শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি মৃতু্য বেড়ে ৩০

স্বজনদের আহাজারি দুই তদন্ত কমিটি

প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা
নারায়ণগঞ্জ শহরের কয়লাঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় মোট ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো ৭ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার ডুবে যাওয়া লঞ্চটি নদীর পূর্বপাড়ে এনে তলস্নাশি চালিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে গতকাল ২৫ জনের এবং রোববার রাতে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে, সোমবার বিকালে উদ্ধার অভিযান আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। রোববার রাতে যে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয় তারা হলেন- মুন্সীগঞ্জ সদরের মালপাড়া এলাকার হারাধন সাহার স্ত্রী সুনিতা সাহা (৪০), উত্তর চরমসুরা এলাকার অলিউলস্নার স্ত্রী সখিনা বেগম (৪৫), একই এলাকার প্রীতিময় শর্মার স্ত্রী প্রতিমা শর্মা (৫৩), সদরের নয়াগাঁও পূর্বপাড়া এলাকার মিঠুর মিয়া স্ত্রী সাউদা আক্তার লতা (১৮) ও অজ্ঞাত নারী (৩৪)। এখনো নিখোঁজ তালিকায় আছেন ৯ জন। এর আগে লঞ্চডুবির পর রোববার রাত হতে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে এসে অনেকেই স্বজনদের খোঁজে কান্নাকাটি করতে থাকে। লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ হওয়া লোকদের সন্ধানে স্বজনদের ছোটাছুটি এবং আহাজারি করতে দেখা গেছে। স্বজনদের আহাজারিতে শীতলক্ষ্যার দুই তীরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। এদিকে, লঞ্চডুবির ঘটনায় রোববার রাতে বিআইডবিস্নউটিএ'র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ঘটনাস্থলে ছুটে যান নৌবাহিনীর কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, নৌ-পুলিশসহ বিআইডবিস্নউটিএ'র কর্মকর্তারা। আর রাতেই ঘটনাস্থলে যান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক। রাতে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হলে তাদের শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরসহ দাফন করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে নগদ ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। আর লঞ্চডুবির ঘটনায় বিআইডবিস্নউটিএ'র পরিচালক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক মো. রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। লঞ্চ দুর্ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটনে রোববার রাতে ঘটনাস্থলে যান বিআইডবিস্নউটিএ'র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকসহ অন?্যান?্য শীর্ষ কর্মকর্তারা। এদিকে, লঞ্চডুবির ঘটনায় সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিলস্নাহ, জেলা পুলিশ সুপার জাহেদুল হক পিপিএম বারসহ বিআইডবিস্নউটিএ'র কর্মকর্তারা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারের নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ হালিম বলেন, এসকেএল-৩ (এম :০১২৬৪৩) নামের একটি কার্গো জাহাজ পেছন থেকে লঞ্চটিকে ধাক্কা দিয়ে অন্তত ২০০ মিটার লঞ্চটিকে টেনে নিয়ে যায়। এরপর যাত্রীসহ লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চটিকে ধাক্কা দিয়ে কার্গো জাহাজটি দ্রম্নত পালিয়ে যায়। লঞ্চের যাত্রী আবুল কালাম জানান, সন্ধ্যা প্রায় ৬টায় যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে এমএল রাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। প্রায় ১৫ মিনিট পর লঞ্চটি বন্দর থানার মদনগঞ্জে নির্মাণাধীন শীতলক্ষ্যা সেতু-৩ এর কাছে পৌঁছালে পেছন থেকে একটি কার্গো জাহাজ ধাক্কা দিলে সাথে সাথে লঞ্চটি নদীতে ডুবে যায়। লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চটি একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে গেছে। দুর্ঘটনায় প্রায় ২৬ জনের মরদেহ এবং ডুবে যাওয়া লঞ্চটিও উদ্ধার করা হয়। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুলস্নাহ আল আরেফিন জানান, শীতলক্ষ্যা ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর বিআইডবিস্নউটিএ, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআইডবিস্নউটিএ'র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। রোববার রাত হতে ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হয়তো বা কয়েক জন নিখোঁজ থাকতে পারে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধারকাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিলস্নাহ জানান, শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী একটি লঞ্চডুবির ঘটনার সময় আবহাওয়া খারাপ থাকায় রাতে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়। সোমবার সকাল থেকে বিআইডবিস্নটিএ'র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় উদ্ধারকাজ শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধারকাজ সমাপ্ত করা হয়। আর লঞ্চডুবির ঘটনায় ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখনো কয়েকজন লোক নিখোঁজ থাকতে পারে। তাদের খোঁজের্ যাবের হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্ধান করবে। নিহতদের ক্ষতিপূরণ দাবি জাপার এদিকে, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবিতে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। পাশাপাশি মৃতদের পরিবারকে যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। সোমবার এক শোকবার্তায় তিনি নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন। জিএম কাদের বলেন, নৌপথে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। নৌপথ নিরাপদ করতে হবে। তাই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন করতে কার্যকর তদন্ত কমিটি গঠন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।