অবশেষে দেশে ফিরছেন বেবী নাজনীন
বেবী নাজনীনের গানে হাতেখড়ি বাবা মনসুর সরকারের কাছে। বাবা ছিলেন জাতীয় বেতার ও টেলিভিশনের একজন বিশেষ শ্রেণির যন্ত্রশিল্পী। পরে নিজ আগ্রহ ও উদ্যোগে সঙ্গীতের নানামুখী দীক্ষা নেন নাজনীন। মঞ্চে গাইতে শুরু করেছিলেন সাত বছর বয়স থেকে
প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
'কোকিলকণ্ঠী' শব্দটির সঙ্গে যে নামটি জুড়ে আছে, তিনি বেবী নাজনীন। নব্বই-পরবর্তী আধুনিক বাংলা গানের ভুবন যার স্বরগ্রামের সঙ্গে উঠত, নামত, নাজনীন তাদের অন্যতম। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে তিনি নাম লেখান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনীতিতে। কোণঠাসা হয়ে একপর্যায়ে পাড়ি জমান বিদেশে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অবশেষে দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন। জানা গেছে, ১০ নভেম্বর সকাল ১০টায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন তিনি।
গত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনামলে বারবার বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হয় বেবী নাজনীনের সঙ্গীতজীবন। বাংলাদেশ বেতার, টিভি ও মঞ্চ, কোনো মাধ্যমেই গায়িকা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেননি। একপর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তবে আন্তর্জাতিকভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে বেবী নাজনীন সব সময়ই সমাদৃত। ফলে বিদেশের মাটিতে তার কাজকর্মে কোনো বাধা আসেনি, বরং এই সময়ে আমেরিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বস্নাক ডায়মন্ড বেবী নাজনীন।
সাড়ে চার দশকের ক্যারিয়ারে আধুনিক সঙ্গীতের অর্ধশতাধিক একক অডিও অ্যালবামসহ অসংখ্য দ্বৈত অডিও অ্যালবামে গান গেয়েছেন তিনি। ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আশা ভোঁশলে, বাপ্পি লাহিরী, কুমার শানু, কবিতা কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গেও একাধিক অডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে তার। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশেষ শ্রেণির তালিকাভুক্ত শিল্পী বেবী নাজনীন। চলচ্চিত্রে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন এ শিল্পী।
বেবী নাজনীনের গানে হাতেখড়ি বাবা মনসুর সরকারের কাছে। বাবা ছিলেন জাতীয় বেতার ও টেলিভিশনের একজন বিশেষ শ্রেণির যন্ত্রশিল্পী। পরে নিজ আগ্রহ ও উদ্যোগে সঙ্গীতের নানামুখী দীক্ষা নেন নাজনীন। মঞ্চে গাইতে শুরু করেছিলেন সাত বছর বয়স থেকে। ১৯৮০ সালে প্রথম পেস্নব্যাক করেন। এহতেশামের 'লাগাম' সিনেমার ওই গানটির সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন আজাদ রহমান। ১৯৮৭ সালে মকসুদ জামিল মিন্টুর সঙ্গীত পরিচালনায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম অ্যালবাম 'পত্রমিতা'। এই অ্যালবাম তার ব্যক্তিজীবন ও সঙ্গীতজীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
'কাল সারা রাত', 'দুচোখে ঘুম আসে না', 'প্রেম করিলেও দায়', 'নিঃশব্দ সুর' অ্যালবামগুলো আধুনিক বাংলা গানে বেবী নাজনীনকে শক্ত অবস্থান করে দেয়। তার কণ্ঠে 'কাল সারা রাত ছিল স্বপনের রাত', 'এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল', 'দুচোখে ঘুম আসে না তোমাকে দেখার পর', 'মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে', 'কই গেলা নিঠুর বন্ধু রে সারা বাংলা খুঁজি তোমারে', 'পুবালী বাতাসে', 'ও বন্ধু তুমি কই কই রে'সহ অনেক জনপ্রিয় গান আজও মানুষের স্মৃতিতে রয়ে গেছে। তার সর্বশেষ একক অ্যালবাম 'বস্ন্যাক ডায়মন্ড বেবী নাজনীন'। দেশে তিনি গেয়েছেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের কোনো স্টেজে তাকে আর গাইতে দেখা যায়নি। সিনেমার গানের জন্য বেবী নাজনীন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে বহু সম্মানায় ভূষিত হয়েছেন। নিজে গান লিখেছেন। তার লেখা তিনটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে।
দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয়া হবেন কি না জানলে চাইলে বেবী নাজনীন বলেন, 'গান শোনানোর পাশাপাশি আমি মানুষের সেবা করতে চাই। দেশে ফিরলে দল আমাকে যে দায়িত্ব দেবে, তা পালনে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। একটি সুন্দর দেশ গড়তে দলের হয়ে আমৃতু্য কাজ করে যেতে চাই।'