ব্যক্তি ও কর্পোরেটের ওপর করের বোঝা হ্রাসের আহ্বান

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাজেট প্রতিক্রিয়া

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি ও করর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর করের বোঝা লাঘব করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংস্থা ফরেন ইনভেস্টরস' চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। বুধবার রাজধানীর বনানী শেরাটন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট এবং আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর খসড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যবসা খাত ও এর কর্মচারীদের ওপর এর প্রভাব পড়বে। সংবাদ সম্মেলনে ফিকির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় লিখিত বক্তব্যে বলেন, 'আমাদের সরকার যে প্রগতিশীল পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নের দিকে নজর দিচ্ছে তা প্রশংসনীয়। তবে, কিছু বিধান বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা এবং ব্যক্তির প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত ভ্যাট এবং লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর করের বোঝা বাড়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।' ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য বড় বরাদ্দের প্রশংসা করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, কৃষি এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দের অপ্রতুলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিকি। অন্যদিকে, খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর বিধানগুলোর গভীর ও বিস্তৃত পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কারণ এই আইনের কিছু বিধান আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিবেচনায় অযৌক্তিক বলে মনে হয়। ফিকির পক্ষ থেকে বলা হয়, কার্বোনেটেড পানীয় শিল্পের (বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি) নূ্যনতম কর ০.৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মোট প্রাপ্তির ৫ শতাংশ বা ৮ গুণ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যার ফলে কোমল পানীয়ের দাম ৩০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। এই খাতে ইতোমধ্যে ৫-১০ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি পরোক্ষ কর (এসডি + ভ্যাট) ৪৩.৭৫ শতাংশ দিতে হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলে পণ্যের ভোগ কমে যাবে এবং পরবর্তীতে সরকারি কর আদায় হ্রাস পাবে, যা শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং এই খাতে কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই, এই শিল্পের বিকাশের সুযোগ দিতে সরকারকে নূ্যনতম কর ১ শতাংশ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, প্রণোদনা বোনাস অতিরিক্ত লভ্যাংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফিকির পর্যালোচনা অনুসারে, এটি কোম্পানির উপর আরও করের বোঝা চাপিয়ে দেবে এবং পরবর্তীতে কর্মচারীদের উপার্জনের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যবসায়িক ক্ষতির বিপরীতে অন্য আয় সচল রাখার অনুমতি না দেওয়া করের চেতনার বিরুদ্ধে যায়। পাশাপাশি, বিদেশি ঋণের সুদের উপর করের বিধান এবং তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতার দ্বারা আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ প্রদানে ব্যর্থতার জন্য তার সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দিতে অননুমোদন দেওয়ার বিধানটি বাদ দেওয়া উচিত। কর্পোরেট এবং সংস্থাগুলোর জন্য নগদ লেনদেন সীমিত করা দেশের উন্নয়নকে সীমাবদ্ধ করবে, কারণ বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি নগদহীন লেনদেন করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। সরকারের উচিত কোম্পানিগুলোর নগদ লেনদেনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ না করে তার খরচের নূ্যনতম শতাংশ ব্যয় করার অনুমতি দেওয়া। যেন পরবর্তী ৫ বছরে ধীরে ধীরে তারা শতভাগ নগদহীন লেনদেনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। সম্পত্তির ওপর বর্ধিত কর জনগণকে সরকারি দলিলে প্রকৃত সম্পত্তির মূল্য উলেস্নখ না করে মৌজা রেট উলেস্নখ করতে প্রণোদিত করবে। এটি সরকারকে করের বিশাল একটি উৎস থেকে বঞ্চিত করতে পারে। যে কারণে সম্পত্তি কর লেনদেনের খরচ বৃদ্ধি করার পরিবর্তে তা যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনা উচিত এবং বাজার মূল্য প্রতিফলিত করার জন্য মৌজা মূল্যকে পর্যায়ক্রমে আপডেট করতে হবে। কর পদ্ধতিতে কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা হ্রাসের প্রস্তাব করেছে ফিকি এবং নিরবচ্ছিন্ন লেনদেনের জন্য এনবিআরের তিনটি শাখা এবং বাইরে থেকে সংযুক্ত সিস্টেমগুলোর ডিজিটালাইজেশন করার পরামর্শ দিয়েছে। খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩ অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীগণ এখন থেকে ডবিস্নউপিপিএফ, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ডিভিডেন্ড থেকে আয়ের উপর আর কোনো ছাড় পাবেন না। লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্স (এলএফএ) এখন থেকে করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা কি আদৌ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে কি না এবং সেটা থেকে করে কর ছাড় পাওয়া যাবে কি না সে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা নেই। মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট তহবিল এবং সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। বেসরকারি স্বীকৃত ভবিষ্যত তহবিলে কর আরোপ করা কর্মীদের আয় হ্রাস করবে এবং সরকারি ভবিষ্যত তহবিলকে করমুক্ত হিসেবে রাখার বিষয়টি বৈষম্য সৃষ্টি করবে। ফিকি সরকারকে এই বিধানটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করে, কারণ এটি ব্যক্তির মোট আয়ের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সরকারের কাছে ফিকি আহ্বান জানায় যেন তারা আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩ -এর একটি নির্ভুল ইংরেজি সংস্করণ তৈরি, ম্যাপিং এবং সূচিকরণ করে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শীর্ষ এই সংস্থাটি আরও জানায় যে, প্রস্তাবিত আইনে স্পষ্ট বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যাতে প্রস্তাবিত আয়কর আইন ২০২৩ 'অবিলম্বে কার্যকর' -এর পরিবর্তে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হয়ে ১ জুলাই ২০২৩ থেকে কার্যকর হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দীপাল আবেইউক্রেমা, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশীদ, ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির কো-অর্ডিনেটর সাজ্জাদ রহিম চৌধুরী, ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য দেবব্রত রায় চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির এবং কনসালট্যান্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া।