বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

আইসিইউতে লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন

বিনোদন রিপোর্ট
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
আইসিইউতে লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন
আইসিইউতে লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন

দেশের প্রখ্যাত লালনশিল্পী ফরিদা পারভীন গুরুতর অসুস্থ। তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। শিল্পীর স্বামী যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পী গাজী আবদুল হাকিম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শনিবার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ফরিদা পারভীন। এরপর জরুরি ভিত্তিতে তাকে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গাজী আবদুল হাকিম জানান, ফরিদা পারভীনকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। তার ফুসফুসে পানি জমেছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি জটিলতা রয়েছে।

ফরিদা পারভীনের দায়িত্বরত চিকিৎসক আশীষ কুমার চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বলেন, তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে তিনি ভোরে ভর্তি হয়েছেন। প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার ফুসফুস আক্রান্ত, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং থাইরয়েডের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত কিছু সমস্যা আছে। বর্তমানে বক্ষব্যাধি, কিডনি এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি। তার অবস্থা কিছুটা জটিল। আমরা ডায়ালাইসিসের পরামর্শ দিয়েছি।

এর আগে, ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ফরিদা পারভীন। ওই বছরের ৮ এপ্রিল তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বাসা থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১২ এপ্রিল তাকে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার ৫০ শতাংশ ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সুস্থ হয়েই ফিরেছিলেন এই কিংবদন্তি শিল্পী।

১৯৫৪ সালে ফরিদা পারভীনের জন্ম নাটোর জেলার সিংড়া থানার শাঔঁল গ্রামে। জন্ম নাটোরে হলেও তিনি বড় হয়েছেন কুষ্টিয়ায়। তবে প্রাতিষ্ঠানিক স্কুল জীবন কেটেছে বিভিন্ন শহরে। স্কুল জীবনের সূচনা হয়েছিল মাগুরায়। তিনি কুষ্টিয়া গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল, কুষ্টিয়ার মীর মোশাররফ হোসেন বালিকা বিদ্যালয় এবং মেহেরপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলে অধ্যয়ন করেন।

কুষ্টিয়ার মীর মোশাররফ হোসেন বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৪ সালে কুষ্টিয়া গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। এরপর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৭৬-৭৯ সালে অনার্স পাস করেন।

মাগুরায় ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে ফরিদা পারভীনের গানের হাতেখড়ি। পরবর্তী সময়ে তিনি কুষ্টিয়ার তখনকার গানের ওস্তাদ রবীন্দ্রনাথ রায়, মোতালেব বিশ্বাস এবং ওসমান গণির কাছে ক্ল্যাসিক্যাল শেখেন। প্রায় ছয়-সাত বছর তানপুরার সঙ্গে ক্ল্যাসিক্যাল চর্চা করার পর তিনি নজরুল সঙ্গীত শিখতে শুরু করেন।

তার নজরুল সঙ্গীতের প্রথম গুরু হচ্ছেন কুষ্টিয়ার ওস্তাদ আবদুল কাদের। এরপর তিনি মেহেরপুরে মীর মোজাফফর আলীর কাছেও নজরুল সঙ্গীত শেখেন। স্বরলিপি দিয়ে নজরুলের গান হারমোনিয়ামে ও কণ্ঠে তোলার কাজটি তিনি ওস্তাদ মীর মোজাফফর আলীর কাছেই প্রথম শেখেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে লালন সাঁইজির গানের সঙ্গে ফরিদার সংযোগ ঘটে। তখন তিনি কুষ্টিয়াতে থাকতেন। সেখানে তাদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন গুরু মোকছেদ আলী সাঁই। ১৯৭৩ সালে ফরিদা তার কাছেই 'সত্য বল সুপথে চল' গান শিক্ষার মাধ্যমে লালন সাঁইজির গানের তালিম নেন।

পরে মোকছেদ আলী সাঁইয়ের মৃতু্যর পর খোদা বক্স সাঁই, ব্রজেন দাস, বেহাল সাঁই, ইয়াছিন সাঁই ও করিম সাঁইয়ের কাছে লালন সঙ্গীতের শিক্ষা গ্রহণ করেন। ফরিদা পারভীনের কর্মজীবন সঙ্গীতময়। শুধু লালনের গান নয়, তিনি একাধারে গেয়েছেন আধুনিক এবং দেশাত্মবোধক গান। ফরিদা পারভীনের গাওয়া আধুনিক, দেশাত্মবোধক কিংবা লালন সাঁইয়ের গান সমান ভাবেই জনপ্রিয়।

তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- 'এই পদ্মা, এই মেঘনা, এই যমুনা-সুরমা নদীর তটে', 'তোমরা ভুলেই গেছো মলিস্নকাদির নাম', 'নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে প্রেমের কী সাধ আছে বলো', 'খাঁচার ভিতর', 'বাড়ির কাছে আরশি নগর' ইত্যাদি।

সঙ্গীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান তিনি। এছাড়াও ২০০৮ সালে তিনি জাপান সরকারের পক্ষ থেকে 'ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার' পুরস্কার পান। ১৯৯৩ সালে সেরা পেস্ন-ব্যাক গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। শিশুদের লালনসঙ্গীত শিক্ষার জন্য 'অচিন পাখি স্কুল' নামে একটি গানের স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে