আমাকে অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে দিয়েছে :বেবী নাজনীন

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
নন্দিত সঙ্গীতশিল্পী বেবী নাজনীনকে একসময় নিয়মিত গানের ভুবনে পাওয়া গেলেও দীর্ঘদিন এই অঙ্গনে অনুপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ আট বছর পর ১০ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন এ শিল্পী। গায়িকার অভিযোগ, ১৬ বছর গান গাইতে দেওয়া হয়নি তাকে। যার ফলে তার আয়ের উৎসই বন্ধ হয়ে যায়। বিগত সরকারের আমলে কালো তালিকাভুক্ত করে রাখা হয়েছিল বেবী নাজনীনকে। বারবার গান করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। নানান নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন এই গায়িকা। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিগত সময়ের অত্যাচার, ক্ষোভ, আক্ষেপ নিয়ে মুখ খুলেছেন বেবী নাজনীন। পাশাপাশি নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন তিনি। বেবী নাজনীন বলেন, হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে কখনোই আমাকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমাকে বস্ন্যাকলিস্টেড করেছে, অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে দিয়েছে। একজন শিল্পী যখন প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হয়, তখন সে তো নিরাপদ নয়। বেঁচে থাকাটাও তো অনেক দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। গায়িকা বলেন, সে সময় আমার নাম দেখলেই কনসার্টের অনুমতি বাতিল করা হতো। পারিশ্রমিক ফেরত দিতে হয়েছে আমাকে। এমনও হয়েছে যে ৪০ লাখ টাকা পারিশ্রমিকও ফেরত দিয়েছি। কিন্তু আমার তো টাকা দরকার ছিল। আমার সন্তান পড়াশোনা করছে, আমার মা-বাবা অসুস্থ ছিল। আমরা সবাই একসঙ্গে থাকি। কিন্তু এত দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও আমি কাজ করার কোনো সুযোগই পাইনি, তাই আয়ের সুযোগ ছিল না। একজন শিল্পীকে কালো তালিকাভুক্ত করাটা অন্যায় দাবি করে তিনি বলেন, এটা অবশ্যই অনৈতিক কাজ। একজন শিল্পীকে কালো তালিকাভুক্ত করার পেছনে কোনো সৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। কারণ আমরা যারা মিউজিক করি, সেই মিউজিকের কোনো বাউন্ডারি নেই। একজন শিল্পী প্রাণ খুলে গাইবেন। শ্রোতা-দর্শক মুগ্ধ হয়ে গান শুনবে। সেখানে কেন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হবে! তার মানে হলো, সেই শিল্পীর সামাজিক জীবনকেও দুর্বিষহ করা। একজন শিল্পীকে বস্ন্যাকলিস্টেড করা মানে সংস্কৃতিকেই ধ্বংস করে দেওয়া। প্রবাস জীবনে চাইলেও গান রেকর্ড করে ইউটিউবে প্রকাশ করতে পারতেন। কিন্তু সেটা তিনি করেননি। কারণ তিনি জাতীয় একজন শিল্পী। ইউটিউবভিত্তিক কোনো শিল্পী নন বলেও জানান এই শিল্পী। ক্ষোভ প্রকাশ করে বেবী নাজনীন বলেন, 'এই সময়ে হয়তো দু-একটি গান করে ইউটিউবে ছেড়ে দিতে পারতাম। কিন্তু আমি তো ইউটিউবার আর্টিস্ট নই। আমি বাংলাদেশের জাতীয় আর্টিস্ট। আমার কাছে দেশের সম্মান জড়িয়ে আছে। আমি ইউটিউবে গিয়ে গাইব কেন? ১৬ বছর যদি আমাকে আটকে না রাখা হতো, তাহলে অনেক ভালো ভালো গান উপহার দিতে পারতাম।' সামনে নতুন গান প্রসঙ্গে বেবী নাজনীন বলেন, আমি শুরু থেকেই সময়ের সঙ্গে চলতে ভালোবাসি। তাই এ সময়ের গীতিকার-সুরকারদের মাধ্যমে আমি নতুন গান করতে চাই। আমি নিজেও নতুন গান করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। দেশের বাইরে থাকলেও রাজনীতিতে এখনো সক্রিয় বেবী নাজনীন। গত জুন মাসে বেবী নাজনীনকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনোনীত করা হয়। বিমানবন্দরে তিনি জানান, এখনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। ভবিষ্যতে দলীয় নির্দেশনা মেনেই কাজ করবেন। বেবী নাজনীনের গানে হাতেখড়ি বাবা মনসুর সরকারের কাছে। বাবা ছিলেন জাতীয় বেতার ও টেলিভিশনের একজন বিশেষ শ্রেণির যন্ত্রশিল্পী। পরে নিজ আগ্রহ ও উদ্যোগে সঙ্গীতের নানামুখী দীক্ষা নেন নাজনীন। মঞ্চে গাইতে শুরু করেছিলেন সাত বছর বয়স থেকে। ১৯৮০ সালে প্রথম পেস্নব্যাক করেন। এহতেশামের 'লাগাম' সিনেমার ওই গানটির সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন আজাদ রহমান। ১৯৮৭ সালে মকসুদ জামিল মিন্টুর সঙ্গীত পরিচালনায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম অ্যালবাম 'পত্রমিতা'। এই অ্যালবাম তার ব্যক্তিজীবন ও সঙ্গীতজীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। 'কাল সারা রাত', 'দুচোখে ঘুম আসে না', 'প্রেম করিলেও দায়', 'নিঃশব্দ সুর' অ্যালবামগুলো আধুনিক বাংলা গানে বেবী নাজনীনকে শক্ত অবস্থান করে দেয়। তার কণ্ঠে 'কাল সারা রাত ছিল স্বপনের রাত', 'এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল', 'দুচোখে ঘুম আসে না তোমাকে দেখার পর', 'মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে', 'কই গেলা নিঠুর বন্ধু রে সারা বাংলা খুঁজি তোমারে', 'পুবালী বাতাসে', 'ও বন্ধু তুমি কই কই রে'সহ অনেক জনপ্রিয় গান আজও মানুষের স্মৃতিতে রয়ে গেছে। তার সর্বশেষ একক অ্যালবাম 'বস্ন্যাক ডায়মন্ড বেবী নাজনীন'। দেশে তিনি গেয়েছেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের কোনো স্টেজে তাকে আর গাইতে দেখা যায়নি। সিনেমার গানের জন্য বেবী নাজনীন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে বহু সম্মানায় ভূষিত হয়েছেন। নিজে গান লিখেছেন। তার লেখা তিনটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে।