শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

একুশে পদক পাচ্ছেন ফেরদৌস আরা

বিনোদন রিপোর্ট
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
একুশে পদক পাচ্ছেন ফেরদৌস আরা
একুশে পদক পাচ্ছেন ফেরদৌস আরা

কিংবদন্তি নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস আরা। যিনি ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে গান গাইতে পারেননি। অংশ নিতে পারেননি কোনো অনুষ্ঠানে। ভিন্ন মতের হওয়ায় বিগত সরকারের আমলে কালো তালিকাভুক্ত ছিলেন তিনি।

কিছুদিন আগে এমনই আক্ষেপের কথা প্রকাশ করেছিলেন ফেরদৌস আরা। এই কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী বলেছিলেন, 'একজন শিল্পীকে এত বছর পারফর্ম করতে না দেওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। শিল্পীকে তার প্রতিভা থেকে দমিয়ে রাখা যায় না। আমার জুনিয়ররা নিয়মিত বিটিভিতে গান করছেন, কিন্তু বিটিভি-বেতারের সব প্রোগ্রাম থেকে আমাকে কেন বাদ দেওয়া হয়েছে তা আমি জানি না। আমার ধারণা, যারা আমাকে 'না' করেছেন, তারাও জানেন না কেন আমাকে অনুষ্ঠানে নেওয়া হয়নি। আমাকে কেন নিষিদ্ধ করা হলো? একজন শিল্পীকে কেন শাস্তি দেওয়া হলো? সম্মানের বদলে কেন অসম্মান করা হবে? কেউ আমাকে বলতে পারেনি কেন আমাকে প্রোগ্রাম দেওয়া হচ্ছে না। কারা বাদ দিয়েছে, কেন দিয়েছে। এসব কারণ আমাকে জানানো হয়নি।'

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবারও ফেরদৌস আরা বিটিভি ও বেতারের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। হাসিনার বিদায়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আবারও সরকারি অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রণ পেতে শুরু করেছেন তিনি। নজরুল ইনস্টিটিউটের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন। এবার পাচ্ছেন রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ বছর ১৫ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়। সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী মনোনীতদের নাম প্রকাশ করেন।

এই তালিকায় নিজের নাম দেখার তাৎক্ষণিক অনুভূতি প্রকাশ করে ফেরদৌস আরা বলেন, 'একুশে পদক পাওয়ায় আমি ভীষণ আনন্দিত। এই অনুভূতি সত্যিই প্রকাশের ভাষা নেই। আমার দীর্ঘ সঙ্গীত ক্যারিয়ারে যারা পাশে ছিলেন, শ্রোতা, ভক্ত, অনুরাগী এবং আমার পরিবারের সবার কাছেই কৃতজ্ঞতা জানাই। একজন শিল্পী হিসেবে এমন পুরস্কারে দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। সবার কাছে দোয়া চাই, যেন সুস্থ থেকে গান করে যেতে পারি।

তিনি বলেন, 'স্বীকৃতি ব্যাপারটা কাগজ-কলমের। কিন্তু মানুষের ভালোবাসাটাই একজন শিল্পীর জন্য বড় পাওয়া। মানুষ ভালোবাসে বলেই গান গেয়ে যেতে পারছি। মাঝে কিছু অনুষ্ঠানে এমনও হয়েছে, মানুষ বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নিয়ে আসছে শুধু দেখার জন্য। এমন পরিস্থিতি হয়েছে, তাদের জন্য তিনটি রাস্তার মোড় আটকে রাখতে হয়েছিল। এই যে মানুষের ভালোবাসা সেটা তো অ্যাওয়ার্ডে পাওয়া যায় না। তবে স্বীকৃতি শিল্পীসত্তার পূর্ণতা দেয়।'

অনেক আগেই তিনি এই পুরস্কার পাওয়ার দাবিদার ছিলেন বলে মনে করেন ফেরদৌস আরা। তার মতে, "আমার সন্তানের বন্ধুরাও অনেক সময় বলতো, 'তোমার আম্মা যে মাপের শিল্পী তার তো এ ধরনের বড় পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল'। যাইহোক আলস্নাহ তা'আলার রহমতে একুশে পদক পেয়েছি, এটাই বড় ভালোগার ব্যাপার।"

ফেরদৌস আরার এর চেয়ে বেশি ভালোলাগা কাজ করছে এটা ভেবে যে, কোনো দলের ব্যানারের ছায়াতলে থেকে পুরস্কারটি পাননি তিনি। তার কথায়, "অনেককেই বিগত সময়ে বলতে শুনেছি-'আওয়ামী লীগ করেছি বলেই পুরস্কার পেয়েছি'। এতে পুরস্কারকে আরও অসম্মানিত করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। সেই জায়গায় কোনো দলের হয়ে নয়, বিনা শর্তে, স্বাধীন চিত্তে একুশে পদক পেয়েছি, এটা আমার কাছে পরম শান্তির। "

দেশের নজরুলসঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে যে ক'জন প্রথিতযশা পেশাদার নজরুলসঙ্গীত শিল্পী রয়েছেন, তাদের অন্যতম একজন ফেরদৌস আরা। সব ধরনের গান গাইলেও নজরুলসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। চার যুগেরও বেশি সময় ধরে সঙ্গীতচর্চা করছেন এই শিল্পী। উজবেকিস্তানে জাতিসংঘ আয়োজিত লোকসঙ্গীত উৎসবে নজরুলসঙ্গীত গেয়ে পুরস্কৃত হয়েছিলেন তিনি।

ফেরদৌস আরা বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন অধ্যাপনা, নজরুল ইনস্টিটিউটে নজরুলসঙ্গীতের প্রশিক্ষক, সঙ্গীত অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, লেখালেখি, পেস্ন-ব্যাকের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। সঠিকভাবে নজরুল এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতচর্চার জন্য এ শিল্পী ২০০০ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডে গড়ে তোলেন সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান 'সুরসপ্তক'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে