অস্ট্রেলিয়ার প্রেক্ষাগৃহে জহির রায়হানের 'জীবন থেকে নেয়া'

প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
এবার একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে দেশ-বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব চললেও, দূর অস্ট্রেলিয়া থেকে খবর এলো দারুণ আনন্দের। জানা গেল, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিনেমা 'জীবন থেকে নেয়া' প্রদর্শিত হচ্ছে দেশটির প্রেক্ষাগৃহে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার দর্শকদের দেখানো হচ্ছে কালজয়ী নির্মাতা জহির রায়হানের 'জীবন থেকে নেয়া' সিনেমাটি। ইংরেজি সাবটাইটেলসহ 'টু-কে' (স্বচ্ছ রেজু্যলেশন) সংস্করণে সিনেমাটি দেখাচ্ছেন পরিবেশনা সংস্থা বঙ্গজ ফিল্মসের প্রতিষ্ঠাতা তানিম মান্নান। শুক্রবার সিডনিতে হয়টস ওয়েদারিল পার্কের হয়েটস সিনেমা হলে এবং আজ ডুমারেস্ক স্ট্রিট সিনেমা হলে 'জীবন থেকে নেয়া' সিনেমার দু'টি প্রদর্শনী রয়েছে। চিরচেনা পারিবারিক কাহিনীর আবহে, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত এই সিনেমা। একটি দেশ, একটি সংসার, চাবির গোছা আর আন্দোলন- এই সিনেমার মূল উপজীব্য বিষয়। তরুণ প্রজন্মকে ঐতিহাসিক চলচ্চিত্রের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী করতেই 'জীবন থেকে নেয়া' সিনেমাটি দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন মান্নান। কিন্তু বিষয়টি তার জন্য এত সহজ ছিল না। ৫৫ বছর আগে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি দেখাতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, তা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে। তিনি বলেন, 'সিনেমাটি দেখানোর ইচ্ছা তৈরি হয়েছে প্রায় তিন বছর আগে, আমি তো এখানে নিয়মিত বাংলা সিনেমা দেখাই, অর্ধশতাধিক সিনেমা দেখানো হয়ে গিয়েছে। একদিন মনে হলো কমার্শিয়াল সিনেমা তো দেখানো হচ্ছে যদি কালচারাল সিনেমাগুলো নিয়ে কোনো আয়োজন করা যায়। একজন প্রযোজককে বললাম জহির রায়হানের সিনেমাটি দেখাতে চাই। কিন্তু তিনি জানালেন, 'নির্মাতার পরিবার থেকে অনুমতি পাওয়া সম্ভব হবে না। আমিও দমে গেলাম। কিন্তু কোনোভাবেই দেখানোর ইচ্ছাটা বাদ দিতে পারছিলাম না।' জহির রায়হানের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় রাষ্ট্রের অধিকার আদায়ের গল্পের 'জীবন থেকে নেয়া' মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭০ সালে। সিনেমাটি ইউটিউবে দেখা গেলেও সিনেমার ভিজু্যয়াল ও অডিও এবং দৃশ্য স্পষ্ট নয়। মান্নান বলেন, ইউটিউবে দেখলাম 'জীবন থেকে নেওয়া' সিনেমা আছে, কিন্তু ঘোলা প্রিন্ট, ঠিকমতো বোঝা যায় না। সেটা দেখে সিনেমাটি সংস্কার করে দেখানোর ইচ্ছা তীব্রভাবে তৈরি হলো। এরপর সিনেমাটি দেখানোর জন্য পরিবারের অনুমতি পেতে সাহায্য করেছেন লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু। তিনি জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হানের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিলেন। অনল ভাই আমাদের শুভাকামনা জানিয়ে বললেন, 'এটা খুব ভালো উদ্যোগ'। পরিবারের অনুমতি নিয়ে বিনামূল্যে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে সিনেমাটি প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে। মান্নান পেশায় একজন প্রকৌশলী, সিনেমা নিয়ে প্রবল আগ্রহ থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি সিনেমা মুক্তি দিয়ে থাকেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় ৮ বছরে ৫৩টি সিনেমা মুক্তি দিয়েছেন তিনি। আনিস ফিল্মস করপোরেশনের পরিবেশনায় এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন রওশন জামিল, খান আতাউর রহমান, শওকত আকবর, রাজ্জাক, রোজী সামাদ, সুচন্দা প্রমুখ। এই সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি', 'এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে', 'কারার ওই লৌহকপাট' -এর মতো কালজয়ী কিছু গান। 'জীবন থেকে নেয়া' সিনেমার সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন খান আতাউর রহমান। ১৯৭০ সালের ১১ এপ্রিল হলে আসে 'জীবন থেকে নেয়া'। ১৯৫৬ সালে জহির রায়হান চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। ১৯৬১ সালে তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র 'কখনো আসেনি' মুক্তি পায়। তারপর একের পর এক তার নির্মিত চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে থাকে। নিপুণ দক্ষতার সঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাণ শিল্পে খুব অল্পসময়ে নিজেকে বিকশিত করেন জহির রায়হান। তার নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্রগুলো যুদ্ধকালীন সময়ে বিশ্বমানবতার টনক নাড়িয়ে দেয়। জহির রায়হানের নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো হলো-কখনো আসেনি, সোনার কাজল, কাচের দেয়াল, সংগ্রাম (১৯৬৪ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বপ্রথম রঙিন চলচ্চিত্র), বাহানা, বেহুলা, আনোয়ারা, দুই ভাই, জীবন থেকে নেয়া ও ইংরেজি ভাষায় 'খবঃ ঞযবৎব ইব খরমযঃ'। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ ও ১৯৬০ সালে প্রথম উপন্যাস শেষ বিকালের মেয়ে প্রকাশিত হয়। পেশাগত জীবনে তিনি সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ১৯৫০ সালে 'যুগের আলো' পত্রিকা দিয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি ১৯৭০ সালে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা দ্য উইকলি এক্সপ্রেস প্রকাশের উদ্যোক্তাদের অন্যতম। এছাড়া, তিনি কতিপয় সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৬ সালে 'প্রবাহ' পত্রিকায় জহির রায়হান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র 'সঙ্গম' নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র 'বাহানা' মুক্তি দেন। ব্যক্তিগত জীবনে জহির রায়হান ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবীকে এবং ১৯৬৬ সালে তিনি সুচন্দাকে বিয়ে করেন। দু'জনেই ছিলেন সে সময়কার বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।