শুধু বাংলাদেশেই সরকার পতনে শোবিজ তারকারা বেকায়দায় পড়ে যান এমন নয়, বিশ্বের নানান দেশেই এটা হয়। চলচ্চিত্রের সোনালি যুগে এটা না দেখা গেলেও বর্তমানে যুগ পাল্টেছে। এখন চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, নাটক- শোবিজের সব শাখাতেই তারকারা নিজের পছন্দের রাজনীতিতে জড়িয়ে যান। আর নিজ দল ক্ষমতা হারালেও তারাও তাদের সব হারিয়ে বসেন। যেমন বাংলাদেশে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের পতনে। আওয়ামী সমর্থিত অনেক তারকা-শিল্পীই এখন পলাতক।
নানান সমীকরণ ও উত্তেজনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের মাধ্যমে শেষ হয়েছে মার্কিন নির্বাচন। ২৯৫ ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাম্প। এটা ছিল একেবারেই অভাবিত। কমলা হ্যারিস এত নিরঙ্কুশ ব্যবধানে হারবেন এটা কেউ কল্পনা করতে পারেননি। তাই এখন সমীকরণও হচ্ছে এত ব্যবধানে কেন হারলেন কমলা।
এদিকে ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, 'নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতে যাওয়ার পরে বহু হলিউড সেলিব্রিটিই মার্কিনমুলুক ছাড়তে চাইছেন।' তবে এটা আবার বাংলাদেশের মতো নয়। বাংলাদেশের মতো একটা স্বৈরাচার গণ-অভু্যত্থানে পতন হয়েছে এমন নয়। সম্পূর্ণ সাংবিধানিক বা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই সরকারের পালাবদল হয়েছে। কিন্তু তারপরও সে দেশের সেলিব্রিটিরা দেশ ছাড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে পলায়ন করছেন এমনও নয়। এবার তারকাদের সেই তালিকাটি দেখে নেওয়া যাক।
আমেরিকা ফেরেরা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন যে, তিনি ব্যাগ গোছানো শুরু করে দিয়েছেন। ৪০ বছর বয়সি ফেরেরা তার স্বামী রায়ান পিয়ার্স উইলিয়ামস এবং দুই সন্তান সেবাস্টিয়ান ও লুসিয়ার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে একটি নতুন জীবন শুরু করতে চলেছেন বলে জানিয়েছেন।
ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, 'সিস্টারহুড অব দ্য ট্রাভেলিং প্যান্ট'খ্যাত অভিনেত্রী তার সন্তানদের জন্য আরও ভালো জীবনের সন্ধানে রয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রে থেকে সম্ভব নয়।
কমলা হেরে যাওয়ার পর রীতিমতো বিধস্ত ফেরেরা নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেছেন, আমেরিকা সত্যিই অসুস্থ, তাই ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন।
শ্যারন স্টোনও ইতালিতে যাওয়ার কথা ভাবছেন। জুলাই মাসে, 'বেসিক ইনস্টিনক্ট'খ্যাত অভিনেত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, ইতালিতে একটি বাসা কেনার কথা বিবেচনা করছেন। শ্যারনের অভিযোগ, তার জীবনে এই প্রথম তিনি কাউকে দেখলেন যে কেউ ঘৃণা ও নিপীড়নের মাধ্যমে অফিসের জন্য দৌড়াচ্ছে।
এদিকে, গার্ডিয়ানের সঙ্গে ২০২৩ সালের একটি সাক্ষাৎকারে ৭৮ বছর বয়সি গায়ক এবং অভিনেত্রী সেই সঙ্গে ট্রাম্পের একজন কট্টর সমালোচক চের বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের নেতৃত্ব তার স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। ২০২৩ সালের একটি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, আমি আলসারে ভুগছি। সে যদি আবার ক্ষমতায় আসে এইবার আমাকে দেশ ছাড়তে হবে।
ব্রিটিশ অভিনেত্রী সোফি টার্নার, গেম অব থ্রোনসে তার ভূমিকার জন্য বিখ্যাত। ট্রাম্পের সম্ভাব্য ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া ছিল 'যদি এমনটা ঘটে আমি যুক্তরাজ্যে ফিরে যাব।'
২০১৬ সালে ওভাল অফিসের জন্য ট্রাম্পের প্রথম দৌড়ের সময়, 'দ্য ভিউ'-এ অভিনেতা রাভেন সাইমন জানিয়েছিলেন, যদি একজন রিপাবলিকান নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। যদিও তিনি সেই সময়ে পালিয়ে যাননি, তবে এই সময়ে নিজের এবং স্ত্রী মিরান্ডা ম্যাডের ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ভাবছেন তা এখনো প্রকাশ করেননি।
২২ বছরের বিলি আইলিশ প্রথম দিন থেকে হ্যারিসকে সমর্থন করে আসছেন। ফলাফল আসার পরে তার অনুগামীদের কাছে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিজে গিয়ে লেখেন, এটি নারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
সহশিল্পী আরিয়ানা গ্র্যান্ডে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তার হৃদয়বিদারক কথা শেয়ার করার জন্য তার নিজস্ব পস্ন্যাটফর্ম ব্যবহার করেছেন। তিনি লিখেছেন, প্রতিটি ব্যক্তি আজ ফলাফলের পরিণাম অনুভব করছেন।
২০১৬ সালে ট্রাম্প যখন প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলেন, অভিনেত্রী রাভেন-সাইমন জানিয়েছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে দেবেন। মার্কিনমুলুকে তার ভবিষ্যৎ নাকি অন্ধকার।
ইতোমধ্যে যিনি যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে গেছেন ৫৪ বছর বয়সি ব্রিটিশ অভিনেত্রী মিনি ড্রাইভার। চলতি বছরের জুলাই মাসেই 'দ্য টাইমস'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিনি জানিয়েছিলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসে তিন দশক থাকার পর ইউকেতে ফিরে গিয়েছেন মিনি। ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনার কথা আঁচ করে আগেই বলে দিয়েছেন, 'ট্রাম্প এলে আমি হয়তো আর ফিরব না।'
উলিস্নখিত তারকারা যে মার্কিনমুলুক ছাড়তে মনস্থ করেছেন এটা মূলত ট্রাম্পকে তারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে পছন্দ করছেন না সে জন্য। তারা বাংলাদেশের তারকাদের মতো অপরাধী হিসেবে দেশ ছাড়ছেন না। অনেকে আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন, ট্রাম্প যদি আবার ক্ষমতায় আসেন, তাহলে তারা দেশ ছাড়বেন।