গ্রেপ্তার আটক মুক্তি, ভিপি নুরকে নিয়ে ধোঁয়াশা

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
নুরুল হক নুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে আটকের দেড় ঘন্টার মাথায় পুলিশ হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়েছে। ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের একটি মামলার প্রতিবাদে শাহবাগে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে সোমবার রাতে নুরসহ তার ৭ সহযোগিকে আটক করা হয়। এর আগে বিক্ষোভ সমাবেশ নিয়ে পুলিশ ও ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতাকর্মীরা পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয়। এসময় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে তাদেরকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে নুরসহ তার তিন সহযোগিকে চিকিৎসার জন্য পুলিশ প্রহরায় ঢামেকে পাঠানো হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। অবশ্য এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ১০টা) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের ডিসি ওয়ালিদ হোসাইন যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন, নুরসহ তার সহযোগিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশের স্ক্রলে বলা হচ্ছিল, মুচলেকা নিয়ে নুরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে অনলাইন নিউজপোর্টাল জাগো নিউজসহ কয়েকটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে তাকে গ্রেপ্তার ও ছেড়ে দেওয়ার একাধিক রিপোর্ট রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দেখা গেছে। এর আগে ধর্ষককে সহযোগিতার অভিযোগে গত রোববার ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নামে মামলা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। গত ৩ জানুয়ারির ঘটনায় রোববার রাতে রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলাটি করা হয়। মামলায় ৬ আসামির মধ্যে ৫ জনই ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। আসামিরা হচ্ছেন-হাসান আল মামুন, নাজমুল হাসান সোহাগ, মো. নুরুল হক নুরু, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. নাজমুল হুদা ও মো. আব্দুলস্নাহিল বাকী। এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের ডিসি ওয়ালিদ হোসাইন যায়যায়দিনকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের সঙ্গে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রীর দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘদিন ধরেই ওই ছাত্রী লালবাগ থানাধীন ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১০৪ নম্বর বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। একপর্যায়ে তাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়। তখন মামুনকে বিয়ে করার জন্য মেয়েটি অনুরোধ জানালে মামুন বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে বাদী মামুনের নামে ধর্ষণের মামলা করেছেন। বাকি সদস্যদের সহযোগী হিসেবে মামলায় উলেস্নখ করেছেন। মামলার এজাহারে ওই ছাত্রী উলেস্নখ করেছেন, মামলার প্রধান আসামি মামুন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ৭ম ব্যাচের ছাত্র। ভুক্তভোগী নারীও একই বিভাগের ছাত্রী। মামুনের সঙ্গে ওই ছাত্রীর প্রথম পরিচয় হয় ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই। ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক হওয়ার সুবাদে মামুনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে ইমু, ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যেমে কথাবার্তা হতো। সেখানে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেওয়া হতো। গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে মামুন লালবাগের নবাবগঞ্জ এলাকার ১০৪ নম্বর বাসায় যেতে বলে ওই ছাত্রীকে। সেখানে যাওয়ার পর মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। ঘটনার পরের দিন ছাত্রীটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর ১২ জানুয়ারি মামুনের বন্ধু ২ নম্বর আসামি নাজমুল হাসান সোহাগের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ সময় হাসপাতাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে মামুনের নির্দেশে সোহাগ তা সফল হতে দেয়নি। বরং হাসপাতালে যাতে অবস্থান করতে না পারে এজন্য তারা নানা অপচেষ্টা চালায়, যা তার প্রাণনাশের চেষ্টা করার শামিল বলে এজাহারে উলেস্নখ করা হয়। এজাহারে বলা হয়েছে, এরপর বিয়ের কথা বললে মামুন সম্মত হয়। একপর্যায়ে ছাত্রীটি হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফেরার পর টালবাহানা শুরু করে। উপায় না পেয়ে গত ২০ জুন বিষয়টি ৩ নম্বর আসামি নুরুল হক নুরুকে মৌখিকভাবে জানানো হয়। নুরু ওই ছাত্রীকে বলেন, অভিযুক্ত মামুন আমার পরিষদের সহযোদ্ধা। তার সঙ্গে বসে একটা সুব্যবস্থা করে দিবো। মীমাংসার কথা বলে ২৪ জুন নীলক্ষেতে নুরু দেখা করতে আসেন। তখন তিনি মীমাংসার কথা এড়িয়ে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন এবং বলেন, বাড়াবাড়ি করলে তার ভক্তদের দিয়ে উল্টাপাল্টা পোস্ট দেওয়া হবে। পাশাপাশি ছাত্র অধিকার ফোরামের ১২ মিলিয়ন মেম্বারের গ্রম্নপে ওই ছাত্রীকে পতিতা বলে প্রচার করারও হুমকি দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে মামলার ৪, ৫ ও ৬ নং আসামি ওই ছাত্রীর নামে কুৎসা রটাতে শুরু করে। ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃস্থানীয় প্রায় সব নেতাকর্মী এসব ঘটনা সম্পর্কে জানেন। কয়েকজন বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধানের জন্য কাজ শুরু করলে তাদের ষড়যন্ত্রকারী বলে আখ্যা দেওয়া হয়। এ কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে এজাহারে উলেস্নখ করেন ওই ছাত্রী। এজাহারভুক্ত আসামিদের পরিচয় হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে, হাসান আল মামুন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক। ২ নম্বর আসামি নাজমুল হাসান সোহাগ, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক। ৩ নম্বর আসামি নুরুল হক নুরু ডাকসুর সাবেক ভিপি। ৪ নম্বর আসামি মো. সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক। ৫ নম্বর আসামি মো. নাজমুল হুদা বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল হক নুর যায়যায়দিনকে বলেন, দেশে ভারতের মধ্যস্থতায় একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা যখন চলছে তখন আমরা ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছি। এবং দেশীয় গণতন্ত্র শক্তিশালী করার কার্যক্রম চালাচ্ছি। ঠিক তখনই দেশি ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমিসহ তার নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা করিয়েছে। এর আগেও আমার নামে ৪টি মামলা করা হয়েছে। যেগুলো এখনো পুলিশ তদন্ত করে কিছুই পায়নি। এই মামলাও পুলিশ তদন্ত করবে। তিনি বলেন, ২ মাস আগে এক ছাত্রী তার রিলেশন নিয়ে ঝামেলা হয়েছে বলে মোবাইল ফোনে জানান। এরপর আমি তাকে জানাই, ক্যাম্পাস খুললে বিষয়টি দেখবো। পাশাপাশি প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নির্যাতন সেলকে বিষয়টি অবহিত করার জন্য বলি। এর বাইরে ওই ছাত্রীর সঙ্গে আমার দেখা বা কথা হয়নি।