বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

বাসায় ফিরেছেন ফরিদা পারভীন

বিনোদন রিপোর্ট
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বাসায় ফিরেছেন ফরিদা পারভীন
বাসায় ফিরেছেন ফরিদা পারভীন

সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন লালন সঙ্গীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন। তবে, বাসায় ফিরলেও তাকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। শুক্রবার রাতে ফরিদা পারভীনের বাসায় ফেরার খবরটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, 'শুরুতে ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থায় যা ছিল, তা কিছুটা শঙ্কার ছিল। চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। একটা পর্যায়ে তার ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীতা দেখা দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর লাগেনি। এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। এ সময় আশীষ কুমার চক্রবর্তী আরও বলেন, আমরা তাকে একটা গাইডলাইন দিয়েছি। এই গাইডলাইন কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। অন্যথায় আবার কোনো জটিলতা তৈরি হতে পারে।'

তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে ১ ফেব্রম্নয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ফরিদা পারভীন। তার ফুসফুসে পানি জমার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং থাইরয়েডের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত কয়েকটি সমস্যা ছিল। পরিস্থিতির অবণতি ঘটলে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। কয়েকদিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পর সাধারণ কেবিনে আনা হয়। এরপর ১৩ দিন পর তিনি পুরোপুরি সুস্থ হন।

১৯৫৪ সালে ফরিদা পারভীনের জন্ম নাটোর জেলার সিংড়া থানার শাঔঁল গ্রামে। জন্ম নাটোরে হলেও তিনি বড় হয়েছেন কুষ্টিয়ায়। তবে প্রাতিষ্ঠানিক স্কুলজীবন কেটেছে বিভিন্ন শহরে। স্কুল জীবনের সূচনা হয়েছিল মাগুরায়। তিনি কুষ্টিয়া গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল, কুষ্টিয়ার মীর মোশাররফ হোসেন বালিকা বিদ্যালয় এবং মেহেরপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলে অধ্যয়ন করেন।

কুষ্টিয়ার মীর মোশাররফ হোসেন বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৪ সালে কুষ্টিয়া গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। এরপর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৭৬-৭৯ সালে অনার্স পাস করেন।

মাগুরায় ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে ফরিদা পারভীনের গানের হাতেখড়ি। পরবর্তী সময়ে তিনি কুষ্টিয়ার তখনকার গানের ওস্তাদ রবীন্দ্রনাথ রায়, মোতালেব বিশ্বাস এবং ওসমান গণির কাছে ক্ল্যাসিক্যাল শেখেন। প্রায় ছয়-সাত বছর তানপুরার সঙ্গে ক্ল্যাসিক্যাল চর্চা করার পর তিনি নজরুল সঙ্গীত শিখতে শুরু করেন।

তার নজরুল সঙ্গীতের প্রথম গুরু হচ্ছেন কুষ্টিয়ার ওস্তাদ আবদুল কাদের। এরপর তিনি মেহেরপুরে মীর মোজাফফর আলীর কাছেও নজরুল সঙ্গীত শেখেন। স্বরলিপি দিয়ে নজরুলের গান হারমোনিয়ামে ও কণ্ঠে তোলার কাজটি তিনি ওস্তাদ মীর মোজাফফর আলীর কাছেই প্রথম শেখেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে লালন সাঁইজির গানের সঙ্গে ফরিদার সংযোগ ঘটে। তখন তিনি কুষ্টিয়াতে থাকতেন। সেখানে তাদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন গুরু মোকছেদ আলী সাঁই। ১৯৭৩ সালে ফরিদা তার কাছেই 'সত্য বল সুপথে চল' গান শিক্ষার মাধ্যমে লালন সাঁইজির গানের তালিম নেন।

পরে মোকছেদ আলী সাঁইয়ের মৃতু্যর পর খোদা বক্স সাঁই, ব্রজেন দাস, বেহাল সাঁই, ইয়াছিন সাঁই ও করিম সাঁইয়ের কাছে লালন সঙ্গীতের শিক্ষা গ্রহণ করেন। ফরিদা পারভীনের কর্মজীবন সঙ্গীতময়। শুধু লালনের গান নয়, তিনি একাধারে গেয়েছেন আধুনিক এবং দেশাত্মবোধক গান। ফরিদা পারভীনের গাওয়া আধুনিক, দেশাত্মবোধক কিংবা লালন সাঁইয়ের গান সমানভাবেই জনপ্রিয়।

তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- 'এই পদ্মা, এই মেঘনা, এই যমুনা-সুরমা নদীর তটে', 'তোমরা ভুলেই গেছো মলিস্নকাদির নাম', 'নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে প্রেমের কী সাধ আছে বলো', 'খাঁচার ভিতর', 'বাড়ির কাছে আরশি নগর' ইত্যাদি।

সঙ্গীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান তিনি। এছাড়াও, ২০০৮ সালে তিনি জাপান সরকারের পক্ষ থেকে 'ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার' পুরস্কার পান। ১৯৯৩ সালে সেরা পেস্ন-ব্যাক গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। শিশুদের লালনসঙ্গীত শিক্ষার জন্য 'অচিন পাখি স্কুল' নামে একটি গানের স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে