ফেনীতে ধর্ষণবিরোধী লংমার্চে হামলা

২১ অক্টোবর রাজপথ অবরোধ

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী ও ফেনী প্রতিনিধি
ফেনীতে শনিবার সকালে ধর্ষণবিরোধী লংমার্চের কর্মীদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা -যাযাদি
ফেনীতে সকালে হামলার শিকার হওয়ার পর শনিবার বিকালে নোয়াখালীতে সমাপনী সমাবেশের মধ্য দিয়ে আপাতত ইতি হলো ধর্ষণবিরোধী লংমার্চের। পাহাড়-সমতলে অব্যাহত ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবিতে ঢাকা থেকে নোয়াখালী অভিমুখী দুই দিনের এ লংমার্চ করেছে 'ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ'। সমাপনী সমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ১৯ অক্টোবর সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ২১ অক্টোবর সারাদেশে রাজপথ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে শনিবার সকালে ফেনীতে ধর্ষণবিরোধী লংমার্চে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমাদের ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ শেষে লংমার্চকারীরা শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় শহরের কুমিলস্না বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাদের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। লংমার্চকারীরা জানান, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সমাবেশ ও প্রচারাভিযান করে ফেনী জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় লংমার্চ \হকুমিলস্না বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছলে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী লাঠিসোঠা নিয়ে হামলা করে। এ সময় লংমার্চকারীদের মধ্যে হৃদয়, শাহাদাত, অনিক, জাওয়াদ ও পথচারীসহ ১০ জন আহত হন। তাদের দাবি, সমাবেশে সরকার ও ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়ায় ক্ষমতাসীনরা ক্ষিপ্ত হয়ে লংমার্চকারীদের ওপর পুলিশি পাহারায় হামলা করেছে। এর আগে শহরের শহীদ মিনারের পাশে দোয়েল চত্বরে সমাবেশ চলাকালে স্থানীয় সংসদের ছবির উপর লাল রং লাগিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য লেখাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে লংমার্চকারীদের বাগবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এদিকে দাগনভূঞাতেও লংমার্চ সমর্থকদের ওপরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। সেখানেও ৫/৭ জন আহত হন। আহতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে দুপুর পৌনে ১টার দিকে পুলিশের পাহারায় লংমার্চ দাগনভূঞা অতিক্রম করে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে চলে যায়। নোয়াখালী পৌঁছানোর পর শনিবার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাপনী সমাবেশ করে লংমার্চকারীরা। সমাবেশ থেকে তারা অভিযোগ করেন, সরকার ধর্ষকদের লালন করছে এবং ধর্ষকদের লালন-পালনকারীদের বিচার দাবি করা হয়। এ সময় বক্তারা অভিযোগ করেন, ফেনীতে শান্তিপূর্ণ লংমার্চে পুলিশ ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। হামলা ও ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না উলেস্নখ করে বক্তারা বলেন, এ দেশের তরুণরা লড়াই করে যাবে। ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। সমাবেশে বক্তারা ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তারা লংমার্চে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর নোয়াখালী জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মোলস্না হাবিবুর রাছুল মামুনের সভাপতিত্বে ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নোয়াখালীর সাধারণ সম্পাদক রবিউল পলাশের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবির) প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্ণী চক্রবর্তী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ইনচার্জ নিখিল দাস, যুব ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক কবি হাবীব ইমন, বাংলাদেশ নারী মুক্তির সংগঠক সীমা দত্ত, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) সভাপতি মাসুদ রানা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশ সভাপতি আল কাদরী জয়, ছাত্র ফেডারেশনের সংগঠক গোলাম মোস্তফা প্রমুখ। উলেস্নখ্য, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী গণজাগরণ তৈরির লক্ষ্যে শুক্রবার শাহবাগ থেকে নোয়াখালীর পথে এই লংমার্চ শুরু করে 'ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ'। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিলস্নার বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ ও পথসভা করতে করতে ঢাকা থেকে শুরু হওয়া লংমার্চ নোয়াখালী গিয়ে শেষ হয়।