একুশে নিয়ে লেখা প্রথম কবিতার নাম, ‘কঁাদতে আসিনি ফঁাসির দাবি নিয়ে এসেছি’। কবিতার পঙ্ক্তিগুলো এ রকম- এখানে যারা প্রাণ দিয়েছে/রমনার ঊধ্বর্মুখী কৃষ্ণচ‚ড়া তলায়/যেখানে আগুনের ফুলকির মতো/এখানে ওখানে জ্বলছে অসংখ্য রক্তের ছাপ/সেখানে আমি কঁাদতে আসিনি। কবিতাটি লেখা হয়েছিল চট্টগ্রামে। লিখেছিলেন চট্টগ্রামের সবর্দলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়ক মাহবুুবুল আলম চৌধুরী।
১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। একুশে ফেব্রæয়ারি ঢাকায় গুলির খবর চট্টগ্রামে যখন পেঁৗছে, তখন তার গায়ে জলবসন্তের ব্যথা, জ্বর ১০৪ ডিগ্রি। এ অবস্থায় কিছু লেখা সম্ভব নয়। তাই তিনি তার পরিচযার্কারী ননী ধরকে দিয়ে লিখিয়ে নিলেন কবিতাটি। মাহবুবুল আলম বলে গেলেন, লিখলেন ননী ধর।
সেদিন বিকালে খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস দেখতে এলে তাকে
কবিতাটি পড়ে শোনান মাহবুবুল আলম চৌধুরী। পরে আন্দরকিল্লার কোহিনুর প্রেস থেকে কবিতাটি ছাপা হলো। লালদীঘি ময়দানে একুশের হত্যাকাÐের প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় কবিতটি আবৃত্তি করেন হারুনুর রশীদ। কবিতাটি পাঠ করার সময় মুসলিম লীগের ফজলুল কাদের চৌধুরী কবিতাটির পাঠ বন্ধ করার নিদের্শ দিলেও উপস্থিত জনতার দাবির মুখে তা শেষ করা হয়।
পরে সরকার কবিতাটি নিষিদ্ধ করে, মাহবুবুল আলম চৌধুরীর নামে জারি হয় হুলিয়া। বোরখা পরে পালিয়ে যান তিনি, আত্মগোপন করে থাকেন ৯ মাস। এরপর কবিতার কপিটি লুকিয়ে রাখা ছিল তার বাড়িতে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জ্বালিয়ে দেয়া হলো তার বাড়ি। অনেক কিছুর সঙ্গে কবিতাটিও পুড়ে গেল।
এরপর অনেক খুঁজেছেন তিনি কবিতাটি। কবিতাটি খুঁজতে গিয়ে পুলিশ আকার্ইভ পযর্ন্ত গিয়েছেন। কিন্তু সেখান থেকেও ফিরে এসেছিলেন বিফল হয়ে। তখন তিনি টেলিভিশনের মাধ্যমে আবেদন করেন, যদি কারো কাছে কবিতাটি থেকে থাকে তিনি যেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এরপর মঞ্জুরা বেগম নামে একজন নারী ফোন করে মাহবুবুল আলম চৌধুরীকে জানালেন, তার কাছে কবিতাটি আছে। ভাষা আন্দোলনের সময় মঞ্জুরা বেগম দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন। তার ভাই মীর আশরাফুল হক ছিলেন পুলিশের কমর্কতার্। এসএম হলে তল্লাশি চালাতে গিয়ে তার ভাই কবিতাটি উদ্ধার করেন। তিনি জানতেন, কবিতাটি এই অবস্থায় সংরক্ষণ করা বিপজ্জনক। বোনকে বললেন, কবিতাটি ডায়েরিতে তুলে রেখে কাগজটি পুড়িয়ে ফেলতে। মঞ্জুরা বেগম ভাইয়ের কথামতো সে কাজটিই করেছিলেন।
এরপর মীর আশরাফুল হকের ছেলে মফিদুল হক (সাহিত্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী) মাহবুবুল আলম চৌধুরীর কাছে এলেন একটি জরাজীণর্ ডায়েরি নিয়ে। সে ডায়েরির কিছু অংশ আছে, কিছুটা নেই। সে ডায়েরিতে কবিতার যতটুকু উদ্ধার হলো, সেটুকুই এখন ছাপার অক্ষরে পাওয়া যায়।