বিশ্বের নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে দেশে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'যত টাকা লাগে আমরা দেব। আন্তর্জাতিক যত নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় আছে- তারা কীভাবে শিক্ষা দেয়, কী কারিকুলাম শেখায়, কীভাবে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে, আমরা তা অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশে তৈরি করতে চাই। সেই সঙ্গে হাতে কলমে শিক্ষা, যাতে করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।'
রোববার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কিছু শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের 'বই উৎসব' উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী তার এই পরিকল্পনার কথা জানান। আজ সোমবার নতুন বছরের প্রথম দিনে সারা দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে।
সরকার প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গড়ে তুলতে চায় উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা কখনো পিছিয়ে থাকব না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। এজন্য আমরা চাই এই ছোট্ট বয়স থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা কম্পিউটার শিখবে, প্রযুক্তি শিখবে। সেজন্য আমাদের শিক্ষা কারিকুলামগুলোর পরিবর্তন আনা দরকার।'
শিক্ষার্থীদের মন দিয়ে লেখাপড়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'ধন সম্পদ অনেক কিছু থাকতে পারে কিন্তু শিক্ষা এমন একটা জিনিস যা কেউ কেড়ে নিতে পারে না। আগামীদিনে এই ছেলেমেয়েরাই তো একদিন আমার মতো প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে বা ভালো শিক্ষক হবে। ছোট্ট সোনামণিদের আমি বলব, মন দিয়ে পড়াশোনা ১
করতে হবে, বাবা-মা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের কথা মন দিয়ে শুনতে হবে এবং মানতে হবে। ক্লাসের বই মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে পাশাপাশি জ্ঞান আহরণের জন্য অন্যান্য বই ও পড়তে হবে।'
বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার কথা আবারও উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'শিক্ষিত জাতি ছাড়া এটা সম্ভব নয়। আমাদের ভবিষ্যৎ কাজ হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এ জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্মার্ট দক্ষ জনগোষ্ঠী। আর এ কাজে বহুমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে ছেলেমেয়েদের।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা চাই আমাদের দেশটা যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। সেজন্য আমাদের কারিকুলামগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আজকে শিক্ষাকে আমরা যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি তার ফলে আমাদের সাক্ষরতার হার অনেক বেড়ে গেছে। এ সাক্ষরতার হার যেখানে মাত্র ৪৪ ভাগ ছিল সেখান থেকে আমরা আজকে ৭৬ দশমিক ৮ ভাগে উন্নীত করেছি।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমার জীবনের একটি স্বপ্ন ছিল আমি শিক্ষক হব। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। কিন্তু '৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করতে না পারায় সে পথে হাঁটা হয়নি। সে সময় ছয় বছর প্রবাসে রিফিউজি জীবন কাটাতে বাধ্য হই। আমি ও আমার ছোট বোন শেখ রেহানা। সে সময় আমাদের দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া বাবাকে পাকিস্তানি শাসকেরা বারবার কারারুদ্ধ করে রাখায়ও আমাদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়েছে। কিন্তু আমরা আমাদের পরিবারে লেখাপড়াকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই, আমাদের ছেলেমেয়েদেরও বলি শিক্ষা হচ্ছে সম্পদ। এমন এক সম্পদ যা তোমাদের থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না, তাই বিদ্যা অর্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তারা তাই করেছে এবং করছে।'
শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসারে সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড নিয়ে গেছে উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের কাজ শুরু হয়েছে। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবেল সংযুক্ত করা হলে আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমি চাই প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন আমাদের জাতি গড়ে উঠবে এবং তা ছোটবেলা থেকেই। আমাদের ছেলেমেয়েরা খুব মেধাবী কাজেই তাদের সেই মেধাটা বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। তাদের ভেতরের সুপ্ত জ্ঞানটাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই ভবিষ্যতের জন্য। কারণ আমাদের দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এর জন্য যা প্রয়োজন সেভাবে আমাদের দেশটার উন্নতি করতে হবে।'
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
মন্ত্রণালয়গুলো এ বছর ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ টি নতুন বই বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
সরকার ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে ৪৬৪ কোটি ৭৮ লাখ ২৯ হাজার ৮৮৩ টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে।
২০১৭ সাল থেকে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের তাদের মাতৃভাষায় অধ্যয়নের জন্য চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো এবং সাদরি ভাষার বই বিতরণের পাশাপাশি দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বই বিতরণ করা হচ্ছে।