মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্ম ব্যবসায়ীরা নিকৃষ্ট

সাখাওয়াত হোসেন
  ২৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্ম ব্যবসায়ীরা নিকৃষ্ট

যারা আলস্নাহর আয়াতকে বিকিকিনির পণ্য বানায় তারা ধর্ম ব্যবসায়ী। যারা সত্য প্রচারের জন্য পারিশ্রমিক নেওয়ার উসিলা তৈরি করে তারাই স্রষ্টার দৃষ্টিতে পথভ্রষ্ট। তাদের ব্যাপারে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যারা বিনিময় নিয়ে নিজের ধর্ম-কর্ম করেন এইসব ধর্ম ব্যবসায়ী আলেমরা হবেন আসমানের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব। তাদের তৈরি ফেতনা তাদের ওপর পতিত হবে। এই সকল ধর্মব্যবসায়ীকে আলস্নাহ কেয়ামতের দিন ক্ষমা না করে জাহান্নামের শাস্তি দেয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন [হযরত আলী (রা.) থেকে বায়হাকী, মেশকাত]।

পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় (২:১৭৪) এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, 'বস্তুত, যারা আলস্নাহর কিতাবে যা অবতীর্ণ করেছেন তা গোপন করে এবং এর বিনিময়ে পার্থিব তুচ্ছমূল্য গ্রহণ করে, তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই ঢোকায় না এবং আলস্নাহ হাশরের দিন তাদের সঙ্গে কথাও বলবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব। এরাই হচ্ছে সেই সমস্ত মানুষ যারা

সঠিক পথের (হেদায়াহ) পরিবর্তে পথভ্রষ্টতা (দালালাহ) এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করে নিয়েছে। আগুন সহ্য করতে তারা কতই না ধৈর্যশীল।'

একই সূরার অপর এক আয়াতে (২:৭৯) বলা হয়, 'অতএব তাদের জন্যে আফসোস! যারা নিজ হাতে কিছু লিখে এবং বলে, এটা আলস্নাহর পক্ষ থেকে- যাতে এর বিনিময়ে সামান্য অর্থ গ্রহণ করতে পারে। অতএব তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের হাতের লেখার জন্য এবং তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের উপার্জনের জন্যে।

কোরআনুল কারিমের সূরা তওবায় (৯:৩৪) ইরশাদ হচ্ছে, 'হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই ধর্মের মোলস্না ও পুরোহিত শ্রেণির অনেকে সাধারণ মানুষের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে এবং আলস্নাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখে। আর যারা স্বর্ণ ও রুপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আলস্নাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।'

এ ব্যাপারে আলস্নাহ তার মুমিন বান্দাদের সতর্ক করে বলেন, 'আপনি কি তাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চান? আপনার পালনকর্তার প্রতিদান উত্তম এবং তিনিই রিজিকদাতা। আপনি তো তাদেরকে সোজা পথে দাওয়াত দিচ্ছেন।' (সূরা মু'মিনুন ২৩:৭২, ৭৩)

'বলুন, আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না বরং তা তোমরাই রাখ। আমার পুরস্কার তো আলস্নাহর কাছে রয়েছে। প্রত্যেক বস্তুই তার সামনে। (সূরা সাবা, ৩৪:৪৭)

'আর তোমরা সে গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি সত্যবাণী হিসেবে তোমাদের কাছে। বস্তুতঃ তোমরা তার প্রাথমিক অস্বীকারকারী হয়ো না আর সামান্য মূল্যে আমার আয়াতের কেনাবেচা করো না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ। (সূরা বাকারা, ২:৪১)

পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও লেবাসধারী কতিপয় আলেম তা অমান্য করে ধর্ম ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছেন। মিলাদ, ফাতেহা, ওয়াজ, নসিহত, এমনকি মৃতের জানাজা পড়ানোর জন্য টাকা নিচ্ছেন। এই আগুনখোর ধর্মজীবীরাই অজ্ঞ মুসলমানদের কোরআন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে ধর্মান্ধ বানিয়ে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। এদের কুমন্ত্রণায় মুসলিমরা অসংখ্য ভাগে বিভক্ত হয়ে ভাতৃঘাতী লড়াই লড়ে নিজেরাই ধ্বংস হচ্ছে। এই আগুনখোর মোলস্না ও পুরোহিত শ্রেণির উপর নির্ভর করে অনেকে স্রষ্টার নির্দেশনা থেকে বহু দূরে সরে যাচ্ছে। আর এ সুযোগে লেবাসধারী ধর্ম ব্যবসায়ীরা কেউবা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করছেন। অনেকে অর্থবিত্তের পাহাড় গড়ে তুলছেন; আয়েসী জীবন-যাপন করছেন।

পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে ধর্ম ব্যবসার সবগুলো ধরন সম্পর্কেই নিষেধাজ্ঞা ঘোষিত হয়েছে, ধর্মকে বিক্রি করে পার্থিব সুযোগ-সুবিধা, সম্পদ হাসিলের কোনো সুযোগ আলস্নাহ রাখেননি। তিনি একে কেবল হারামই করেননি, তিনি বলেছেন, তারা পথভ্রষ্ট, তারা আগুন ছাড়া কিছুই খায় না। তিনি আখেরাতে তাদেরকে পবিত্র করবেন না, তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।

এ অবস্থায় তাদের অনুসারীরাও জাহান্নামেই যাবে এটাই স্বাভাবিক। তবুও আলস্নাহ সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, 'তোমরা তাদের অনুসরণ করো যারা বিনিময় গ্রহণ করে না এবং সঠিক পথে আছে।' (সূরা ইয়াসিন ২১)।

অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সমাজে প্রকৃত আলেমরাও কোরআনুল কারিমের এ নির্দেশনাগুলো মানুষের সামনে প্রকাশ করেন না। তারা সুদ-ঘুষ, ব্যভিচারের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বয়ান করেন। কিন্তু ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে তারা নিশ্চুপ। বরং কৌশলে এ প্রসঙ্গটি তারা গোপন রাখতে চান। তাদের একটি শ্রেণি নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করতে মানুষের ধর্মীয় চেতনাকে কাজে লাগান। তারা নিজেদেরকে ইসলামের ধারক হিসেবে প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধপক্ষকে ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে ফতোয়া দেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে