ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দেশে মৃত্যু বেড়ে ২২

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে যাশোরে আরও সাতজনের মৃতু্যর খবর আসায় দেশে এ দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হলো ২২ জন। বুধবার রাতে ঝড়ের মধ্যে গাছ ভেঙে পড়ে যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় এক দম্পতি ও বাবা-ছেলেসহ পাঁচজন এবং শার্শায় আরও দুইজনের মৃতু্য হয়, যা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানতে পারেন বৃহস্পতিবার বিকালে। এ নিয়ে জেলায় ঝড়ে ১২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। এর আগে বুধবার চৌগাছায় দুইজন, শার্শায় দুইজন ও বাঘারপাড়ায় একজনের মৃতু্য হয়। মণিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ঝড়ের সময় গাছ পড়ে তার উপজেলার পাঁচজনের মৃতু্য হয়। বিষয়টি বৃহস্পতিবার বিকালে স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে। তারা হলেন- মণিরামপুর উপজেলার মশ্মিমনগর ইউনিয়নের পারখাজুরা গ্রামের ঋষিপাড়ার খোকন দাস (৭০) ও তার স্ত্রী বিজন দাসী (৬০), দফাদারপাড়ার ওয়াজেদ আলী (৫০) ও তার ছেলে মোহাম্মদ ইসা (১৫) ও আছিয়া বেগম (৭০)। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মশ্মিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ঝড়ের রাতে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে গাছচাপা পড়েন খোকন ও বিজন দাসী। 'নিরাপত্তার আশায় ঘর ছেড়ে খামারের মুরগির খামারে অবস্থান নিয়েছিলেন ওয়াজেদ ও তার ছেলে ইসা। কিন্তু ওই ঘরের ওপরই গাছ পড়ে প্রাণ হারান বাবা-ছেলে।' এ ছাড়া ঝড়ের সময় বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন বৃদ্ধা আছিয়া। ঝড়ে বারান্দার টালির ছাউনির ওপর একটি গাছ আছড়ে পড়লে তাতে চাপা পড়ে তার মৃতু্য হয় বলে জানান আবুল হোসেন। জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, ঝড়ের কারণে বিদু্যৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় মণিরামপুরে পাঁচজনের মৃতু্যর খবর আগে জানা যায়নি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উলস্নাহ শরিফীর আবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আরও মৃতু্যর ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি জানান। মণিরামপুর থানার এসআই ফাতেউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা খবর পেয়ে এলাকায় যান। ততক্ষণে তিনজনের দাফন শেষ হয়েছে। বাকি দুইজনের সৎকারের কাজ চলছিল শ্মশানে। গাছচাপা পড়ে পাঁচজনের মৃতু্যর ঘটনায় থানার এসআই দেবাশীষ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে জানান ফাতেউর। এ ছাড়া শার্শায় ঝড়ের মধ্যে গাছ পড়ে ওই ইউনিয়নের জেলেপাড়ার গোপালচন্দ্র ও মহিপুরা গ্রামের মিজানুর রহমান মারা গেছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল জানান। এর আগে যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাঁদপাড়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের খ্যান্ত বেগম (৪৫) ও তার মেয়ে রাবেয়া (১৩), বাগআচড়া ইউনিয়নের টেংরা গ্রামে মুক্তার আলি (৩৫), গোগা পশ্চিমপাড়ার ময়না খাতুন (২৫) এবং বাঘারপাড়ার বুদোপুর গ্রামে ডলি বেগমের (৪৮) মৃতু্যর খবর জানিয়েছিলেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সুপার সাইক্লোন আম্পান শক্তি কিছুটা হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রূপে বুধবার দুপুরের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। পরে রাতে এ ঝড় প্রবেশ করে বাংলাদেশে। ঝড়ের মধ্যে প্রবল বাতাসে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদু্যৎহীন হয়ে পড়েন দেশের অর্ধেকের বেশি গ্রাহক। ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে এ পর্যন্ত আট জেলায় মোট ২২ জনের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে, যাদের বেশিরভাগই ঝড়ে গাছ বা ঘরচাপা পড়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে যাশোরে ১২ জন, পিরোজপুরে ৩ জন, পটুয়াখালীতে ২ জন এবং ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, ভোলা, চাঁদপুর ও বরগুনায় একজন করে মারা গেছেন।