বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
সতর্কতা বাংলাদেশ হাইকমিশনের

মালয়েশিয়ায় বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় তৎপর দালাল চক্র

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

মালয়েশিয়ায় শুরু হয়েছে অবৈধ অভিবাসী শ্রমিক বৈধকরণ প্রক্রিয়া। এবার সরাসরি দেশটির শ্রম ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। বৈধ হওয়ায় প্রক্রিয়ায় দালাল, এজেন্ট বা তৃতীয় পক্ষের কিছু করার ক্ষমতা নেই। ওতপেতে থাকা দালাল চক্রের খপ্পরে পড়বেন না কেউ। মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশিদের দালালদের সঙ্গে কোনো আর্থিক লেনদেন না করার কথা জানিয়েছে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন।

মালয়েশিয়ায় গত ১৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে অবৈধ অভিবাসী শ্রমিক বৈধকরণ প্রক্রিয়া। আগামী ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে এ বৈধকরণ প্রক্রিয়া। মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে থাকা তিন লাখের বেশি বাংলাদেশি এক নতুন সম্ভাবনা স্বপ্ন দেখছেন।

শ্রমিক বৈধকরণ নিবন্ধনে মালয়েশিয়া সরকার আগের মতো কোনো ভেন্ডার বা এজেন্ট নিয়োগ করেনি। এবার সরাসরি দেশটির শ্রম ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া হচ্ছে। কনস্ট্রকশন, ম্যানুফ্যাকচারিং, পস্নান্টেশন ও এগ্রিকালচার এই চার সেক্টরে কাজ করা প্রবাসী কর্মীরা এবার বৈধ হতে পারবেন।

অবৈধ অভিবাসী শ্রমিক বৈধকরণ প্রক্রিয়া ঘোষণার পরপরই বৈধ করার নানা প্রলোভন দেখিয়ে দালাল চক্র প্রবাসী কর্মীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে ঘাম ঝাড়ানো কষ্টের টাকা। প্রবাসী শ্রমিকদের কপাল পুড়তে দালাল চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে। বৈধ করে দেওয়ার নামে সংবাদপত্রে চমকপদ বিজ্ঞাপন দিচ্ছে দালাল চক্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে থাকা দালাল চক্রের সদস্যরা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কৌশলে।

অথচ প্রবাসী কর্মীদের বৈধ করার প্রক্রিয়াটি

পুরোটাই নিয়োগদাতা বা মালিকনির্ভর। বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় দালাল বা কোনো এজেন্টের তদবির কাজে আসবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন। প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের সচেতন করতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেইজে সচেতনমূলক পোস্ট দিয়েছে।

মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বলেন, মালয়েশিয়ায় বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় এবার মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনে কোনো গাইডলাইন নেই। প্রবাসী শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়োগদাতানির্ভর। ছুটিতে এসে দেশে আটকে পড়া প্রবাসীরা ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও মেয়াদ বাড়াতে পারবেন। ডিসেম্বরের পর মালয়েশিয়া প্রবেশে কোনো সমস্যা হবে না বলেও তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবার মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে দালাল চক্র কোনোরকম আর্থিক লেনদেন বা প্রতারণা করলে দালাল ও এজেন্টদের জেল-জরিমানা করা হবে। সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদন্ড এবং দুই লাখ রিংগিত (বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৪০ লাখ টাকা ) জরিমানা করা হবে।

প্রতারণার শিকার নেত্রকোনার বাকলজোড়া ইউনিয়নের সিংগা গ্রামের নূরুল ইসলাম। তিনি প্রায় চার বছর আগে মালয়েশিয়ায় যান। ছয় মাসেই তিনি অবৈধ হয়ে পড়েন। সিধলী ট্রাভেলস তাকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যায়। এবার বৈধ করে দেওয়ার নামে দুই লাখ টাকা নিয়েছে। কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে সিধলী ট্রাভেলসের অফিসে তালা দেওয়া। তিনি বলেন, অবৈধভাবে যা রোজগার করেছি, বৈধ হওয়ার আশায় সব শেষ।

অভিবাস নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন সাংবাদিক পরিমল পালমা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় একজন শ্রমিক যেতে পথে পথে বিড়ম্বনার শিকার হন। নিয়োগে বড় অনিয়ম। যে ধরনের চাকরির কথা বলা হয়, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর সেই ভালো চাকরি পান না প্রবাসী কর্মীরা। ঘাটে ঘাটে অর্থ খরচ করতে হয়। যাওয়ার পরও দেশে থাকা স্বজনদের ভিটা-মাটি বেচে এজেন্টদের টাকা দিতে হয়। এবার যে বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাতেও প্রবাসী কর্মীরা দালালদের ফাঁদে পড়ছেন। প্রবাসীদের সচেতন করতে আরও সচেতনতা বাড়ানো দরকার।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান যায়যায়দিনকে বলেন, বৈধ হওয়ার জন্য কোনো এজেন্ট বা দালালের দরকার পড়বে না। নিয়োগকারী কোম্পানি অবৈধ কর্মীদের নামসহ সরাসরি ইমিগ্রেশনে আবেদন করতে পারবে। বৈধ হওয়ার সুযোগ পেতে হলে প্রবাসী কর্মীকে প্রমাণ করতে, তিনি সম্পূর্ণ বৈধ উপায়ে মালয়েশিয়ায় এসেছেন। পরবর্তীতে নানা কারণে অবৈধ হয়েছেন। পাসপোর্টে আবেদনকারীর অন্তত ১৮ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে। যেসব প্রবাসীর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ, তাদের পাসপোর্ট নবায়নের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের প্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, অভিবাসন জনিত অপরাধে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন, এমন কর্মীরা এই সুবিধা পাবেন না।

সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের পরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। প্রায় দুই বছর ধরে এই বাজারটি বন্ধ। খুলছে খুলছে বলেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি চালু হয়নি। মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে ৪ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন। আর দেশটিতে অবৈধভাবে আছেন তিন লাখের বেশি বাংলাদেশি। এর আগে ২০১৫ সালে রি-হায়ারিং কর্মসূচিতে মালয়েশিয়া প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশিকে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে