শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তালগোলে এসএসসির প্রস্তুতি!

সাখাওয়াত হোসেন
  ২৮ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
একটি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা -ফাইল ছবি

আগামী বছর (২০২১ সাল) এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে জানিয়ে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে পরীক্ষা পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করা হবে কি না, না কি সময় বাড়িয়ে পূর্ণ সিলেবাসেই পরীক্ষা নেওয়া হবে- সে সম্পর্কে এখনো কিছুই জানা যায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও (এনসিটিবি) এ বিষয়টি নিয়ে 'পরিকল্পনা' তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

ফলে আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার ধরন ও প্রশ্নমান কেমন হবে, সর্বমোট কত নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে, সেসব বিষয় নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এখনো পুরোপুরি অন্ধকারে। অথচ স্বাভাবিক সময়ানুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র তিন মাস বাকি। আসন্ন শীতে সেকেন্ড ওয়েভ শুরু না হলেও করোনার চলমান মাঝারি সংক্রমণে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল খোলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে ফেব্রম্নয়ারিতে পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীরা মাত্র এক মাস নিয়মিত ক্লাস করার সুযোগ পাবে। আর পরীক্ষা আরও দুই মাস পিছিয়ে এপ্রিলে নেওয়া হলে ৩ মাস ক্লাস করতে পারবে। অথচ এ স্বল্প সময়ে এসএসসি পরীক্ষার পুরো সিলেবাস শেষ করা একেবারেই অসম্ভব। আবার শেষ সময়ে এসে তাড়াহুড়া করে পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করা হলেও তা পরীক্ষার্থীদের কোনো উপকারে আসবে না।

শিক্ষাবিদদের পরামর্শ, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাস এখনই সংক্ষিপ্ত করে তা শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া দরকার। তাতে তারা কিছুটা হলেও প্রস্তুতি নিতে পারবে। এছাড়া প্রশ্নমান ও ধরন কেমন হবে, সর্বমোট কত নম্বরে পরীক্ষা হবে তা স্পষ্ট করাও জরুরি। তা না হলে পুরো প্রক্রিয়াতেই তালগোল পাকিয়ে যাবে।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহর এবং গ্রামাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরও একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। তাদের ভাষ্য, সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে প্রশ্নের ধরন-মানসহ পরিবর্তিত সব বিষয় তাদের আগেভাগে জানিয়ে দেওয়া হলে তারা যতটা সম্ভব প্রস্তুতি নিতে পারবে। তা না হলে পরীক্ষার আগ মুহূর্তে পাঠ্যসূচি কমানো হলে তাদের ওপর কোনোরকম চাপ তো কমবেই না, বরং তাতে আরও তালগোল পাকিয়ে যাবে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানালেও তাদের আগাম প্রস্তুতি যে এখনো এলোমেলো পর্যায়ে রয়েছে, তা এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া গেছে।

এনসিটিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, করোনা পরিস্থিতির দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় তারা বেশ আগেই এসএসসির সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করার সুপারিশ করেন। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে শিক্ষার্থীদের ৩ মাস সময় দেওয়া হলে সিলেবাসের কোন অংশটুকু পড়ানো হবে এবং ২ মাস সময়ে পেলে কতটুকু অংশ বাতিল করে গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়গুলো পড়ানো যেতে পারে তার খসড়া তৈরি করা দরকার বলে সুপারিশে জানানো হয়। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়টিতে তখন কোনো গুরুত্ব দেয়নি। যদিও সম্প্রতি এ বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করা হয়েছে। দ্রম্নত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষার দুই বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে কাজ চলছে। প্রথমটি সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে এপ্রিলের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করা, অন্যটি দুই মাস সময় বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত টেনে নেওয়া। তবে প্রথমটির পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের বেশির ভাগ কর্মকর্তার সায় রয়েছে।

অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রস্তাবে আপত্তি না থাকলেও এতে নানা সংকট তৈরি হতে পারে বলে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাদের ভাষ্য, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় বাসায় থেকে শিক্ষার্থীরা এমনিতে 'ট্রমা'র (মানসিক আঘাত) মধ্যে আছে। এর মধ্যে দীর্ঘ সময় পিছিয়ে পুরো সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হলে তা শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের মানসিক চাপে ফেলতে পারে। তাই সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে সীমিত আকারে মূল্যায়ন বা পরীক্ষার ব্যবস্থা করার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদরা বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের এখনো প্রি-টেস্ট ও টেস্ট কোনো পরীক্ষাই নেওয়া সম্ভব হয়নি, অন্যদিকে বছরের শুরুতে তারা বেশি দিন ক্লাস করতে পারেনি। তাই এখন পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্তকরণের পাশাপাশি পরীক্ষার সময় কিছুটা বাড়িয়ে তাদের মেধা যাচাই করে নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা জরুরি। কেননা পূর্ণ পাঠ্যসূচিতে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সময় বেশি বাড়ানো হলে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে তাল মেলাতে যেমন সমস্যা হবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের ওপর অনেক বেশি চাপ পড়বে, যা এ পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই ঠিক হবে না বলে মনে করেন তারা।

নিয়মানুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার মাত্র তিন মাস সময় বাকি থাকলেও এখনো সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কিছু না জানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক যায়যায়দিনকে বলেন, 'আমার মনে হয় সরকার এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কারণ তিন মাস পর করোনা পরিস্থিতি কী রূপ নেবে, তার ওপর পরীক্ষা নেওয়ার বাস্তব অবস্থা নির্ভর করবে। তাই বিষয়টি নিয়ে হয়তো সরকার এখনো অনিশ্চয়তায় রয়েছে। যদি এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তা দ্রম্নত চূড়ান্ত করে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া উচিত।' আর পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করা না হলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগে বেশ কিছুটা সময় দেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই প্রবীণ শিক্ষাবিদ।

এ ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা হবে বলে সাফ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি প্রস্তুতি নিতে বলেন। তাই পরীক্ষা হবে না এটা বলার কোনো অবকাশ নেই। তবে কীভাবে হবে, সিলেবাস কমবে কি না, সেগুলো নিয়ে এনসিটিবি একটি কমিটি কাজ করছে। খুব শিগগিরই ওই কমিটি প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেবে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্ত্তী যায়যায়দিনকে বলেন, পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। করোনা-পরবর্তী পাবলিক পরীক্ষাগুলো বিশেষ করে এসএসসি ও এইচএসসি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। তারা পরীক্ষার নম্বর কাঠামো, সিলেবাস কমানো বা ঠিক রাখা, প্রশ্নের মান বণ্টনসহ অন্য বিষয়গুলোতে সুপারিশ করবে। এরপর বাস্তবসম্মত একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তা অবশ্যই পরীক্ষার আগে জানানো হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116924 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1