বিরল ভালোবাসা

স্ত্রীর ভূত তাড়াতে হাতি-ঘোড়া কিনে নিঃস্ব দুলাল

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

তৌহিদুল ইসলাম লিটন, লালমনিরহাট
স্ত্রীর প্রেমাসক্ত হয়ে কেনা হাতির পাশে স্বামী দুলাল চন্দ্র রায় ও স্ত্রী তুলশী রানী -যাযাদি
এ এক বিরল ভালোবাসার নিদর্শন। শুধু কথার কথা নয়, প্রিয়তমাকে রক্ষায় নিজের সবকিছু উজাড় করে দিলেন কৃষক দুলাল চন্দ্র রায়। চার বিঘা আবাদি জমিই শুধু বিক্রি করেননি, অবলীলায় বিক্রি করে দিয়েছেন বসতবাড়ি। করলেন ধারদেনা। ভূতের কথামতো সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় কিনে আনলেন হাতি। এর আগে সেই একই ভূতের কথামতো কিনেছেন ঘোড়া। লালমনিরহাট সদরের পঞ্চগ্রামের রতিধর দেউতি গ্রামের দুলাল চন্দ্র রায় স্ত্রীকে রক্ষায় হাতি কিনতে তিন বিঘা, আর ঘোড়া কিনতে এক বিঘা জমি বিক্রি করে এখন নিঃস্বপ্রায়। দুলাল চন্দ্র রায়ের সাথে তুলসী রানীর বিয়ে হয় ২০ বছর আগে। ভালোবাসায় ভরপুর সংসারে এক পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে তাদের। কিন্তু প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর ওপর ভর করল ভূত। ভূতের আসরে তুলসী রানী অসুস্থ হয়ে পড়লে অনেক চেষ্টার পরও তাকে সুস্থ করতে কূলকিনারা করে উঠতে পারেন না দুলাল চন্দ্র রায়। নাছোড়বান্দা ভূত একের পর এক দাবি জানায়। প্রথম দাবি ছিল হাঁস জবাই করলে সে তুলসীকে ছেড়ে যাবে। হাঁস জবাই করার পরও গেল না সে। তারপর ভূতের দাবি ঘোড়া কিনতে হবে। দরিদ্র দিনমজুর দুলাল তার প্রিয়তমা তুলসীকে রক্ষায় ৪ বিঘা জমির মধ্যে ১ বিঘা জমি বিক্রি করে কিনে আনেন ঘোড়া। তাতেও ভূত সরে না। তুলসী দিনে দিনে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এবার ভূতের দাবি, হাতি কিনে আনতে হবে। স্ত্রীকে রক্ষায় কৃষক দুলাল শেষ সম্বল ৩ বিঘা জমি বিক্রি করে হাতি কিনে ফেললেন। ভূতের কবল থেকে বউকে রক্ষা করতে হবে দুলালের এক প্রতিজ্ঞা। হাতি কিনে স্ত্রীকে রক্ষার এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন। হাতি উপহারের মাধ্যমে কৃষক স্বামীর দুলালের স্ত্রীর প্রতি প্রকাশিত বিরল ভালোবাসায় মুগ্ধ এলাকাবাসী। প্রতিদিন হাজার হাজার কৌতূহলী মানুষ ভিড় করছে হাতি দেখতে। 'গরিবের বাড়িতে হাতি' দেখতে লালমনিরহাট সদরের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রতিধর গ্রামে গেলে দেখা গেল হাজারও জনতার উপচেপড়া ভিড়। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা থেকে গত শুক্রবার কেনা হাতিটি ট্রাকে নিয়ে আসা হয় রোববার। ভাড়া দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। গাছ বিক্রি করে সে টাকা পরিশোধ করা হয়। গরিবের বাড়িতে আনা হাতি দেখতে হাজারো উৎসাহীর ভিড়। হাতি পোষ মানানোর জন্য সঙ্গে আনা হয় মাহুত শরীফুলকে। হাতি চড়ানো শিক্ষা দেওয়া বাবত তাকে প্রতিমাসে দিতে হবে ১৫ হাজার টাকা। মাহুত শরীফুল জানান, হাতির খাবার হিসেবে প্রতিদিন ১০টি কলার গাছ, ৩ কেজি ভুসি, গুড় ২ কেজি, কলা ২ কাঁদি তার খাবার লাগবে। প্রতিমাসে হাতির খোরাক প্রায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। মাহুতের খাবার বাবদ ৬ হাজার টাকা। এছাড়া হাতির খাওয়ার ব্যয়সহ প্রতি মাসে দুলাল চন্দ্রের ব্যয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। তবে এ টাকার জোগান নিয়ে চিন্তিত নন দুলাল। বললেন, ভগবান দেবে। তিনি বলেন, তার কাছে সম্পত্তির চেয়ে স্ত্রী বড়। স্ত্রীর সুস্থতার জন্য হাতি না কিনলে প্রতিদিন ভূত তার স্ত্রীকে অত্যাচার করত জানিয়ে দুলাল বলেন, স্ত্রীর জন্য সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছি। তবু যদি ভূত তাকে ছেড়ে যায়। স্ত্রী তুলসী রানী জানান, ভগবানের দয়ায় হাতি আসায় তিনি কিছুটা সুস্থ। আশা করছেন শিগগিরই পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন। স্বামী-স্ত্রীর বিরল ভালোবাসায় খুশি পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যন মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, দুলাল চন্দ্র হাতির খরচ কিভাবে সংগ্রহ করবে তা নিয়ে তার চিন্তা থাকলেও স্ত্রীর যে ভালোবাসা তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্ত্রীকে সুস্থ করতে জমি বিক্রি করে হাতি কিনল দুলাল। এলাকার অতুল চন্দ্র জানান, হাতি দেখে তো আমরা অবাক হয়েছি। হাতি দেখতে দলে দলে মানুষ ছুটে আসছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) উত্তম কুমার জানান, হাতি আনার বিষয়টি শুনেছি। তবে এটি বিরল ঘটনা।