বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে

আহমেদ তোফায়েল
  ২৩ মে ২০২০, ০০:০০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে চলমান সংকটকালের কথা বিবেচনা করে আসছে (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হচ্ছে। প্রায় ৫ বছর পরে সরকার ব্যক্তিশ্রেণির আয় করের হার বাড়াতে যাচ্ছে। এছাড়া বাজেটে পরোক্ষ করের পেছনে না ছুটে প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সাধারণ ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা পাচ বছর ধরে আড়াই লাখ টাকা রাখা হয়েছে। সর্বশেষ করমুক্ত আয়সীমা পরিবর্তন করা হয় (২০১৫-১৬) অর্থবছরে। ফলে নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রত্যাশা অনেকদিনের। এর সঙ্গে করোনার প্রভাবে এ হার আরো বাড়ানোর দাবি ছিল সব মাধ্যম থেকে।

তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, গত বছরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করলে দেখা যায়, চার বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এ মূল্যস্ফীতির হিসাবকে বিবেচনায় নিয়ে করমুক্ত আয়ের সীমা নূ্যনতম ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা উচিত।

বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক স্থবিরতার পাশাপাশি জনজীবনেও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ফলে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা চাঙ্গা রাখতে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর পরামর্শ ছিল অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনদের। তবে বর্তমানে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান রয়েছে এনবিআরের। তবে এ হার তিন লাখ টাকা করা হচ্ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটি কয়েক বছর আগে নির্ধারণ করা। এর পর মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। নতুন করে করোনা পরিস্থিতি যোগ হয়েছে। সবকিছু মিলে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো উচিত। এ ক্ষেত্রে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার পরামর্শ দেন তিনি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, করোনায় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা চাঙ্গা রাখতে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো উচিত। এটি বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা এবং পাশাপাশি করের হারও কমানোর উচিত।

গোল্ডেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রয়েছে। মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করা উচিত।

অন্যদিকে সিপিডির বাজেটে প্রস্তাবনায় বলা হয়, মানুষের কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ায় ব্যক্তিগত আয় কমেছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বর্তমানে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আগামী বাজেটে তা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা উচিত। সিপিডির প্রস্তাবে নিচের তিন স্তরে আয়কর ৫ শতাংশ কমাতে বলা হয়। অর্থাৎ মধ্যবিত্তদের সহায়তায় বর্তমানে যারা আয়ের ১০ শতাংশ হারে কর দেন, আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশ করতে বলা হয়। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ করহারকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং ২০ শতাংশের স্থলে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়।

সিডিপির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিকাশমান মধ্যবিত্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই তাদের জন্য করের হার কমানো উচিত। দেশে ১ কোটি ৪০ লাখ লোক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেতনে চাকরি করছেন। পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে এদের বেকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করা উচিত।

চলতি অর্থ বছরে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয় সীমা আছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি এই অঙ্কের আয় করলে তাকে আয়কর দিতে হবে না। এর পর পরবর্তী ৪ লাখ টাকা আয়ের জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখের জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৬ লাখের জন্য ২০ শতাংশ, পরবর্তী ৩০ লাখের জন্য ২৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট আয়ের জন্য ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। এ ছাড়া মহিলাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ, প্রতিবন্ধীদের ৩ লাখ ৭৫ হাজার এবং গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অনিবাসী করদাতার করহার ৩০ শতাংশ বিদ্যামান। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি করপোরেশনে ৪ হাজার এবং সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে ৩ হাজার টাকা কর দিতে হয়। আর এই হার ৫ বছর আগের নির্ধারণ করা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100469 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1