ভালো নেই প্রবীর মিত্র

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
নায়ক চরিত্রে যেমন সফল হয়েছেন, তেমনি চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও আলো ছড়িয়েছেন সমানভাবে। অভিনয় নৈপুণ্যে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তার সাবলীল অভিনয়, ভরাট কণ্ঠের সংলাপ দর্শকদের হৃদয়ে নিখাদ মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। তিনি প্রবীর মিত্র। বাংলা সিনেমার জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেতা। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময়ে অভিনয় করেছেন অজস্র চলচ্চিত্রে। ঢালিউডের পর্দায় বাংলার নবাব হিসেবে পরিচিতি রয়েছে দুজন অভিনেতার। তাদের একজন কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র। স্কুল জীবন থেকেই ছিলেন অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত। চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে দর্শকদের অনেক সুপারহিট সিনেমা উপহার দিলেও আজকাল পর্দায় দেখা মেলে না এই অভিনেতার। এর আগে জানা গিয়েছিল, প্রবীর মিত্রের দিন কাটে চার দেয়ালের মাঝে। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানান অসুখ। প্রবীর মিত্রের ছেলে মিঠুন মিত্র সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, তার বাবা (প্রবীর মিত্র) আগে থেকেই চলাফেরা করতে পারতেন না। এখনো পারেন না। সারাদিন বাসায়ই থাকেন। টিভি দেখেন, পত্রিকা পড়েন। মাঝে মাঝে বই পড়েন। শারীরিকভাবে স্থিতিশীল আছেন। তিনি আরও বলেন, কথাবার্তা বলেন। তবে সেটি ওনার মুডের ওপর নির্ভর করে। যখন ইচ্ছা হয় তখন বলেন। তবে কথা বলতে গেলে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। কানেও কম শোনেন। এ ছাড়া ডিমেনশিয়া রোগ আছে। সে কারণে মাঝে মাঝে কিছু কথা ভুলে যান। তবে মানুষজন চেনার ক্ষমতা এখনো আছে উলেস্নখ করে অভিনেতার ছেলে বলেন, আমরা যারা কাছাকাছি আছি তাদের চিনতে পারেন। আক্ষেপ করে মিঠুন জানান, এফডিসি বা অভিনয়জীবন নিয়ে খুব একটা স্মৃতিচারণা করেন না অভিনেতা। তাছাড়া চলচ্চিত্রের কেউ প্রবীর মিত্রের খোঁজও নেয় না। প্রবীর কুমার মিত্রের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুরের নতুন বাজারে। পৈতৃক নিবাস কেরানীগঞ্জের শাক্তায়। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুল জীবন থেকেই নাট্যচর্চায় যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ডাকঘর' নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের 'জলছবি' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। পরে ওই পরিচালকের জলছবি সিনেমার মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় তার অভিষেক হয়। এরপর 'তিতাস একটি নদীর নাম', 'চাবুক'-এর মতো সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় প্রবীর মিত্রকে দেখা গেছে। এ ছাড়া 'রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা' চলচ্চিত্রে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। 'রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা' ছবিতে তিনি আনোয়ার হোসেনের নবাব চরিত্রটি করেছিলেন। পরিচালক প্রদীপ দের প্রস্তাবে তিনি প্রথমে কোনোভাবেই রাজি ছিলেন না, কারণ আনোয়ার হোসেন তার কাছে গুরু ছিলেন। এফডিসিতে একদিন তাকে বললেন চরিত্রটি করার জন্য পরিচালক চাপ দিচ্ছেন। আনোয়ার হোসেন সঙ্গে সঙ্গে তাকে চরিত্রটি করতে বলেন। তার কাছে সাহস পেয়ে তিনি রিমেক ছবিটিতে প্রধান চরিত্র করলেন এবং এটিও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল দর্শকের কাছে। প্রবীর মিত্রের কণ্ঠেও 'বাংলা বিহার ওড়িশার মহান অধিপতি, তোমার শেষ উপদেশ আমি ভুলিনি জনাব' সংলাপগুলো বলিষ্ঠ ছিল এবং অভিনয়ও অনবদ্য ছিল। 'তিতাস একটি নদীর নাম' ছবিতে তার তেজোদ্দীপ্ত লুক ছিল। কবরীকে কোলে করে নিয়ে যাওয়ার সেই দৃশ্যে তাকে দেখতে অনবদ্য লাগে। 'নয়নের আলো' ছবিতে জাফর ইকবালের বন্ধুর চরিত্রটি ছিল অসাধারণ। 'আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন' গানটিতে জাফরের পাশাপাশি প্রবীর মিত্রের অভিনয়ও উলেস্নখ করার মতো। 'বড় ভালো লোক ছিল' ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন এ অভিতো। এ ছবিতে 'হায়রে মানুষ রঙিন ফানুশ' গানটিতে প্রবীর মিত্রের অভিনয়ই সবচেয়ে ফোকাসে ছিল। এই ছবিতেই তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ১৯৮২ সালে। এরপর ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রবীর মিত্রের উলেস্নখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে 'জীবন তৃষ্ণা', 'সীমার', 'তীর ভাঙা ঢেউ', 'প্রতিজ্ঞা', 'অঙ্গার', 'পুত্রবধূ', 'নয়নের আলো', 'চাষীর মেয়ে', 'দুই পয়সার আলতা', 'আবদার', 'নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ' গাঁয়ের ছেলে, মধুমিতা, বড় ভালো লোক ছিল, জন্ম থেকে জ্বলছি, চ্যালেঞ্জ, চরিত্রহীন, ঝিনুক মালা, মান সম্মান, ফেরারী বসন্ত, নাজমা, আঁখি মিলন, মান অভিমান, আশীর্বাদ, প্রিন্সেস টিনা খান, সোহেল রানা, জারকা, পরিণীতা, মিস লোলিতা, বেদের মেয়ে জোসনা, যোগাযোগ, গাড়িয়াল ভাই, দোষী, রাজার মেয়ে পারুল, বদসুরত, রাজাজনি, বিশ্বাস অবিশ্বাস, প্রেমযুদ্ধ, আজ গায়ে হলুদ, সোনার ময়না পাখি, দেহরক্ষী ইত্যাদি। গুণী এ অভিনেতো সর্বশেষ এসডি রুবেল পরিচালিত 'বৃদ্ধাশ্রম' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর আর কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি তিনি।