বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ফেলানী যখন ঝুলছিলেন কার অবমাননা হচ্ছিল তখন : কবীর সুমন

'আকারে বড় দেশগুলো মনে করে তারা তাদের আকারে ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর মুরব্বি। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে সে কিউবা, হাইতির বড়দা। পুয়ের্তো রিকোকে তো বড়দা অঙ্গরাজ্য মনে করে। ভারত মনে করে সে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, নেপাল, মালদ্বীপের বড়দা।' অর্থাৎ বড় দেশ হিসেবে ভারত যে বাংলাদেশের ওপর যুগের পর যুগ খবরদারি করে আসছে এবং এখনো সেই চেষ্টা করছে
বিনোদন ডেস্ক
  ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ফেলানী যখন ঝুলছিলেন কার অবমাননা হচ্ছিল তখন : কবীর সুমন
কবীর সুমন

উপমহাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন। ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশেই সমান জনপ্রিয়। গানের পাশাপাশি তিনি সমাজের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা বলেন। বাদ যায় না বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিও। সমসাময়িক বিষয় তাকে আলোড়িত করলে মন্তব্য করতে কসুর করেন না। সম্প্রতি 'পতাকার অবমাননা' নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি তরজা। পাশাপাশি হাসিনার

পতনের পর দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক

টানাপড়েন তো চলছেই।

এমনিতেই বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও বরাবরই সরব। ভারতীয় হলেও প্রতিবেশী এই দেশটির প্রতি তার একটা আলাদা টান রয়েছে। নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেশটির নানা ঘটনা নিয়ে নিজের মত দেন। কখনো সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে লিখেছেন, কখনো বা সেটা তুলে ধরেন গানের লাইনে। শুধু তাই নয়, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পতন আন্দোলনের শুরু থেকেই সরব ছিলেন তিনি। সর্বদা শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের সঙ্গে পূর্ণ সমর্থন জুগিয়ে এসেছেন। গান বেঁধেছেন শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থা 'স্বৈরাচারবিরোধী' নামেও। আবারও বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ইঙ্গিত করে ফেসবুকে পোস্ট দিলেন কবীর সুমন।

আগে-পিছে কোনো মেনশন ছাড়াই কবীর সুমন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন- 'তোরা ধর্ম আর রাজনীতি নিয়ে ঝগড়া কাজিয়া ক'রে মর আমি প্রেম করছি, প্রেম ক'রে যাবো।'

ওদিকে স্বদেশি কবি, গীতিকার ও নির্মাতা শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কবিতা নিয়ে শুক্রবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড়। বাংলাদেশ নাকি ভারতের পতাকার নিচে কবে ছিল! কবীর সুমন তার লেখাটি সরাসরি না লিখলেও বোঝা যাচ্ছে, তার কবিতাটি তিনি লিখেছেন ধারাবাহিকভাবে চলে আসা ওই প্রতিক্রিয়ারই জেরে। কেননা তার ওই কবিতার প্রতিবাদে ফেসবুকে শুক্রবার রাত থেকে পোস্ট দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের অনেক লেখক, কবি ও শিল্পী।

কবীর সুমনের করা পোস্ট দুটিতে কারও নাম উলেস্নখ করেননি। তবে নেটিজেনরা কমেন্ট বক্সে লিখেছেন, পোস্ট দুটি ওপার বাংলার আরেক কবি, লেখক ও গীতিকার শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ করে দেওয়া। কারণ সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকা অবমাননা নিয়ে একটি আপত্তিকর পোস্ট দেন।

ওই পোস্টে শ্রীজাত কবিতার ভাষায় বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে লেখেন, 'শুশ্রূূষা ও জল নিয়ে কী সহজে ভুলে গেলে ঋণ! /যে-পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই অংশ ছিলে একদিন।/ভাষা তো নিশ্চয়ই প্রিয়। তারও চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি।/আমাকে 'বাঙালি' থেকে 'ভারতীয়' করে তুললে তুমি।/ভালোবাসা-বিরোধের মাঝখানে সরু একটা সুতো/ তাকে যদি তুলে নাও, অন্যভাবে কথা হবে দ্রম্নত।/এত যদি দ্বেষ থাকে, যদি এত ঘৃণা হয় জড়ো-/তবে তো সওয়াল ওঠে, ক্ষমা কি দেশের চেয়ে বড়?/নামেই স্বাধীন তুমি। চেতনায় আজও পরাধীন।/ যে পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই নিচে ছিলে একদিন।'

নেটেজিনরা কবীর সুমনের পোস্টের নিচে স্পষ্ট করেই লিখেছেন, পোস্ট দুটি তিনি শ্রীজাতের কবিতার প্রতিবাদ জানিয়েই দিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলায় সবাই তার ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন।

সেই লেখাটিরই ধারাবাহিকতায় শনিবার কবীর সুমন ফেসবুকে একটি কবিতা লিখে নানান প্রশ্ন করেছেন। সুমনের এই লেখায় কাঁটাতারের সীমান্তে ফেলানিকে হত্যার বিষয়টিও উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেন, 'সীমান্তে কাঁটাতার বেড়া থেকে ফেলানি যখন ঝুলছিলেন, কিসের কার অবমাননা হচ্ছিল তখন।'

সেটা তখন কোন পতাকা পিষে যাচ্ছিল ফেলানি,

কোন পতাকার নিচে ছিল সে একদিন? এই ঘটনার

পর তিনি যে 'ফ্ল্যাগহীন কোনো দেশ' খুঁজে পাওয়ার আশা রাখেন সেই কথা জানাতেও ভুললেন না তিনি। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তাদের বিরোধিতা করে তকমা দিলেন উজবুকের।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কুড়িগ্রামের অনন্তপুর-দিনহাটায় খিতাবের কুঠি এলাকায় ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সদস্যরা ১৪ বছরের ফেলানি খাতুনকে গুলি করে হত্যা করে। বিএসএফ ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের জোয়ানদের এ ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়। হত্যার পর সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে কাঁটাতারে ঝুলন্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয় ফেলানির লাশ। পরে তারা লাশটি নামিয়ে নিয়ে যায়। দুই দিনব্যাপী পতাকা বৈঠক শেষে হত্যার ৩০ ঘণ্টা পর ফেলানির লাশ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।

এ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেই কবীর সুমন লিখেছেন-

কতগুলো উজবুক পতাকা মাড়ালো

বিজ্ঞরা তাই বস্নাড প্রেশার বাড়ালো।

পতাকার চেয়ে বড় ফেলানির বুক

সেটা তাক করেছিল কার বন্দুক।

কাঁটাতারে ঝুলছিল মেয়েটা আমার

দেশের বুলেট দেশপ্রেমের খামার।

কার দেশ কার ফ্ল্যাগ কার কাঁটাতার

কোথায় রইল ঝুলে ফেলানি আমার।

পরের জন্মে মেয়ে আমি আর তুমি

ফ্ল্যাগহীন কোনও দেশে খুঁজে পাবো ভূমি।

আমার সঙ্গে গান গাইবে তুমিও

গাইবে অন্য কোনও

জন্মভূমিও।।

কবীর সুমন শেষে আরও লিখেছেন, পরের জন্মে যে ফেলানির বাবা হবে আর আবু সাঈদের মতো ঘাতকের সামনে বুক পেতে দেবে। জয় ভালোবাসা।

সুমন এই লেখায় কারও নাম নেননি, তবে অনেকেই মনে করছেন তিনি মূলত এটি লিখেছেন শ্রীজাতকে উদ্দেশ করেই। পোস্টের কমেন্ট ঘরে সেটা লিখেছেন অনেক অনুসারী।

সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কবীর সুমনের আরেকটি ফেসবুক পোস্ট করেছেন গতকাল রোববার সকালে। তিনি সেখানে লিখেছেন-

কোন্‌ পতাকায় লাথি দেয় কেউ

কোন্‌ পতাকায় ফুল

আমার প্রেমের পতাকা তোমার

এলোমেলো হওয়া চুল

পতাকায় নয় কিছুই শুরু

পতাকায় নয় শেষ

আমিই ভারতবর্ষ প্রিয়া

আমিই বাংলাদেশ

কারা করে কার অপমান প্রিয়া

কতগুলো উজবুক

আদরে আদরে এঁকে দেবো চলো

সবার দেশের মুখ

ভুলে যাই কেন একজন ক্রুশে

ঝুলেছেন একা একা

সকলের হয়ে, চলো প্রিয়তমা

যদি পাই তার দেখা

তিনি বলবেন এসো হাত ধরো

শত্রম্নতা ভুলে যাও

পতাকার চেয়ে ভালোবাসা বড়

প্রেমের গানটা গাও।

এর আগে শুক্রবার দেওয়া আরেকটি পোস্টে কবির সুমন লেখেন, 'আকারে বড় দেশগুলো মনে করে তারা তাদের আকারে ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর মুরব্বি। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে সে কিউবা, হাইতির বড়দা। পুয়ের্তো রিকোকে তো বড়দা অঙ্গরাজ্য মনে করে। ভারত মনে করে সে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, নেপাল, মালদ্বীপের বড়দা।'

অর্থাৎ বড় দেশ হিসেবে ভারত যে বাংলাদেশের ওপর যুগের পর যুগ খবরদারি করে আসছে এবং এখনো সেই চেষ্টা করছে, কবীর সুমন তার পোস্টে সেদিকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত করেছেন। এই পোস্টের কমেন্ট বক্সেও তাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশি নেটিজেনরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে