বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপি'র রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে, এমন সম্ভাব্য ষড়যন্ত্রে জাতি স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ। এ ধরনের বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক।
সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক সভায় আলোচিত ও সর্বসম্মতিক্রমে বিষয়গুলো তুলে ধরে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে তারা
\হবলেন, প্রধানমন্ত্রীর মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, তার কাছে নাকি খবর রয়েছে, বিএনপি বড় ধরনের গুপ্তহত্যা চালাতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনের বিরুদ্ধে যে প্রচারণা চালাচ্ছে, তা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। এর আগে যুবলীগের সভাপতি জানিয়েছেন, আবার ক্ষমতায় গেলে বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাও বিএনপির বিরুদ্ধে এরূপ অভিযোগ ও বিষোদ্গার করেছেন। তাদের এই বয়ানের লক্ষ্য, ৭ জানুয়ারির তথাকথিত 'ডামি ইলেকশন' আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আবার একটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার ঘৃণ্য উদ্যোগের প্রধান বাধা, তথা জনগণের আকাঙ্ক্ষা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ গণসমর্থিত বিএনপির অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করা।
তারা বলেন, সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও রাজনৈতিক জিঘাংসার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করছে, যেন বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া যায়। কিন্তু এতো গুম, এতো খুন, এতো মামলা, এতো অত্যাচার, এতো মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ফ্যাসিবাদের নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতা নিষ্পেষণেও বিএনপিকে একবিন্দু দমানো সম্ভব হয়নি। বিএনপি নিছক একটি রাজনৈতিক দল নয়। বিএনপি বাংলাদেশজুড়ে বিস্মৃত একটি মহীরূহ সংগঠন, যার সমর্থন রয়েছে দেশের প্রতিটি মহলস্নায়, সমাজের প্রতিটি স্তরে, রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামোতে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র আশার প্রদীপ বিএনপিকে নিভিয়ে দেওয়ার যে কুচক্রী প্রকল্প তারা হাতে নিয়েছে, তা অচিরেই দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়াবে। গণতন্ত্রকামী কোটি-কোটি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী বাকশালিদের সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে বিএনপি।
নেতারা বলেন, ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পর বিলুপ্ত আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন জিয়াউর রহমান। তার ইচ্ছায় দেশে ফেরত এসে দলীয় রাজনীতির হাল ধরেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জিয়ার আনুকূল্য পেয়েছিলেন বলেই শেখ হাসিনা এই দেশের মাটিতে রাজনীতি করার ও রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এজন্য জিয়া ও বিএনপির প্রতি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
অপর এক বিবৃতিতে বিএনপিকে নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, এমন বক্তব্য ক্ষমতাসীনদের গভীর ষড়যন্ত্র ও নীলনকশার অংশ। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রযন্ত্রের সমর্থনে আওয়ামী লীগের যে চিরন্তন 'সেখানে নিজেরা অপকর্ম করে অন্যের ঘাড়ে তার দায় চাপানোর রাজনীতি' তারা সেটার আবারও পুনরাবৃত্তি করার চক্রান্ত করছে। বিএনপি নিয়ে ওবায়দুল কাদের যে মন্তব্য করেছেন তা ন্যক্কারজনক, নিন্দনীয় এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত।