শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বে আক্রান্ত ৩ কোটি ছাড়াল ভারতে রেকর্ড শনাক্ত

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত সারাবিশ্ব। যত দিন যাচ্ছে এর বিস্তারও পালস্না দিয়ে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ৯ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ। পাশাপাশি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে দুই কোটি ১৮ লাখ ৮ হাজার। অর্থাৎ করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই এখন সুস্থ। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, এনডিটিভি

বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে তান্ডব চালাচ্ছে এ ভাইরাস। চীনে প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও এ ভাইরাসের সংক্রমণ এখন সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতু্য নিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এ দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। দেশটিতে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে দুই লাখ ১৪ হাজারের বেশি। অন্যদিকে সুস্থ হয়ে উঠেছে প্রায় ৪২ লাখ।

এদিকে, ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ লাখ ২২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতু্য হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজারের বেশি। এছাড়া এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছে প্রায় ৩৭ লাখ ২১ হাজার।

রাশিয়ায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ৮৬ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৯ হাজারের বেশি। আর

সুস্থ হয়ে উঠেছে ৮ লাখ ৯০ হাজার ১১৪ জন।

সংক্রমণে পঞ্চম অবস্থানে থাকা পেরুতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাত লাখ ৪৭ হাজার। সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩১ হাজার ৫১ জন। অন্যদিকে, সুস্থ হয়ে উঠেছে প্রায় পাঁচ লাখ ৮৮ হাজারের মতো রোগী।

এছাড়া কলম্বিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, আর্জেন্টিনা, চিলি, ইরান, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরাক, তুরস্ক এবং ইতালিতেও সংক্রমণ বাড়ছে। এর মধ্যে ফ্রান্সে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটিতে দ্বিতীয় ঢেউটি হবে ম্যারাথনের মতো। ফ্রান্সের করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ব্যাপারে ধারণা দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় 'বোর্ডক্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল'র নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রধান ডা. অলিভার জোনস-বোইয়া।

ফ্রান্সে লকডাউন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তরুণরা অবাধ সামাজিক চলাফেরা করায় প্যারিস, বোর্ডক্স ও ভূ-মধ্যসাগরীয় উপকূলীয় মার্সেলের মতো বড় শহরগুলোর হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ফরাসি হাসপাতালগুলো এখন দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ফ্রান্সে করোনাভাইরাসের বিস্তার দ্রম্নত ঘটতে থাকে। কিন্তু দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করায় বিস্তারের লাগাম টানতে সক্ষম হয় দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে, ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া এতে আক্রান্ত হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজারের বেশি। বর্তমানে দেশটিতে এ ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রম্নতগতিতে বাড়ছে।

ভারতে একদিনে প্রায় লাখ

রোগী শনাক্তের রেকর্ড

এদিকে, সংক্রমণের সংখ্যায় বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতে একদিনে আরও প্রায় এক লাখ রোগী শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, সেখানে ২৪ ঘণ্টায় ৯৭ হাজার ৮৯৪ জনের দেহে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

ভারত শনাক্ত ৫১ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোগী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের দেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে শুধু এ দুটি দেশেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫০ লাখের দুঃখজনক মাইলফলক পার হয়েছে।

টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে ভারতে প্রতিদিনই বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি রোগীর মৃতু্য রেকর্ড হচ্ছে। দিন দিন মৃতু্যর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোভিড-১৯ এ শেষ ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ১৩২ জনের মৃতু্য হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাস ৮৩ হাজার ১৯৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিল। ভারতে করোনাভাইরাসে মৃতু্য কেবল ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েই কম।

করোনার কারণে এশিয়ায় স্পষ্ট

হচ্ছে বৈষম্য : রেডক্রস

অন্যদিকে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এশিয়ায় বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে সতর্ক করেছে 'দি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিজ' (আইএফআরসি)। অভিবাসী ও বিদেশিসহ এশিয়ার দুর্বল সম্প্রদায়গুলো আক্রান্তের মুখে পড়েছে।

ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও পাকিস্তানের পাঁচ হাজার লোকের ওপর জরিপ শেষে মানবিক এ সংস্থাটি বলেছে, তাদের প্রায় অর্ধেকেই করোনা ছড়িয়ে পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে দোষারোপ করছে। বিশেষ করে চীনা, অভিবাসী ও বিদেশিদের দায়ী করা হচ্ছে।

অন্যতম শীর্ষ গবেষক ও সংস্থাটির 'এশিয়া প্যাসিফিক কমিউনিটি এনগেজমেন্ট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি কো-অর্ডিনেটর' ড. ভিভিয়ান ফ্লাক বলেন, 'এটা খুবই উদ্বেগের যে, করোনা ছড়ানোর জন্য অভিবাসী ও বিদেশি কর্মীদের দায়ী করা হচ্ছে, যারা দুর্বল একটা গোষ্ঠী।'

বৈষম্যগত বিষয়গুলোকে আরও প্রবল করে তোলে, এমন গুজবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও মনোনিবেশ করা উচিত বলে মনে করেন এ নারী কর্মকর্তা। ফ্লাক বলেন, অর্ধেকের বেশি ইন্দোনেশিয়ান বিদেশি ও নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের দোষারোপ করছে বলে জরিপে দেখা গেছে। মিয়ানমারের বিশ্বাস, করোনার জন্য দায়ী চীন এবং অন্য বিদেশি নাগরিকরা।

মালয়েশিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে দায়ী করছে; বিশেষ করে অভিবাসী, বিদেশি পর্যটক ও দেশে ঢোকা অবৈধ বিদেশি নাগরিক। মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ গত মে মাসে কাগজপত্রহীন শতাধিক অভিবাসী ও শরণার্থীকে গ্রেপ্তার করে।

পাকিস্তানের আঙুল ইরানের দিকে। বেশিরভাগ পাকিস্তানির দাবি, ইরান সীমান্তে যথাযথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। তাতে ইরান থেকে পুণ্যার্থী আসার কারণে করোনা ছড়িয়েছে। চীন থেকে আসা পাকিস্তানিদেরও দোষ দেখছে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<112438 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1