি সরবরাহ
গত বছরের গ্রীষ্মকালে বেশ কিছুদিন লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক ক্ষেত্র, বিদু্যৎ সংকট হয়রানি করেছে সবাইকেই।
সে সময় সংকট তৈরি হয়েছিল মূলত রিজার্ভের ঘাটতি আর ডলারের সংকটের কারণে বিদু্যৎকেন্দ্রের জ্বালানির খরচ বহন করতে না পারায়। জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সময়মতো বকেয়া ফেরত দিতে না পারায় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তারা।
যার ফলে বিদু্যৎকেন্দ্রে দেখা দেয় জ্বালানি ঘাটতি। ফলস্বরূপ বেশকিছু বিদু্যৎকেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। কিছু কেন্দ্র চলে সীমিত সক্ষমতায়।
তবে সামনের বছর ডলারের দামের পাশাপাশি তেল, গ্যাসের মতো জ্বালানিগুলোর দাম স্থিতিশীল থাকার পূর্বাভাস থাকায় তেমন সংকট তৈরি হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্যের পূর্বাভাস বলছে, ডলারের দাম কমতে পারে আর না কমলেও স্থিতিশীল থাকবে। এ ছাড়া তেল, গ্যাস বা সারের মতো যেসব পণ্য আমরা আমদানি করি, সেসবের দামও স্থিতিশীল থাকবে বলেই বলা হচ্ছে।'
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলা
বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও ডেঙ্গুতে মৃতু্যর সব অতীত রেকর্ড ভেঙেছে ২০২৩ সালে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত ২৩ বছর ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ৮৬৮ জন, আর শুধু ২০২৩ সালেই সেই সংখ্যাটা ছিল এক হাজার ৬৯৭ জন। আগের ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে যত মানুষ মারা গেছেন, গেল এক বছরেই মারা গেছেন এর প্রায় দ্বিগুণ মানুষ।
ডেঙ্গু পরিস্থিতির এই পর্যায়ে আসার পেছনে অপরিকল্পিত নগরায়ন, মশা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা, সিটি করপোরেশনসহ প্রশাসনের অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের মতো বিষয়গুলোকে তুলে ধরা হয়।
তবে আশার বিষয় হলো, সামনের বছর প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সাত বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এই পরিকল্পনায় চিকিৎসক, নার্সদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কীটনাশকের ব্যবহার নিশ্চিত করা, ডেঙ্গু শনাক্তকরণে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত করা, কর্মসূচির দুর্বলতা নির্ণয় করে নীতিগত পরিবর্তনের মতো বেশ কিছু বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, কৌশল প্রণয়ন করা হলেও এটি বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জন্য।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডক্টর মুশতাক হোসেনের মতে, 'এটা দলিল হিসেবে ঠিক আছে। কিন্তু এটার অপারেশন, একশন পস্ন্যান পরিপূর্ণ না। কে কোন কাজ করবে, বাজেট কোথা থেকে আসবে, এইগুলো অ্যাড্রেস করা নেই। এটার প্রধান সমস্যা হলো, স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সমন্বয় দরকার। স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ। অর্থাৎ মশা নিয়ন্ত্রণ করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। এটা নিয়ন্ত্রণ না হলে হাসপাতালের রোগী কমবে না।'
তিনি বলেন, 'কৌশলপত্র অনুযায়ী, কাজ শুরু হলে কিছুদিন পর স্বাস্থ্য বিভাগ বলবে, আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণ না হলে আমরা কি করব? এটার সমস্যা সমাধান করা হয়নি। রোগী কমাবো কীভাবে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে কোনো প্রস্তাবনা এখানে নেই।'
রাজনৈতিক অস্থিরতা
গত কয়েক বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা উত্তালই ছিল বলা চলে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো প্রায় সারা বছরই সরকার বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে গেছে।
অক্টোবরের শেষদিকে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে হওয়া সহিংসতার পর টানা ৬ সপ্তাহ হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস, ট্রেনে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনায় অন্তত আটজন মারা গেছেন।
এমন রাজনৈতিক অস্থিরতা আগামী বছরও চলমান থাকার সম্ভাবনা থাকলেও একবার নির্বাচন হয়ে গেলে বিরোধী দলের আন্দোলন কার্যকারিতা হারাবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, 'বিরোধী দলের অবস্থান যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হতেই পারে। কিন্তু একবার নির্বাচন হয়ে গেলে মনে হয় না, খুব বেশি অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ আছে। ২০০৮-এর নির্বাচনের পর বিএনপি যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে ছিল। ২০১৪-১৫তে তো তারা সরকারকে রীতিমতো ভুগিয়েছে। কিন্তু এখন তাদের আগের সেই শক্ত অবস্থানটা নেই।'
মহিউদ্দিন আহমেদের হিসেবে, বিএনপির ক্রমাগত হরতাল-অবরোধ আর অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেও সরকার যে নির্বাচনের আয়োজন করে চলেছে, এর মাধ্যমেই বোঝা যায় যে, বিএনপির কর্মসূচি খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না। তাদের আন্দোলনে কতটা জনসম্পৃক্ততা রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ বলছে, উন্নয়ন আর গণতন্ত্রের কথা, বিএনপি শুধু গণতন্ত্রের কথা বলছে। কিন্তু মানুষ তো উন্নয়নও চায়। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এই উন্নয়ন যে অব্যাহত থাকবে, এর কোনো নিশ্চয়তা তারা দিচ্ছে না।'