চলে গেলেন আইনাঙ্গনের বাতিঘর রফিক-উল হক

বনানী কবরস্থানে দাফন

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক জন্ম :১৯৩৫-মৃতু্য : ২০২০
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সর্বজনীন মুরুব্বি আইনাঙ্গনের বাতিঘর ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। স্ত্রী ফরিদা হকের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে তাকে। এর আগে দীর্ঘ ৬০ বছরেরও বেশি সময়ের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সামনের প্রাঙ্গণে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে রফিক-উল হকের কফিনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। এছাড়া বর্ষীয়ান এই আইনজীবীর মরদেহে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল রিপোর্টার্স ফোরাম, আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। সুপ্রিম কোর্টে তার তৃতীয় ও সর্বশেষ জানাজায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। ঢাকার আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে মারা যান ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতালসংলগ্ন মসজিদে ব্যারিস্টার রফিকের প্রথম জানাজার পর মরদেহ পল্টনের বাড়িতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। বাদ জোহর সেখানে দ্বিতীয় জানাজার পর মরদেহ নেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। ফুসফুসের সংক্রমণসহ নানা জটিলতায় গত ১৫ অক্টোবর থেকে ঢাকার আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। এর মধ্যে তার স্ট্রোকও হয়েছিল। গত ১৭ অক্টোবর থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। এদিকে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃতু্যতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনসহ বিশিষ্টজনেরা এই বর্ষীয়ান আইনজীবীর মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রফিক-উল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে। বাবা মুমিন-উল হক ছিলেন চিকিৎসক। তার ছোটবেলা কেটেছে কলকাতায়। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ১৯৫১ সালে। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৫৮ সালে এলএলবি করেন। এরপর ১৯৬০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন তিনি। ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে তৎকালীন পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৬২ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৫ সালে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এছাড়া রফিক-উল হক ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ট্রাইবু্যনাল ও বার কাউন্সিল ইলেকশন ট্রাইবু্যনালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয় তাকে। তখনই তিনি পদাধিকারবলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন। এ সময় তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও প্রতিনিধিত্ব করেন। ব্যারিস্টার রফিক বিভিন্ন সময় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সমাজ ও মানবতার সেবায় সবসময় নিবেদিত ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। সুযোগ পেলেই মানব কল্যাণে সম্পৃক্ত হয়েছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুবর্ণ ক্লিনিক। ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা ছিল তার। আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ২৫টিরও বেশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন। সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে একইসঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। রাজনীতিবিদদের কাছে তিনি 'সর্বগ্রহণযোগ্য মুরুব্বি' হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অনেক রাজনীতিবিদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই করে আলোচনায় ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক।