শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
'গোল্ডেন মনির' আটক

দোকান কর্মচারী থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার মালিক

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২২ নভেম্বর ২০২০, ০৬:৫৯
শনিবার রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় অভিযান চালিয়ে মনিরকে আটক করের্ যাব -যাযাদি

১৯৯০-এর দশকে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানে সেলসম্যানের কাজ করতেন মনিরুল ইসলাম ওরফে গোল্ডেন মনির। বছর দুয়েক পর লাগেজ ব্যবসার সূত্র ধরে একপর্যায়ে জড়িয়ে পড়েন স্বর্ণ চোরাকারবারে। এ সময় বায়তুল মোকাররমে একটি জুয়েলারি দোকান দেন, যা তার এই চোরাকারবারি কাজে সাহায্য করে। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অবৈধভাবে স্বর্ণ চোরাচালান, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভূমি দখল করে এখন তিনি দুই শতাধিক পস্নট ও হাজার কোটি টাকার মালিক। শুক্রবার শেষ রাত থেকে শনিবার বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত মনিরের মেরুল বাড্ডার ১৩ নম্বর রোডের ৪১ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তল, কয়েক রাউন্ড গুলি, ৬০০ ভরি স্বর্ণ, ১০টি দেশের মুদ্রা ও এক কোটি নয় লাখ টাকাসহ আটক করের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব)। অভিযান শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় এক ব্রিফিংয়ের্ যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিলস্নাহ জানান, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার শেষ রাত থেকে মেরুল বাড্ডায় গোল্ডেন মনিরের বাসায় অভিযান চালায়র্ যাব। গোল্ডেন মনির একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী, স্বর্ণ চোরা চালানকারী ও জমির দালাল উলেস্নখ করে তিনি বলেন, তার বাড়ি থেকে অনুমোদনহীন দুটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে, যার প্রতিটির মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। এছাড়া, তার গাড়ির শোরুম অটো কার সিলেকশন থেকে আরও তিনটি অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। 'ভূমিদসু্য' গোল্ডেন মনির রাজউকের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে বিপুলসংখ্যক বাড়ি ও পস্নট হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বাড্ডা ডিআইটি প্রজেক্ট, নিকুঞ্জ, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক পস্নট ও বাড়ি রয়েছে বলের্ যাবের কাছে তথ্য রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনির ৩০টি স্থানে পস্নট ও বাড়ির কথা স্বীকার করেছেন। র্ যাব সূত্র জানায়, গোল্ডেন মনিরের মোট সম্পত্তির পরিমাণ এক হাজার ৫০ কোটি টাকারও বেশি। তার বিরুদ্ধে আরও বেশকিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্য তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে তদন্ত করতে সিআইডি, অনুমোদনহীন গাড়ির জন্য বিআরটিএ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করবের্ যাব, জানান তিনি। এছাড়া বাসা থেকে অস্ত্র, মাদক ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধারের ঘটনায় গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায়র্ যাব পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। র?্যাবের মুখপাত্র আশিক বিলস্নাহ আরও বলেন, রাজউকের ৭০টি ফ্ল্যাটের নথি নিয়ে গিয়ে আইনবহির্ভূতভাবে হেফাজতে রাখায় ২০১৯ সালে মনিরের বিরুদ্ধে রাজউক কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করে। সেটি চলমান রয়েছে। এছাড়া অনৈতিকভাবে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বিপুল সম্পদ অর্জন করায় তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলছে। র্ যাব এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভূমি জালিয়াতি সম্পর্কে মনির বলেছেন, ২০০১ সালে তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী, গণপূর্ত কর্মকর্তা ও রাজউকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক করে তিনি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভূমি জালিয়াতি শুরু করেন। র্ যাব সূত্র জানায়, মনির হোসেনকে অবৈধ কাজে কারা সহায়তা করেছেন, সে তথ্যগুলো অনুসন্ধানে তারা দুদক, বিআরটিএ, সিআইডি ও এনবিআরকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাবেন। মনিরের কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে আশিক বিলস্নাহ বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। সেই দলটির অর্থ জোগানদাতা হিসেবেও তিনি কাজ করেন। তবে দলের নাম উলেস্নখ করেননি আশিক বিলস্নাহ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে