শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
নতুন তত্ত্ব চীনা গবেষকদের

করোনাভাইরাসের উৎপত্তি ভারত-বাংলাদেশে!

যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৯ নভেম্বর ২০২০, ১০:১৩

নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ মহামারির উৎপত্তি নিয়ে নতুন তত্ত্ব হাজির করেছেন চীনের এক দল গবেষক। তাদের ভাষায় চীন নয়, বরং ভারত বা বাংলাদেশ থেকেই এটি ছড়িয়েছে- এমন 'প্রমাণ' রয়েছে বলেও দাবি করেছেন তারা। সম্প্রতি চীনের 'সায়েন্স অ্যাকাডেমি' প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, করোনাভাইরাস উহানে ছড়িয়ে পড়ার আগে ভারত-বাংলাদেশে দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসা-বিষয়ক সাময়িকী 'ল্যানসেট'র একটি প্রি-প্রিন্ট পস্ন্যাটফর্মেও গবেষণাটি প্রকাশ হয়েছে। সংবাদসূত্র : ডেইলি মেইল, সান চীনের ওই গবেষকরা দাবি করেছেন, গত বছর এই অঞ্চলে তীব্র দাবদাহের সময় মানুষ ও বন্যপ্রাণীরা একই উৎস থেকে পানি পানের ফলে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাদের গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের মে থেকে জুন মাসে রেকর্ড দ্বিতীয় দীর্ঘতম দাবদাহে পুড়েছিল উত্তর-মধ্য ভারত এবং পাকিস্তান। ফলে ওই অঞ্চলে ভয়াবহ পানির সংকট সৃষ্টি হয়। চীনা গবেষকদের কথায়, পানির অভাবে বানরের মতো বন্যপ্রাণীরা একে অপরের সঙ্গে ভয়াবহ লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিল এবং অবশ্যই এটি মানুষ-বন্যপ্রাণী সংস্পর্শের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছিল। ওই গবেষক দলটি করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজতে 'ফাইলোজেনেটিক' বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তাদের মতে, সবচেয়ে কম রূপান্তরিত রূপটাই ভাইরাসের আসল রূপ হতে পারে। তাদের ভাষ্য, সব জীবকোষের মতো ভাইরাসও পুনরুৎপাদনের সময় পরিবর্তিত হয়, অর্থাৎ, এটির ডিএনএতে সূক্ষ্ণ পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন থেকে এর উৎস অনুসন্ধান করা যায়। যেখানে ভাইরাসটির কোষে মিউটেশন বা পরিবর্তনের পরিমাণ কম পাওয়া যাবে, সেই স্থানটিই ভাইরাসের উৎস হতে পারে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসটির 'আদি' রূপ উহান থেকে আসেনি। এর বদলে ভারত এবং বাংলাদেশের মতো জায়গাগুলো, যেখানে কম রূপান্তরিত ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে, সেখানেই হতে পারে এর আসল উৎস। ভারত-বাংলাদেশের পাশাপাশি করোনার সম্ভাব্য উৎস হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, সার্বিয়া, ইতালি, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র এবং চেক রিপাবলিকেরও নাম বলেছেন চীনের ওই গবেষকরা। চীনা গবেষকদের দাবি, নভেম্বরে নয়, বরং ২০১৯ সালের জুলাই বা আগস্টে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। তবে চীনা বিজ্ঞানীদের এই দাবির সঙ্গে একমত নন অনেক বিশেষজ্ঞ। যুক্তরাজ্যের গস্নাসগো ইউনিভার্সিটির 'ভাইরাল জিনোমিক্স অ্যান্ড বায়োইনফরম্যাটিকস' বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডেভিড রবার্টসন চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রকে 'খুবই ত্রম্নটিপূর্ণ' বলে উলেস্নখ করেছেন। তিনি বলেন, নূ্যনতম রূপান্তরিত ভাইরাস সিকোয়েন্স শনাক্তকরণে লেখকদের দৃষ্টিভঙ্গি সহজাতভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট। গবেষণার লেখকরা মহামারির বিস্তৃতি সংক্রান্ত উপাত্তগুলো এড়িয়ে গেছেন, যাতে চীনে ভাইরাসের উত্থান এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া স্পষ্ট দেখা যায়। তিনি বলেন, 'করোনাভাইরাস নিয়ে আমাদের যে বোধগম্যতা, এতে এটি নতুন করে কিছুই যুক্ত করেনি।' বিশেষজ্ঞ ডেভিড রবার্টসনের মতে, চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি 'সার্স-কভ-২' সম্পর্কে বোঝার বিষয়ে নতুন কিছুই যোগ করেনি। ল্যানসেট জানিয়েছে, তাদের এই প্রি-প্রিন্ট পস্ন্যাটফর্মে প্রকাশিত প্রতিবেদন কোনো ক্লিনিক্যাল বা জনস্বাস্থ্যের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত নয়। এগুলো প্রাথমিক তথ্য এবং পিয়ার পর্যালোচনা করা হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে