শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
চাকরি গেল ১০

পুলিশের মাদক গ্রহণে এগিয়ে কনস্টেবলরা

ডিএমপিতে এ পর্যন্ত ৬৮ জনের মাদক গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের মধ্যে ৫০ জন রয়েছেন মাঠপর্যায়ের। এরপর রয়েছে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদের কর্মকর্তারা। সবচেয়ে কম মাদক গ্রহণের প্রবণতা দেখা গেছে সার্জেন্টদের
ম তানভীর হাসান
  ২৩ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৩ নভেম্বর ২০২০, ০০:৫৭

ডোপ টেস্টে মাদক গ্রহণের প্রমাণ পাওয়ার পর ১০ পুলিশ সদস্যকে চাকরিচু্যত করা হয়েছে। তারা সবাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত ছিলেন। একই পরীক্ষার ফলাফলে মাদক গ্রহণের প্রবণতায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন কনস্টেবলরা। ডিএমপিতে এ পর্যন্ত ৬৮ জনের মাদক গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের মধ্যে ৫০ জন রয়েছেন মাঠপর্যায়ের। এরপর রয়েছে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদের কর্মকর্তারা। সবচেয়ে কম মাদক গ্রহণের প্রবণতা দেখা গেছে সার্জেন্টদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাজের ধরন ও পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের মাঝে মাদক গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনারের উদ্যোগে বিভিন্ন ইউনিটে ডোপ টেস্টের উদ্যোগ নেওয়ার পর এমন চিত্র উঠে এসেছে। ডিএমপি পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম গত বছরের সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের পর পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে তা কার্যকর করা হলে ৬৮ জন পুলিশ সদস্যের মাদক গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি এসআই রয়েছেন সাতজন। এর বাইরে এএসআই পাঁচজন, নায়েক পাঁচজন এবং কনস্টেবল ৫০ জন। সবচেয়ে মাদক গ্রহণের প্রবণতা কম লক্ষ্য করা গেছে সার্জেন্টদের মাঝে। মাত্র একজন সার্জেন্টের ডোপ টেস্টে মাদক গ্রহণের প্রমাণ মিলেছে। ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ডোপ টেস্টে মাদক গ্রহণের প্রমাণ মেলা ৬৮ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে বরখাস্তের চূড়ান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। বরখাস্তের সাময়িক আদেশ জারি করা হয়েছে আরও ১৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মাদকসেবনকারী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। বিভাগী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ২৫ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে। এসব পুলিশ সদস্যের মধ্যে অধিকাংশই ডিএমপির বিভিন্ন থানায় কর্তব্যরত ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক গ্রহণের বিষয়টি অনেকাংশেই নির্ভর করে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর। দীর্ঘ ডিউটিতে অনেক সময়ই তারা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ থেকে তাদের মধ্যে মাদক গ্রহণের প্রবণতা তৈরি হতে পারে। আবার তাদের কাছে বড় একটি অংশজুড়েই রয়েছে অপরাধীরা। তাদের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে নিজের অবচেতনেই মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। তবে সার্জেন্টরা সাধারণত সড়কে যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে কাজ করে থাকেন। অপরাধীদের নিয়ে তাদের খুব বেশি কাজ করার প্রয়োজন হয় না। তাদের কর্মপরিবেশ এবং জীবন ধারাতেও ক্রাইমের কাজ করা পুলিশের চেয়ে ভিন্ন। এসব কারণে তাদের মধ্যে মাদক গ্রহণের প্রবণতা কম হতে পারে। মাদক নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ নথিভুক্ত করে তদন্ত করছে ডিএমপি। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে মাদক বিক্রি, সেবন, মাদক দিয়ে ফাঁসানো এবং উদ্ধার হওয়া মাদকের তুলনায় কম দেখিয়ে অর্থ গ্রহণের মতো ভয়ঙ্কর অভিযোগও রয়েছে ২৯ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ছয়জন পুলিশ সদস্যকে সাজা প্রদান করা হয়েছে। ডিএমপির হিসাব মতে, মাদক বিক্রির অপরাধে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ১০। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান থাকায় এখনো কাউকে সাজা দেওয়া সম্ভব হয়নি। মাদকসেবনের অভিযোগ রয়েছে পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে তদন্ত শেষে একজনকে চাকরিচু্যত করা হয়েছে। বাকি চারজনের বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। মাদক দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে ১০ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে ইতোমধ্যেই তদন্ত শেষে সাজা প্রদান করা হয়েছে। বাকি পাঁচজনের মাদক দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁসানোর অভিযোগের তদন্ত চলছে। উদ্ধার করা মাদক কম দেখিয়ে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে চারজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। তদন্ত শেষ না হওয়ায় তাদের মধ্যে কারও সাজা নিশ্চিত করা যায়নি। ডিএমপির মুখপাত্র পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, সরকারের মাদকের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে ডিএমপিতে পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্টের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। মাদকের ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলি। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে সাজা প্রদান করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে