ক্রেতা সংকটে পেঁয়াজ বাজার

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দাম বৃদ্ধির টানা খবরে ক্রেতারা চাহিদার তুলনার বেশি পেঁয়াজ কেনায় সংকটে রয়েছেন রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতারা। তারা জানাচ্ছেন, গত কয়েকদিন ধরে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় চাহিদার তুলনায় বেশি পেঁয়াজ কিনেছেন অনেকেই। ফলে এখন ক্রেতারা আর বাজারমুখী হচ্ছেন না। বাজারে বিক্রি নেই, অন্যদিকে সংবাদ বেরিয়েছে নিষেধাজ্ঞার আগে রপ্তানির অনুমতি পাওয়া ২ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশকে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ভারত। এতেই এক দিনে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা কমেছে। এর মাধ্যমে টানা তিন দিন পাইকারি বাজারে কমল দেশি পেঁয়াজের দাম। পাইকারিতে দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম কমায় খুচরা বাজারেও কমতে শুরু করেছে। এক দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দাম আরও কমে যাবে। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে, যা গত তিন দিন ছিল ৯০ থেকে ১১০ টাকা। অপরদিকে আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, যা শুক্রবার ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এদিকে রাজধানীতে পেঁয়াজের সব থেকে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব থেকে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়, যা শুক্রবার ছিল ৭৭ টাকা এবং তিন দিন আগে ছিল ৮৫ টাকা। অপরদিকে আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। এর আগে গত সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) হুট করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতেই মঙ্গলবার ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম খুচরা বাজারে বেড়ে ১১০ টাকা হয়ে যায়। আর পাইকারিতে ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয় ৮৫ টাকা। এমন দাম বাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে বাড়তি পেঁয়াজ কেনার হিড়িক পড়ে ক্রেতাদের মাঝে। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে ক্রেতা সংকট দেখা দেয় পেঁয়াজের বাজারে। যার প্রভাবে পাইকারি বাজারে কমতে থাকে পেঁয়াজের দাম। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দু'দফায় দাম কমে পাইকারিতে পেঁয়াজের কেজি ৭৭ টাকায় নামে। তবে এ পরিস্থিতিতে সংবাদ আসে- নিষেধাজ্ঞার আগে রপ্তানির অনুমতি পাওয়া ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশকে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ভারত। এতেই দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম আরও কমে গেল। পেঁয়াজের দাম কমার বিষয়ে শ্যামবাজারের বিসমিলস্নাহ ট্রেডার্সের মো. কাজল বলেন, 'আজ (শনিবার) কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা কমেছে। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকা। এখন ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়। আর ছোট আকারের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। অপরদিকে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, যা শুক্রবার ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।' তিনি বলেন, 'নিষেধাজ্ঞার আগে রপ্তানির অনুমতি পাওয়া পেঁয়াজ ভারত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হলে দাম আরও কমবে। আমরা আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আগের স্থানে ফিরে যাবে। পেঁয়াজের দাম কমে যাক এটা আমরাও চাচ্ছি। কারণ দাম বাড়ার কারণে আমাদের বিক্রি নেই। ঘর বোঝাই মাল নিয়ে বসে থাকি, ক্রেতাই আসে না।' এদিকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমার বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়া বৌবাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, 'পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে, এ কারণে আমরা কম দামে বিক্রি করছি। গতকাল ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা দেশি পেঁয়াজ আজ ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। ৮০ টাকার ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ টাকায় বিক্রি করছি।' বাড্ডায় কেজি ৯০ টাকা করে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করা মমিনুল ইসলাম বলেন, 'পাইকারিতে দাম কমায় আমরাও কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছি। গতকাল ১১০ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। আজ ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমাদের আগের কেনা।' ট্রাক ছাড়ার অনুমতি দিল ভারত এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্তে আটকে থাকা পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য শুল্ক বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়। দিলিস্নতে শুক্রবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্তে যেসব পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে রপ্তানির পথে আটকে পড়েছে, সেসব ট্রাক অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ার। এ-সংক্রান্ত নির্দেশও দেওয়া হয় ভারতের শুল্ক বিভাগকে। নির্দেশনায় বলা হয়, ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে দৃঢ় রাখার জন্য ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানির বিশেষ অনুমতি দিয়েছে। মিয়ানমার থেকে এলো পেঁয়াজ অন্যদিকে প্রায় আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর মিয়ানমার থেকে আবার পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ও শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুই দিনে ৪৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে এসে পৌঁছেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন। তিনি জানান, জুন মাসের শেষ দিকে মংডু-আকিয়াব বন্দরে করোনারোগী শনাক্ত হওয়ায় মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ ছিল। এ অবস্থায় প্রায় আড়াই মাস পর শুক্রবার দুটি জাহাজে করে প্রায় ৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসে। শনিবার আরও একটি জাহাজ বন্দরে ভিড়েছে, সেখানেও আনুমানিক ১৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ হবে। তিনি আরও জানান, শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় আমদানি করা পেঁয়াজের কাগজপত্র এখনো জমা হয়নি। তবে, যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে খালাসের পর পেঁয়াজ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হবে। সোনামসজিদ দিয়ে ২শ মেট্রিক টন নিষেধাজ্ঞা জারির চার দিন পর বিশেষ ব্যবস্থায় ভারত থেকে ১৯৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রবেশ করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে। শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ভারতের মাহদীপুর স্থলবন্দরে আটকে থাকা চার শতাধিক ট্রাকের মধ্যে মাত্র আটটি ট্রাকে ১৯৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ ব্যাপারে সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমস অফিসের সহকারী কমিশনার সাইদুর রহমান জানান, ভারতে আটকে পড়া ট্রাকগুলো যখনই আসবে বিশেষ ব্যবস্থায় তখনই পেঁয়াজগুলো বাংলাদেশে ছাড় করা হবে।