মনোবিজ্ঞানীর চরিত্রে আফজাল হোসেন
শুধু অভিনয় নয়, চিরতরুণ এই অভিনেতার রুচিবোধ, পোশাকের স্টাইল, নিজেকে উপস্থাপনের ভঙ্গি- সবই অনুকরণীয় নবীনদের কাছে। আজও তরুণদের ফ্যাশন আইকন হিসেবে অনুসরণীয় রয়েছেন আফজাল হোসেন।
প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
লেখক, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, চিত্রশিল্পী, নাট্য পরিচালক- এমনই বহুমুখী পরিচয়ে পরিচিত আফজাল হোসেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তার পরিচয় অভিনয়শিল্পী। মঞ্চ, টেলিভিশন, সিনেমার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন 'লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলমেন', 'কারাগার', 'পেটকাটা ষ' ও 'বোধ' সিরিজে। আবারও ওয়েব সিরিজে দেখা যাবে তাকে। ১৩ নভেম্বর ওটিটি পস্ন্যাটফর্ম বঙ্গতে মুক্তি পাবে নতুন সিরিজ 'মেসমেট'। এতে মনোবিজ্ঞানীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পাওয়া 'কারাগার ২' ওয়েব সিরিজে সর্বশেষ দেখা মিলেছিল আফজাল হোসেনের। এরপর শিহাব শাহীনের 'বাবা সামওয়ান'স ফলোয়িং মি' ওয়েব ফিল্মে অভিনয়ের কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত সরে যান। তারপর থেকে অভিনয়ে তেমন একটা দেখা যায়নি তাকে। ২০২২ সালে আফজাল হোসেন শুটিং করেছিলেন মেসমেটের। অবশেষে আলোর মুখ
দেখছে সিরিজটি।
পলাশ পুরকায়স্থর 'মেসমেট' উপন্যাস অবলম্বনে একই নামে সিরিজটি বানিয়েছেন জন মিল্টন। সম্প্রতি বঙ্গর ওয়েবসাইটে প্রকাশ পেয়েছে ট্রেলার। আড়াই মিনিটের ট্রেলারে দেখা গেছে, দুঃস্বপ্ন তাড়িয়ে বেড়ায় মামুনকে। স্বপ্নে সে মানুষের মৃতু্য দেখে। ভয়ানক বিষয় হলো, যেভাবে সে স্বপ্ন দেখে, সেভাবেই মানুষটি মারা যায়। পরামর্শ নিতে মামুন শরণাপন্ন হয় আফজালুর রহমান নামের এক মনোবিজ্ঞানীর। একসময় নিজেই নিখোঁজ হয় মনোবিজ্ঞানী। তাকে খুঁজতে গিয়ে গোয়েন্দা বিভাগ পড়ে অথৈ সাগরে।
নির্মাতা জন মিল্টন বলেন, 'উপন্যাস থেকে পর্দায় গল্প ফুটিয়ে তুলতে চিত্রনাট্যের কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। তবে মূল গল্প ও চরিত্রের প্যাটার্ন একই আছে। অভিনয়শিল্পীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সেটে আফজাল হোসেনকে দেখে অবাক হয়ে যেতাম। তিনি শুটিংয়ের সময় নির্মাতার কাছে নিজেকে শিশুর মতো সমর্পণ করেন।' সিরিজটি মুক্তির বিলম্ব প্রসঙ্গে জন মিল্টন জানান, পোস্ট-প্রোডাকশনে বেশি সময় লাগায় একটু দেরি হয়েছে।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অভিনেতা আফজাল হোসেন। নিজের গন্ডি ছাড়িয়ে হয়েছেন একাধারে অভিনেতা, নির্দেশক, নাট্যকার, পরিচালক, উপস্থাপক, মডেল, বিজ্ঞাপন নির্মাতা। সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন তার প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে।
আফজাল হোসেন টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে একজন তুখোর অভিনেতা হিসেবে সর্বজনবিদিত হলেও তার অভিনয় জীবনের শুরু মঞ্চে। চারুকলায় পড়ার সময় ঢাকা থিয়েটারের মাধ্যমে মঞ্চ অভিনেতা হিসেবে অভিনয়জগতে যাত্রা শুরু হয় তার। তবে সঠিকভাবে বলতে গেলে তার অভিনয় জীবনের শুরু আরও অনেক আগেই, সেই ছোটবেলায়। আফজাল হোসেনের ছেলেবেলা কেটেছে দেশের সীমান্তবর্তী এক গ্রামে। মামাবাড়ি কলকাতায় হওয়ায় এবং ঘন ঘন যাতায়াত থাকায় সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজ উদ্যোগেই গ্রামে একটি মঞ্চনাটকের আয়োজন করেন। অভিনেতা হিসেবে আফজাল হোসেনের জন্ম ঠিক তখনই।
সত্তর দশকের শেষের দিকে টেলিভিশনজগতে প্রবেশ করেন তিনি। আশির দশকের টেলিভিশন নাটকের এক জনপ্রিয় নাম আফজাল হোসেন। তার অভিনীত বেশ কিছু নাটক আজও মাইলফলক হিসেবে দর্শক হৃদয়ে স্থান করে আছে।
১৯৮০ সালে প্রচারিত 'রক্তের আঙ্গুরলতা' টেলিভিশন নাটকে তিনি নিয়ে আসেন নতুন ধারা, নতুন ভাবনা। 'পারলে না রুমকি' নাটকটি বিটিভির নাটকের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে আজও। মডেলিং ও বিজ্ঞাপনচিত্রকে শিল্প পর্যায়ে উন্নীত করেছেন এই তারকা। একটি পণ্যকে ভোক্তার কাছে উপস্থাপন করার যে পথ তিনি দেখিয়েছেন, সে পথ ধরেই বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনচিত্রের আজ এত দূর এগিয়ে আসা। বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ আফজাল হোসেনের
নেশা ও পেশা।
আফজাল হোসেন অভিনীত দর্শকপ্রিয় নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে 'কূল নাই কিনার নাই', 'পারলে না রুমালি', 'জোহরা', 'ওহ দেবদূত', 'রক্তের আঙ্গুরলতা ইত্যাদি। তার উলেস্নখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- 'দুই জীবন', 'নতুন বউ', 'পালাবি কোথায়' সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন।
শুধু অভিনয় নয়, চিরতরুণ এই অভিনেতার রুচিবোধ, পোশাকের স্টাইল, নিজেকে উপস্থাপনের ভঙ্গি- সবই অনুকরণীয় নবীনদের কাছে। আজও তরুণদের ফ্যাশন আইকন হিসেবে অনুসরণীয় রয়েছেন আফজাল হোসেন। আফজাল হোসেন ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক লাভ করেন।