শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

মঞ্চে অভিনয় না করা নিয়ে ক্ষোভ মামুনুর রশীদের

বিনোদন রিপোর্ট
  ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মঞ্চে অভিনয় না করা নিয়ে ক্ষোভ মামুনুর রশীদের
.

পরিস্থিতি অনুকুল না হওয়ায় শিল্পকলার মঞ্চে অভিনয় থেকে নাট্যজন মামুনুর রশীদকে সাময়িক দূরে থাকার অনুরোধ করেছেন একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। মহাপরিচালকের এমন অনুরোধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। এ প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, 'শিল্পকলার ডিজি সাহেব ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন, আমি যাতে শিল্পকলায় অভিনয় না করি। 'রাঢ়াঙ' নাটকের ২০০তম প্রদর্শনী হয়েছে। এখন আমাকে বলা হচ্ছে, এই নাটকে যেন অভিনয় না করি। কারণ, হিসেবে তিনি ছাত্র আন্দোলনের সময় দেওয়া ২৪ জন বিশিষ্টজনের একটি বিবৃতির কথা জানিয়েছেন। আমি কিন্তু সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমিতে 'ময়ূর সিংহাসন' নাটকে অভিনয় করেছি, মহিলা সমিতির মঞ্চেও অভিনয় করেছি, তাতেও কোনো সমস্যা হয়নি। শিল্পকলা একাডেমির অসুবিধার জায়গাটা কোথায়? অবশ্যই অসুবিধার একটা জায়গা আছে। কারণ হলো 'নিত্যপুরাণ'কে তারা বন্ধ করেছে, পরে এর প্রতিবাদ সভায় আমার ওপর হামলা করেছে। পরদিন আমাদের শো ছিল, কিন্তু তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলাম। তখন থেকেই এই কথাগুলোর সূচনা হলো, আমি যদি অভিনয় করি তাহলে হামলা হবে।' মঞ্চে অভিনয় না করার এমন অনুরোধে ক্ষোভ জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, 'আমি কি অভিনয় করতে পারব না! আমার কোনো অপরাধ নেই, অথচ আমাকে অভিনয় করতে দেবে না। রাজাকার স্স্নোগান নিয়ে ২৪ জন বিশিষ্টজন বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেখানে আমার নাম ছিল। ওই বিবৃতিতে কি অপরাধ আছে? এখন তো বলা হচ্ছে, আপনারা কথা বলেন। সেই কথাই বলতে পারব না? এমন একটা সময় চলে এসেছে এই বাংলাদেশে, একটি মহল তো চাচ্ছেই শিল্পসাহিত্য-সংস্কৃতি বন্ধ হয়ে যাক। আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি, রাঢ়াঙ আমরা করব না, 'কম্পানি' ও করব না। চলুক যত দিন এই ব্যবস্থা চলে।' এটা ঠিক যে, পাশ্চাত্যে যা ফ্যাসিস্ট একাত্তরে তাই 'রাজাকার' হিসেবে দেখা যায়। আশ্চর্যে ব্যাপার এখন কোথাও ফ্যাসিস্ট বলতে একতরফাভাবে মুসোলিনী ও তার সহযোগীদেরই বোঝায় না তারা যেসব কাজের জন্য ফ্যাসিস্ট পরিচয় পেয়েছেন সেই পরিচয় যদি অন্য কোথায় দেখা যায় তখন তাদেরকেও ফ্যাসিস্ট বলা হয়। কিন্তু এখানে কিছু মহল 'রাজাকার' বলতে একতরফাভাবে একটা গোষ্ঠীকেই চালিয়ে দিচ্ছে। এই শব্দটির ভাষাগত সমস্যার কারণেই এখানকার প্রগতিশীল ও আওয়ামী লীগের লোকেরা এমনটি করছে। ফ্যাসিস্টের মতো ইংরেজি হলে তা কিন্তু হতো না। কিন্তু তার ভাষাগত অর্থ না জানুক একাত্তরে রাজাকাররা যা করেছে একই কাজ পরে অন্যেরাও করলে তারাও কেন ফ্যাসিস্টের মতো রাজাকার হবে না? ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপস্নবের বিরোধী কারা? একাত্তরের বিরোধীরা যদি রাজাকার হয় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিরোধীরা একইভাবে রাজাকার হবে না কেন? এই ব্যাখ্যাই তাদের কাছে নেই। মুসোলিনীর ফ্যাসিস্ট যদি চিরকালীন হয় তবে রাজাকার কেন চিরকালীন হবে না, শুধু একাত্তরকালীনই হবে? ফলে জনগণকে ৫৩ বছর ধরে বোকা বানিয়ে একতরফাভাবে শব্দটি নিজেদের জন্য ব্রহ্মাস্ত্র বানিয়ে অর্থহীন বিমূর্তভাবে চালিয়ে দিচ্ছে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে। বুঝে হোক বা না বুঝে হোক, মামুনুর রশিদের মতো রাজনৈতিক সচেতনরাও যদি এমন ভুল করেন তখন স্বাভাবিকভাবেই যারা এটা আপেক্ষিকভাবেও বুঝেন তাদের সাথে একটা বোঝাপড়ার সমস্যা হয়। এদিকে শিল্পকলায় মামুনুর রশীদের অভিনয় করা থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, 'আমি মামুনুর রশীদকে নিজে ফোন করে তাদের রাঢ়াঙ নাটকের শো করতে বলেছিলাম। এই নাটকটি করা দরকার। এই নাটকে উনি ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেন। তাকে অনুরোধ করেছি, সেই চরিত্রটি যদি অন্য কাউকে দিয়ে করানো যায়। কারণ, আপনি যেহেতু আন্দোলনের সময় রাজাকার নিয়ে কিছু বলেছিলেন, এটা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ, কষ্ট আছে। আপনি গেলে মানুষের সেই কষ্টটা বাড়বে। সেই জন্য আপনি ছাড়া যদি নাটকটির প্রদর্শনী সম্ভব হয়, এটা আপনি দেখেন।' মামুনুর রশীদ একাধারে নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে সমান তালে কাজ করে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। ইতোমধ্যে পাঁচ দশকের বেশি সময় অভিনয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন এই অভিনেতা। মামুনুর রশীদ তার নাটকে শ্রেণিসংগ্রাম, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক ইসু্য তুলে ধরেন। লেখা ও নির্দেশনার মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন নাট্যজগতে অপরিহার্য একজন। স্কুলজীবনে অভিনয় করতেন মামুনুর রশীদ। অভিনয়ের নেশা তখনই তৈরি হয় এই অভিনেতার। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ার সময়ই মামুনুর রশীদ তার প্রথম নাটক লেখেন। নাটকটির নাম- 'মহানগরীতে একদিন'। তবে অভিনয় পেশা হবে, এমনটা কোনো দিন ভাবেননি তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভাবলেন, অভিনয়টাই জীবিকা হবে তার। ১৯৬৭ সালে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতে শুরু করেন মামুনুর রশীদ। তবে তার নাটকের বিষয়বস্তু ছিল মূলত পারিবারিক। সে সময় কমেডি নাটকও লিখতেন এই অভিনেতা। নাট্যশিল্পের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা শুরু হয় টাঙ্গাইলে তার নিজ গ্রামে যাত্রা ও লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে অভিনেতার নিবিড় পরিচয়ের সূত্র ধরে। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং জড়িত হন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধকালীন তার প্রথম রচিত নাটক 'পশ্চিমের সিঁড়ি' কলকাতার রবীন্দ্রসদনে মঞ্চায়নের চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগেই ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনতা অর্জন করায় নাটকটি আর তখন মঞ্চায়িত হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে মঞ্চায়িত হয় নাটকটি। সেই সময়টাও তার নাট্যচর্চায় প্রতিফলিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। মুক্তিযুদ্ধের পর শুরু হয় তার আরেক নাট্যসংগ্রাম 'মুক্ত নাটক আন্দোলন'। ১৯৭২ সালে কলকাতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেই মামুনুর রশীদ তৈরি করেন 'আরণ্যক নাট্যদল'। মামুনুর রশীদের উলেস্নখিত মঞ্চ ও টিভি নাটকগুলো হলো- মঞ্চ- 'পশ্চিমের সিঁড়ি', 'গন্ধর্ব নগরী', 'ওরা কদম আলী', 'অববাহিকা', 'জয় জয়ন্তী', 'সংক্রান্তি', 'বনাম রাঢাং'। ধারাবাহিক টিভি নাটক- 'অলসপুর', 'সুন্দরী' ও 'মুর্দা ফরেশ'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে