মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ভালো গল্পের অপেক্ষায় ববিতা

বিনোদন রিপোর্ট
  ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ভালো গল্পের অপেক্ষায় ববিতা

ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা। নির্মাতা জহির রায়হানের 'সংসার' সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিষেক হয় তার। নায়িকা হিসেবে ববিতার প্রথম সিনেমা 'শেষ পর্যন্ত'। ষাটের দশকের শেষদিকে ববিতার অভিনয়ের শুরু। প্রথম সিনেমায় চিত্রনায়িকা বড় বোন সুচন্দার ছোট বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ববিতা। 'সংসার' নামের সেই ছবিতে সুচন্দার নায়ক ছিলেন রাজ্জাক। এর পরপরই 'শেষ পর্যন্ত' নামের একটি চলচ্চিত্রে নায়িকা হন ববিতা, যেটির নায়ক রাজ্জাক। 'জ্বলতে কি সুরুজ' চলচ্চিত্রে বাবা-মায়ের ফরিদা আকতার পপি হয়ে ওঠেন ববিতা নামে। এভাবেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ববিতার পথচলা শুরু। সেই যে শুরু, এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত অভিনয় চালিয়ে গেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন। আলোচিত সিনেমা 'টাকা আনা পাই' ববিতাকে চলচ্চিত্রের শক্ত আসন দিলেও তার জীবনের সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য সিনেমা বলা হয় সত্যজিৎ রায়ের 'অশনি সংকেত'কে। এ সিনেমায় অভিনয় করে ববিতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দারুণ প্রশংসা অর্জন করেন।

ষাটের দশকে শেষদিকে অভিনয় শুরু করা ববিতাকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বড় পর্দায় দেখা গেছে। নার্গিস আক্তারের 'পুত্র এখন পয়সাওয়ালা' ছিল তার সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র। এরপর আর কোনো চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি তাকে। তবে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব যে পাননি তা নয়। এ বছর মুক্তি পাওয়া 'রাজকুমার' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবও পেয়েছিলেন বরেণ্য এই চিত্রনায়িকা। কিন্তু ব্যস্ততার পাশাপাশি মনের মতো চরিত্র না পাওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন তখন। ববিতার মতে, অভিনয় তো করতে চাই, কিন্তু নায়কের মা কিংবা নায়িকার মা- এমন চরিত্রে নয়। এমন চরিত্র হতে হবে, যা পুরো গল্পে প্রভাব বিস্তার করবে।

বর্তমানে এ অভিনেত্রী প্রায় ৯ বছর থেকে রুপালি পর্দা থেকে দূরে রয়েছেন। তবে বিভিন্ন সময়ে প্রযোজক-পরিচালকরা তার কাছে সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব নিয়ে গেছেন।

গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানান, চলচ্চিত্রের কারণেই দেশ-বিদেশে তিনি মানুষের কাছে পরিচিত পেয়েছেন। ভালো কোনো গল্প পেলে মন-প্রাণ দিয়ে কাজ করবেন। গত কয়েক বছরে তেমন কোনো গল্প পাননি বলেও এ অভিনেত্রী জানান। সিনেমার গল্প ও অভিনয় প্রসঙ্গে ববিতা বলেন, 'একেবারে নতুন আঙ্গিকের মৌলিক কোনো গল্প না পেলে আমি আর অভিনয় করতে চাই না। গত ৯ বছরে অনেক নির্মাতাই আমাকে সিনেমার গল্প শুনিয়েছেন।' এরপর তিনি বলেন, 'কোনো গল্পই সেই অর্থে আমার ভালো লাগেনি। আমি এখনো তেমন এক গল্পের অপেক্ষায় আছি, সে গল্পে অভিনয় করার জন্য মন-প্রাণ উজাড় করে কাজ করব।'

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ২৫০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেন এ অভিনেত্রী। স্বীকৃতিস্বরূপ একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

ববিতা অভিনীত উলেস্নখযোগ্য সিনেমার তালিকায় রয়েছে- 'অশনি সংকেত', 'নিশান', 'মিন্টু আমার নাম', 'প্রতিজ্ঞা', 'লাভ ইন সিঙ্গাপুর', 'মায়ের জন্য পাগল', 'টাকা আনা পাই', 'স্বরলিপি', 'তিনকন্যা', 'শ্বশুরবাড়ি', 'মিস লঙ্কা', 'জীবন সংসার', 'লাইলি মজনু', 'গোলাপি এখন ট্রেনে', 'লাঠিয়াল', 'জন্ম থেকে জ্বলছি' প্রভৃতি।

ববিতা ১৯৯৬ সালে প্রযোজনা করেন 'পোকামাকড়ের ঘর বসতি' সিনেমা। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেন আখতারুজ্জামান। ববিতা এই ছবিতে অভিনয়ও করেন। তার বিপরীতে ছিলেন খালেদ খান এবং খলচরিত্রে অভিনয় করেন আলমগীর। ছবিটির জন্য ববিতা শ্রেষ্ঠ প্রযোজক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ছবিটি শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ আরও তিনটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। এই বছর তিনি পার্শ্ব চরিত্রে এম এ খালেক পরিচালিত স্বপ্নের পৃথিবী, শিবলি সাদিক পরিচালিত মায়ের অধিকার, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত জীবন সংসার এবং মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত দীপু নাম্বার টু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

ববিতা বাঙালি গীতিকবি হাছন রাজার জীবনী অবলম্বনে নির্মিত হাছন রাজা চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। ছবিটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ছবিতে তাকে হাছন রাজার মায়ের ভূমিকায় দেখা যায়। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে এবং ববিতা শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে