বনশ্রীতে গৃহকর্মীর মৃতু্যর জেরে সংঘর্ষ ও আগুন
ওসিসহ আহত অন্তত ৫ জন, পুলিশ হেফাজতে বাড়ির মালিকের ছেলে
প্রকাশ | ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকার রামপুরা থানার বনশ্রী এলাকায় এক গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয় জনতা বাধা দেয়। এ নিয়ে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে রামপুরা থানার ওসি মশিউর রহমান ও তার সঙ্গে থাকা তিন পুলিশসহ অন্তত ৫ জন আহত হন। এ সময় উত্তেজিত জনতা বাড়ির গেটের তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে তিনটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়। বাড়ির মালিকের ছেলেকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রোববার সকাল ৮টার দিকে রামপুরা থানার বনশ্রীর ডি বস্নকের ৪ নম্বর সড়কের ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে এক নারীর লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করার চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা বাধা দেয়। এ সময় স্থানীয় জনতার সঙ্গে পুলিশের চরম বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় জনতার
ব্যাপক সংঘর্ষ। সংঘর্ষে রামপুরা থানার ওসি মশিউর রহমান ও তার সঙ্গে থাকা তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫ জন আহত হন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উত্তেজিত জনতা যে বাড়িটির সামনে লাশ পড়ে ছিল, সেই বাড়ির গেটের তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এরপর জনতা বাড়িটির গ্যারেজে পার্কিং করে রাখা তিনটি প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে গাড়ি তিনটি প্রায় পুরোপুরি পুড়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন। আগুনে তিনটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটর সাইকেল পুড়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে পুড়ে যাওয়া তিনটিই অত্যাধুনিক মডেলের দামি প্রাইভেটকার।
রামপুরা থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, বাড়িটির মালিক সাবেক ট্যাক্স কমিশনার দেলোয়ার হোসেন। তার ছেলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মেহেদী হাসান সকাল আটটার দিকে ফোন করে বাড়িটির ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী মারা যাওয়ার খবর দেন পুলিশকে। খবর পেয়ে আমিসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। এ সময় স্থানীয়রা পুলিশকে লাশ উদ্ধারে বাধা দেন।
ওসি বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগ নিহত গৃহকর্মী ছাদ থেকে পড়ে মারা যাননি। তাকে হত্যার পর উপর থেকে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। উত্তেজিত জনতা লাশ উদ্ধারে বাধার সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে গেলে উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে আমার মাথা ফেটে যায়। আমার অপর সহযোগী পুলিশ সদস্যরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আমার মাথায় চারটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ সময় লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ সূত্রে জানা গেছে, নিহত গৃহকর্মীর নাম আসমা বেগম (৪২)। বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানাধীন ককরাচর গ্রামে।
ওসি মশিউর রহমান আরও জানান, নিহত নারী মিরপুরে কানিজ ফাতেমা নামের এক মহিলার বাসার গৃহকর্মী ছিলেন। কানিজ ফাতেমা তিন দিন আগে গৃহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে তার বাবার ওই বাড়িতে বেড়াতে যান। ওই গৃহকর্মীর একমাত্র ছেলের মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে পারিবারিক অশান্তির জেরে আত্মহত্যা করেছেন, নাকি ভবন থেকে পড়ে মারা গেছেন নাকি তাকে হত্যার পর লাশ উপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। গৃহকর্তার ছেলে আইনজীবী মেহেদী হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশের পোস্টমর্টেম হয়নি। পোস্টমর্টেম হওয়ার পর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি। তবে একটি জিডি হয়েছে।