বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২০, ১০:৩০

বিশেষ সংবাদদাতা

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে টিকা (ভ্যাকসিন) আবিষ্কারের দাবি করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গেস্নাব বায়োটেক লিমিটেড। গেস্নাব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রম্নপ অব কোম্পানিজের সহযোগী এ প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ৮ মার্চ এই টিকা আবিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। যার সফলতা পাওয়া গেছে। সরকার তথা দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অনুমোদন পেলে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই টিকাটি বাজারে আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন গেস্নাব বায়োটেকের কর্ণধাররা। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠানপ্রধান কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই টিকা আবিষ্কারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. কাকন নাগ এবং চিফ অপারেশনাল অফিসার (সিওও) ড. নাজনীন সুলতানা। তাদের অধীনে একটি বৈজ্ঞানিক দল টিকাটি আবিষ্কার করে এবং প্রাণীদেহে অ্যান্টিবডি তৈরির সফলতা লাভ করে। সংবাদ সম্মেলনে গেস্নাব বায়োটেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ বলেন, গত ৮ মার্চ থেকে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, টিকা এবং ওষুধ আবিষ্কার বিষয়ে গবেষণার কাজ শুরু করা হয। এখন টিকাটির সুরক্ষা ও কার্যকারিতা নীরিক্ষার লক্ষ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার কাজ চলছে। এক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। হারুনুর রশিদ জানান, এনসিবিআই ভাইরাস ডাটাবেজ অনুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৫,৭৪৩টি সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স জমা হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জমা হয়েছে ৭৬টি। এসব সিকোয়েন্স বায়োইনফরম্যাটিক্স টুলের মাধ্যমে পরীক্ষা করে তাদের টিকার টার্গেট নিশ্চিত করা হয়েছে। এই টার্গেটের পরিপূর্ণ কোডিং সিকোয়েন্স যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই ভাইরাস ডাটাবেজে জমা দেওয়ার পর স্বীকৃত এবং প্রকাশিত হয়েছে। যার নম্বর (ধপপবংংরড়হ হঁসনবৎ: গঞ৬৭৬৪১১)। হারুনুর রশিদ বলেন, তাদের গবেষণাগারে আবিষ্কৃত টিকাটির বিশদ বিশ্লেষণের পর ল্যাবরেটরি অ্যানিমেল মডেলে (প্রাণীদেহে প্রয়োগতত্ত্ব) পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে যথাযথ অ্যান্টিবডি তৈরিতে সন্তোষজনক ফল পাওয়া গেছে। গেস্নাব বায়োটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (কোয়ালিটি অপারেশন্স) ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন যায়াযায়দিনকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ এই টিকাটি ৩ দফায় প্রাণীদেহে প্রয়োগ করে ইতিবাচক ফল পেয়েছে। এখন বাংলাদেশের ড্রাগ প্রশাসনের গাইডলাইন অনুসরণ করে রেগেুলেটেড ওয়েতে (যথাযথ পদ্ধতি) আবারও প্রাণীদেহে পরীক্ষা করার পরে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) জমা দেওয়া হবে। এজন্য ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ কাজ করতে হবে। বিএমআরসির অনুমোদন পেলে টিকাটি আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বাজারে ছাড়া যাবে। জানা গেছে, এ টিকার আন্তর্জাতিক পেটেন্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করার প্রক্রিয়া চলছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গেস্নাব বায়োটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুলস্নাহ রশিদ তুর্য, পরিচালক মামুনুর রশিদ কিরণ এমপি, পরিচালক আহমদ হোসেন, ব্যবস্থাপক (কোয়ালিটি অপারেশন্স) ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের ইনচার্জ ড. আসিফ মাহমুদ, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জিকরুল ইসলামসহ গবেষণা দলের বৈজ্ঞানিকরা। ২০১৫ সালে ক্যানসার, আর্থ্রাইটিস, রক্তস্বল্পতা, উচ্চরক্তচাপ, অটোইমিউন ডিজিজসহ অন্যান্য দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ের জন্য বায়োলজিক্স, নোভেল ড্রাগ এবং বায়োসিমিলার উৎপাদনের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে গেস্নাব বায়োটেক লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয। গেস্নাব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রম্নপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গেস্নাব বায়োটেক লিমিটেডের বিজ্ঞানীদল এরই মাঝে বেশ কয়েকটি দুরারোগ্য ব্যাধির বায়োসিমিলার উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। যা বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদনের পথে।