নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। গত ছয় বছর ধরে তাদের এমন চেষ্টা অব্যাহত ছিল। গত শারদীয় দুর্গাপূজার মন্ডপে রেকি করার পাশাপাশি নাশকতা চালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কারণে সেই চেষ্টা ভেস্তে গেছে। জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ এক নেতাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর এমনটাই জানালেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগ।
রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আরও জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার ডেমরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. ইউসুফ ওরফে ইউসুফ হুজুর ও মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে জহিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে পাওয়া গেছে নব্য জেএমবির আদর্শ প্রচারপত্র 'নাবা' পত্রিকা, একটি ব্যাকপ্যাকে সুরক্ষিত ১০টি ডেটোনেটর ও জিহাদি বই।
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশ থেকে সিটিটিসির অভিযানে নব্য জেএমবির ছয়
সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের তথ্য মতে, নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা ইউসুফ ওরফে ইউসুফ হুজুর এবং অপারেশনাল কমান্ডার আবু বকরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছিল। চলতি বছরের ৩ নভেম্বর আবু বকরকে সিটিটিসি গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। সবশেষ গ্রেপ্তার হয় ইউসুফ হুজুর।
ডিআইজি আসাদুজ্জামান বলেছেন, ২০১৭ সালে ইউসুফ ও আবু বকরকে গ্রেপ্তার করেছিল সিটিটিসি। ২০১৯ সালে তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে মধ্য প্রাচ্যে আত্মগোপন করেন। সেখান থেকেই ইউসুফ ও আবু বকর অনলাইন পস্ন্যাটফর্ম ব্যবহার করে জঙ্গি সংগঠনটিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন। সাড়ে তিন বছর পর ২০২২ সালে ঈদুল আজহার পর তারা দেশে ফিরেই আবারও দল গোছানোর কাজ শুরু করেন।
আবু বকরের ভাষ্য মতে, মেহেদী হাসান ওরফে জন তুরস্কে গ্রেপ্তার হতে পারে- এমন সন্দেহে ইউসুফ হুজুর ও তিনি দেশে ফিরেন। ইউসুফ হুজুর নব্য জেএমবির বাংলাদেশের প্রধান ও আবু বকর অপারেশনাল কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত। গত শারদীয় দুর্গোসবে পূজামন্ডপে তাদের হামলার পরিকল্পনা ছিল। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক তারা পূজামন্ডপ রেকি করে বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ইউসুফ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গি সংগঠনটির কাঠামো গঠনের চেষ্টা করছিলেন।
ডিআইজি আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালের আগে ইউসুফ হুজুর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তার সহপাঠী জহির ও আব্দুলস্নাহর সঙ্গে ব্যবসার উদ্যোগ নেন। ২০২২ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে মিনতীন নামে কন্সট্রাকশন কোম্পানি চালু করেন। ব্যবসার আড়ালে তারা জঙ্গি সংগঠনটির কাজ করতেন। ব্যবসা থেকে রোজগার করা টাকা-ব্যবসায় খরচ করতেন। দলের টাকায় তাদের সংগঠনে উদ্ধুব্ধ হওয়া তরুণ বা যুবকদের হিজরতের নামে প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতেন।