শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ : ফের বাড়ল স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্যের দাম

রেজা মাহমুদ
  ২৪ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ নভেম্বর ২০২০, ০০:১৯

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হতে না হতেই ফের ঊর্র্ধ্বমুখী মাস্কসহ অন্যান্য সুরক্ষা পণ্যের দাম। সোমবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় এসব পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করতে দেখা যায়। দেশে করোনা শনাক্তের শুরুর দিকে সুরক্ষাসামগ্রীর ঘাটতি থাকায় দাম বেশি ছিল। এখন সেই ঘাটতি নেই। তবুও হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই এসব পণ্যের বাজার চড়া। সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আগের দামেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি হলেও সরবরাহ কম বলে জানিয়েছেন দোকানিরা। এছাড়াও বাড়তি দামের আশায় অনেকেই এসব পণ্য মজুত করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের। সোমবার রাজধানীর শ্যামলী, আসাদ গেট, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে মিলেছে এসব অভিযোগের সত্যতা। অনেক ফার্মেসিতেই পাওয়া যাচ্ছে না ফেস মাস্ক, জীবাণুনাশক স্প্রে ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আবার পাওয়া গেলেও চাওয়া হচ্ছে বাড়তি দাম। বিশেষ করে ফেস মাস্কের দাম বেশ চড়া। মাস্ক প্রতি প্যাকেটে বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ৫০ পিসের দেশীয় মাস্কের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা আর চায়না ফেস মাস্ক প্রতি প্যাকেট ১৭০ থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম না বাড়লেও অনেক ফার্মেসিতেই পণ্যটির পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই বলে জানিয়েছেন দোকানিরা। শ্যামলী রিং রোডের 'মাইসা কেয়ার' ফার্মেসির বিক্রেতা শাহনেওয়াজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে করোনা সংক্রমণ কম থাকায় সুরক্ষা পণ্যের ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বেচাবিক্রি কম থাকায় ফেস মাস্ক ও অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রীর অর্ডারও কম ছিল। কিন্তু এই শীতে করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদানুযায়ী সরবরাহ না পাওয়ায় এখন দাম কিছুটা বেড়েছে। তিনি জানান, এপ্রিল-মে মাসে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর উৎপাদন সক্ষমতা কম থাকায় দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ কম ছিল। কিন্তু এখন কেন বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ কম- সে ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না। এদিকে, এসব পণ্যের ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সুযোগ \হনিয়ে বরাবরের মতো বাড়তি মুনাফার লোভে ফের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আসাদ গেটে মাস্ক কিনতে আসা আল-আমিন জানিয়েছেন, নুরজাহান রোডের ফার্মেসিগুলোতে মাস্ক না পেয়ে তিনি এখানে এসেছেন। তবে ৫ টাকার মাস্ক কিনেছেন ১৫ টাকায় আর ১২০ টাকার স্যানিটাইজার কিনেছেন ১৪০ টাকায়। শীতে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এমন আশংকার প্রমাণও ইতোমধ্যে মিলতে শুরু করেছে। গত শুক্রবার ভাইরাসটির সংক্রমণ ছিল গত ৭৮ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। মৃতু্যর হারও বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। সর্বশেষ রোববার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৮ জন। আর শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ শতাংশে। ঠিক এই অবস্থায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংক্রামণ পরিস্থিতি অবনতি নিয়ে শংকিত বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ মানুষ এমনিতেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না, তার ওপর এসব সামগ্রীর বাজার মূল্য বৃদ্ধি পেলে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যবহার কমে যাবে। ফলে সংক্রমণ হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই এখনই এসব পণ্যের বাজার পর্যবেক্ষণে মনিটরিং ও অভিযান জোরদার করা দরকার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'নো মাস্ক নো সার্ভিস' ও 'নো মাস্ক নো এন্ট্রি' এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। মাস্ক না পরায় বিভিন্ন স্থানে জরিমানাও করা হচ্ছে। কিন্তু এসব স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখনো সেই রকম অভিযান চোখে পড়েনি। এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে সামনে পরিস্থিতি কঠিন হবে। এদিকে বাজার পরিস্থিতি ঠিক রাখতে শিগগিরই আবার অভিযানের নামার কথা জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে