ভোটে বাধা দিলে অবশ্যই সংকট দেখা দেবে :সিইসি
প্রকাশ | ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, 'সহিংস পন্থায় যদি নির্বাচনের বিরুদ্ধাচরণ করা হয় বা ভোটারদের বাধা দেওয়া হয় তাহলে অবশ্যই সংকট দেখা দেবে। তবে সেই সংকট মোকাবিলা করতে হবে। কারণ, নির্ধারিত সময়ে ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হবে। এখানে প্রতিরোধ আসতে পারে তারপরও দায়িত্ব পালন করতে হবে।'
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের আইন-বিধিবিধান সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিইসি এসব কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'নির্বাচনে সার্বজনীনতা কাম্য ছিল। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটি অংশ এই নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে। এতে অসুবিধে নেই। তারা শান্তিপূর্ণভাবে জনমত সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু সহিংস পন্থায় যদি বিরুদ্ধাচরণ করে বা ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেয় তাহলে অবশ্যই সংকট দেখা দেবে।'
নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকার বাইরে সফরের অভিজ্ঞতার
\হকথা উলেস্নখ করে সিইসি বলেন, 'অনেকে বলেছেন, ভোটাররা প্রশ্ন করেন, তারা ভোট দিতে পারবেন কি না? যে কোনো কারণেই হোক একটি অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা ছিল। ওই নির্বাচন সার্বজনীন হয়ে উঠেনি। সেখানে সহিংসতা হয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সে নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক উঠেছিল। পাবলিক পারসেপশন ইতিবাচক হয়নি- এটাই সত্য।'
নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে নজর দিচ্ছেন জানিয়ে সিইসি বলেন, 'শুধু সুষ্ঠু হলে চলবে না। নির্বাচন যে সুষ্ঠু হয়েছে তা বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। ইনকারেক্ট পারসেপশন হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের দায় জনগণ ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর প্রতি। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে খাটো করে দেখা যাবে না, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কমিউনিটির অংশ।'
নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ না থাকলেও ভোট পেছানোর এখতিয়ার যে কমিশনের নেই সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'নির্বাচন পেছালে সংসদ গঠনে দেরি হয়ে যাবে। তাদের দ্বারা সংসদ গঠনের সুযোগ করে দিতে হবে আমাদের।'
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, 'বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ও আশা রয়েছে। সে জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচনের মাঠে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সামান্যতম অপরাধ যারা করবে তাদের প্রতি আপনারা (জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) ক্ষমাশীল হবেন না। কখনোই কর্তব্যের প্রতি অবহেলা করবেন না। সাহসিকতা নির্ভীকতার সঙ্গে কাজ করবেন।'
তিনি বলেন, 'দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একেবারেই দোরগোড়ায়। এ নির্বাচন সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে করার জন্য আমাদের এ বিশাল আয়োজন। এতদিন বাইরে থেকে বুঝতে পারিনি নির্বাচন কমিশনের কর্মযজ্ঞ কতটা বিরাট। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে আসার পর দেখতে পেয়েছি নির্বাচনের আয়োজন অত্যন্ত দীর্ঘ প্রক্রিয়ার এবং মহাযজ্ঞ। আমাদের যে জনবল রয়েছে তাদের দ্বারা এ নির্বাচনের বিরাট মহাযজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। যার কারণে ধাপে ধাপে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে যুক্ত করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ৪৩ হাজার কেন্দ্রে এক দিনে একযোগে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে অনেক লোকের প্রয়োজন। সে জন্য নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ এবং সুন্দর পরিবেশে করার জন্য সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।'
নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'এখানে কেউ যদি একটু সামান্য ব্যত্যয় করি তাহলে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে না। কমিশনে আসার পর থেকে আমরা সবসময় মনে করেছি আমাদের উচিত একটি ভালো ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। যেখানে ভোটাররা আসবেন এবং তাদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবেন। আমরা সে উদ্দেশ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।'
ইসি রাশেদা আরও বলেন, 'কমিশনে আসার পর থেকে স্থানীয়সহ বিভিন্ন নির্বাচন মিলিয়ে ১২শর বেশি নির্বাচন সম্পন্ন করেছি। ছোট দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ও রক্তপাত ঘটেনি। আমি দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলতে চাই, এ ইলেকশনগুলো আমরা ভালোভাবে করতে পেরেছি। এটা সম্ভব হয়েছে সবার আন্তরিকতার কারণে।'
তিনি বলেন, 'আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আমরা অত্যধিক গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। কেননা এটি শুধু সাধারণ নির্বাচন নয় বরং গণতন্ত্রের বিষয়টি জড়িত। কারণ জনগণের দেশ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারাই পরিচালিত হবে এটি আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় মূলমন্ত্র। এখানে জনগণ যাকে নির্বাচন করবে তারাই জনগণের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের অংশগ্রহণ একটি জরুরি বিষয়।'
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.) এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান।