সিলেটে গণধর্ষণের মামলায় সাইফুর-অর্জুন গ্রেপ্তার

দ্বিতীয় দিনেও নগরী উত্তপ্ত

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

কাইয়ুম উলস্নাস, সিলেট
সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ মামলার আসামি সাইফুর রহমান (বাঁয়ে) ও অর্জুন লস্করকে রোববার গ্রেপ্তার করে পুলিশ -যাযাদি
এমসি কলেজে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতোও উত্তপ্ত ছিল শাহজালাল ও শাহপরাণের পুণ্যভূমিখ্যাত সিলেট। এই ঘটনার প্রতিবাদে সিলেটের সর্বস্তরের নাগরিকগণ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন। তারা ঘটনার বিচারের পাশাপাশি তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এদিকে ছাত্রলীগের দুই কর্মী সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাইফুর এ মামলার প্রধান আসামি আর অর্জুন ৪ নম্বর আসামি। গত শনিবার সকালে তাদের দুজনকে ছাতক ও হবিগঞ্জে পৃথক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি আসামি গ্রেপ্তারে সিলেটজুড়েই চলছে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান। অন্যদিকে ঘটনার শিকার ওই গৃহবধূ গতকাল দুপুরে সিলেটের মহানগর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৩য় শারমিন আক্তার নীলার আদালতে ২২ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি দেন। এ সময় তিনি সেদিন রাতের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন। এ ঘটনায় সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে এসএমপি কমিশনারের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। রোববার দুপুর ১টার দিকে নগরীর শাহজালাল উপশহরস্থ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কাউন্সিলরবৃন্দ। এ সময় দোষীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ জোর তৎপরতা চালানো এবং ভিকটিমকে আইনি সব সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রম্নতি প্রদান করেন সিলেটে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও পুলিশের উপস্থিত কর্মকর্তাবৃন্দ। যেভাবে দুই ধর্ষক গ্রেপ্তার : গণধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, পুলিশ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করে। রোববার সকালে ছাতক খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ছাতক থানার এসআই হাবিবুর রহমান পিপিএম-এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার এড়াতে ছদ্মবেশ ধরেছিলেন সাইফুর। সিলেটের বালাগঞ্জের চান্দাইপাড়া গ্রামের তাহিদ মিয়ার ছেলে সাইফুর তরুণী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি। এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে তিনি মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন। অন্যদিকে মামলার চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার ভোরে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মাধবপুর থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম দস্তগির। এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, উপজেলার সীমান্তবর্তী মনতলা এলাকার দুর্লভপুর গ্রাম থেকে সিলেটের একদল ডিবি পুলিশ অর্জুনকে গ্রেপ্তার করে। এরপরই তাকে সিলেট নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উলেস্নখসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করে শনিবার সকালে নগরীর শাহপরাণ থানায় মামলা করেছিলেন ভুক্তভোগী তরুণীর স্বামী। মামলার আসামিরা হলেন- এম সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। এদের মধ্যে চারজন ওই কলেজের শিক্ষার্থী। এছাড়া আরও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। আসামিরা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য সিলেট সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশের একাধিক টহল টিম সীমান্তে নজরদারি রাখছে। আদালতে জবানবন্দি : সেই রাতে কী ঘটেছিল, আদালতকে জানালেন ধর্ষিতা তরুণী। রোববার দুপুরে সিলেট মহানগর হাকিম ৩য় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নিলার কাছে তার জবানববন্দি দেন। সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দুপুরে পুলিশ আক্রান্ত তরুণীকে ওসমানী হাসপাতাল থেকে আদালতে নিয়ে আসে। দেড়টার দিকে তিনি আদালতে ওই রাতের ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। আদালতে তার জবানববন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কোর্ট সূত্র জানিয়েছে, জবানবন্দিতে তরুণী জানিয়েছেন, অস্ত্রের মুখে তার স্বামীকে জিম্মি করে ধর্ষণ করা হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত কমিটি : গৃহবধূকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে সিলেটে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কলেজের ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে ছাত্রাবাসের হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিনকে। অথচ মূলত তার আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের কয়েকটি বস্নক দখল করে রাখে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। এদিকে নিরাপত্তা পালনে গাফিলতির অভিযোগে শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ছাত্রাবাসের দুই নিরাপত্তা কর্মীকে বরখাস্ত করা হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা ন্যক্কারজনক। এই ঘটনায় আমরাও হতবাক। হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিনকে কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে কারণ তিনি এই ছাত্রাবাসের অনেক পুরাতন হোস্টেল সুপার। তার অনেক বিষয় জানা রয়েছে। অতীতে কী হয়েছে আর বর্তমানে কীভাবে কী ঘটনা ঘটেছে তা জানার জন্য তাকে রাখা হয়েছে। অন্য কোনো কারণ নেই। প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিকালে এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়েছিলেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার এক দম্পতি। ছাত্রলীগের ৫/৬ জন নেতাকর্মী তাদের ধরে ছাত্রাবাসে নিয়ে আসে। সেখানে দুজনকেই মারধর করে তারা। পরে স্বামীকে বেঁধে রেখে তার সামনেই স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়।