নিয়োগ-বদলি বাণিজ্যে মালেকের উত্থান!

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গ্রেপ্তার হওয়া গাড়িচালক আবদুল মালেক ওরফে বাদল হাজি স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিয়োগ-বদলিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতেন। আর এ কারণেই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও আজ কোটিপতি! স্বাস্থ্যের ২০০৯ সালের মহাপরিচালকের (সাবেক ডিজি) আমলেই অধিদপ্তরজুড়ে বেপরোয়া সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন মালেক ড্রাইভার। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ-বদলি বাণিজ্যের পাশাপাশি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নিয়োগ-বদলিতেও বেশ প্রভাব ছিল তার। মালেকের সিন্ডিকেটে অধিদপ্তরের অফিস সহকারীসহ একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তাও যুক্ত ছিলেন। তাদের ব্যবহার করেই অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে নিজের স্বার্থ হাসিল করতেন আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া মালেক। এর মধ্যে কোনো কর্মকর্তা ঘুষ নিতে না চাইলে কিংবা অসৎ কাজে জড়িত হতে না চাইলে তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করত মালেক সিন্ডিকেট। ২০০৯-১০ সালে উপজেলাপর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারী পদে উলেস্নখযোগ্য শতাধিক লোক নিয়োগে সরাসরি বাণিজ্য করেন মালেক ড্রাইভার। এই সময়ই বেশ কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এরপর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যান্য নিয়োগ-বদলি কিংবা পদোন্নতি বাণিজ্যের মাধ্যমে অল্পদিনেই বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক বনে যান এই গাড়িচালক। শুধু তাই নয়, অধিদপ্তরের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পেনশনের টাকার একটি অংশ মালেককে দিতে হতো। নয়তো পেনশনের টাকা তুলতে ভোগান্তি পোহাতে হতো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, মালেকের সিন্ডিকেটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, একজন প্রধান সহকারী, দুজন অফিস সহকারী মিলে ছয়জন। ২০০৯ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত (দুই বছরে) সারাদেশে বিভিন্ন উপজেলায় স্বাস্থ্য সহকারী পদে শতাধিক লোককে নিয়োগ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মালেক। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্বপর্যায়ের লোকজনের সঙ্গেও তার সখ্য রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মালেকের অপকর্মে অধিদপ্তরের যেসব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সম্মতি দিতেন না, তাদেরই নাজেহাল করা হতো। এমনকি ভুঁইফোড় ও নামসর্বস্ব কিছু সাংবাদিককে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া প্রতিবেদন করাতেন। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এটি মালেকের অন্যতম টেকনিক। গত ২০ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন দক্ষিণ কামারপাড়া বামনার টেকের ৪২ নম্বর হাজি কমপেস্নক্স ভবন থেকে অস্ত্র-গুলি ও জালনোটসহ আবদুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেককে (৬৩) গ্রেপ্তার করের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব)-১। ওই বাসায় মালেকের শোয়ার ঘর থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, এক লাখ ৫০ হাজার টাকার জালনোট, একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল ফোন জব্দ করের্ যাব। পরদিনর্ যাব বাদী হয়ে তুরাগ থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। এরপর সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) গ্রেপ্তার মালেককে আদালতে উপস্থাপন করলে দুটি মামলায় সাত দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। গ্রেপ্তার আবদুল মালেক তার কর্মজীবনে অধিদপ্তরের সাবেক বেশ কয়েকজন মহাপরিচালকের (ডিজি) গাড়িচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মালেক সর্বশেষ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেনের গাড়িচালক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তবে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তারের পর মালেকের অবৈধ অর্থ-সম্পত্তির তথ্য বেরিয়ে আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মালেক জানান, তার যেসব সম্পদ রয়েছে, সেগুলো রক্ষার্থে এবং নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে উদ্ধার হওয়া অবৈধ অস্ত্রটি নিজে হেফাজতে রেখেছিলেন। আর জাল টাকার বিষয়ে তিনি জানান, তার বিভিন্ন কারবারে অনেক টাকা লেনদেন করতে হয়, সেজন্য তিনি জব্দ করা জালনোটগুলো কাছে রেখেছিলেন। অবৈধ কর্মকান্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ এবং বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি টাকা গচ্ছিত রেখেছেন মালেক। বিদেশে অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ড্রাইভার মালেককে তিন তিনবার চিঠি দিয়ে তলব করেছিল। এ বিষয়ের্ যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিক বিলস্নাহ গণমাধ্যমকে বলেন, মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। ফৌজদারি আইন লঙ্ঘনের কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মালেকের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের বিস্তর ফারাক রয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি, গ্রেপ্তার মালেকের বিষয়ে দুদক, সিআইডি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রয়োজন বোধে যদি কোনো সহযোগিতা চায়, তবের্ যাব তাদের সহযোগিতা করতে বদ্ধপরিকর।