মুক্তির ১৭ বছর পর অস্কার কর্তৃপক্ষের নজর কাড়ল আশুতোষ গোয়ারিকর নির্মিত পিরিয়ডিক বলিউড সিনেমা 'যোধা আকবর'! হৃতিক রোশন ও ঐশ্বরিয়া রাই অভিনীত সিনেমাটি এ বছর মুক্তির ১৭ বছর পূর্ণ করেছে। সেই উপলক্ষে চলতি বছরের মার্চ মাসে, লস অ্যাঞ্জেলেসে অস্কার কর্তৃপক্ষ (একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস) সিনেমাটির একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করতে চলেছে। তারিখ চূড়ান্ত না হলেও অনুমান করা হচ্ছে, ৩ মার্চ একই শহরে অনুষ্ঠিতব্য ৯৭তম অস্কার আসরের আগে-পরেই হবে এই বিশেষ প্রদর্শনী। মোগল সম্রাট আকবরের সঙ্গে রাজপুত রাজকন্যা যোধা বাইয়ের মিলনের মহাকাব্যিক গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই ক্ল্যাসিক সিনেমাটি। ঋতিক রোশন ও ঐশ্বরিয়া রাইয়ের দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে এটি আরও জীবন্ত হয়ে উঠেছে। গোয়ারিকরের গল্প বলার ঢঙের সঙ্গে, তাদের অন-স্ক্রিন রসায়ন 'যোধা আকবর'কে একটি অবিস্মরণীয় সিনেমাটিক অবস্থানে নিয়ে গেছে।
মুক্তির ১৭ বছর পূর্তিতে হতে যাওয়া এই বিশেষ প্রদর্শনী নিয়ে আশুতোষ গোয়ারিকর বলেন, ১৭তম বার্ষিকীতে যোধা আকবর। আমি দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ এ কারণে যে, তারা এটিকে তাদের স্মৃতিতে ধরে রেখেছেন এবং তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে চলেছেন। মুক্তি থেকে শুরু করে, এই এখন একাডেমিতে একটি বিশেষ প্রদর্শনীর মাধ্যমে সম্মানিত হওয়া পর্যন্ত, এটি সিনেমাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার শৈল্পিক অবদানের স্বীকৃতি। 'যোধা আকবর' যে প্রশংসা পাচ্ছে তা সত্যিই গর্বের এবং ভালোলাগার। আমি বিশ্বব্যাপী দর্শকদের মধ্যে ভালোলাগার অনুরণন দেখতে পেয়ে রোমাঞ্চিত। দ্য একাডেমিতে হতে যাওয়া এই প্রদর্শনী কেবল চলচ্চিত্রের উদযাপন নয় বরং এটি যে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে, তারও প্রতিফলন।
দারুণ সিনেমাটোগ্রাফি, জমকালো ক্ল্যাসিক পোশাক এবং চমৎকার সব গানের জন্য এই সিনেমাটি দারুণ প্রশংসিত হয়েছিল। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া 'যোধা আকবর' সিনেমাটি ভারতীয় সিনেমাকে বিশ্ব মঞ্চে নিয়ে যায়। প্রায় ৪০ কোটি রুপি বাজেটে নির্মিত যোধা আকবর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১২০ কোটি রুপি আয় করে। মুক্তির পর এটি দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় এবং কালজয়ী সিনেমার মর্যাদা লাভ করে।
বলা প্রয়োজন, এর আগে অস্কার অ্যাকাডেমির মিউজিয়ামে বিখ্যাত পোশাক ডিজাইনার নীতা লুলস্নার 'কালার ইন মোশন' প্রদর্শনীতে এই সিনেমায় পরা ঐশ্বরিয়া রাইয়ের জমকালো বিয়ের লেহেঙ্গা প্রদর্শন করেছিল।
গল্প, গান, অভিনয় ছাড়াও এ সিনেমার আলোচিত দিক ছিল কস্টিউম। যেহেতু মোগল সম্রাট আকবর ও তার স্ত্রী যোধা বাঈয়ের গল্প, তাই নির্মাতাদের সর্বোচ্চ নজর ছিল সেট ও চরিত্রদের লুকে যেন পুরনো সময়টা ফুটে ওঠে।
অস্কার কর্তৃপক্ষ ইনস্টাগ্রামে যোধা আকবরের ক্লিপস শেয়ার করে খবরটি জানিয়ে ছিলেন। সেখানে লেখা হয়ে ছিল, যোধা আকবর সিনেমায় যোধা বাঈয়ের বিয়ের সময় যে লেহেঙ্গায় ঐশ্বরিয়াকে দেখা গিয়েছিল, একাডেমি মিউজিয়ামে তা এবার প্রদর্শিত হবে। জারদোসির কাজ করা, শতাব্দীপ্রাচীন কারুশিল্পের মিশেলে এই লেহেঙ্গার সৌন্দর্য সবার নজর কেড়েছিল। এটি ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি নিদর্শন। ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই লেহেঙ্গায় দামি পাথরের ডিজাইনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূর- যা দামি পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। রত্নসম পোশাকটি ডিজাইন করেছিলেন নীতা লুলস্না। একাডেমি মিউজিয়ামের কালার ইন মোশন প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হতে চলেছে লেহেঙ্গাটি।
শুধু এ লেহেঙ্গা নয়, যোধা আকবরে ঐশ্বরিয়ার পোশাক ছাড়াও বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল গয়নায়। চরিত্রকে বাস্তবসম্মত করে তুলতে ঐশ্বরিয়াকে পরানো হয় ২০০ কেজি স্বর্ণের তৈরি আসল গয়না। ৭০ জন ডিজাইনার মাসের পর মাস খেটে গয়নাগুলো তৈরি করেন। শুটিংয়ের সময় গয়নাগুলো যাতে খোয়া না যায়, সেজন্য সেটে সব সময় ঐশ্বরিয়াকে পাহারা দিতেন ৫০ জন নিরাপত্তারক্ষী।